আঠারো বছর বয়স –সুকান্ত ভট্টাচার্য
কবি পরিচিতি :
নাম: সুকান্ত ভট্টাচার্য।
জন্মপরিচয় জন্মতারিখ : ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ (৩০ শ্রাবণ, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)।
জন্মস্থান : কালীঘাট, কলকাতা। পৈত্রিক নিবাস – কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
পিতৃ ও মাতৃপরিচয় পিতার নাম : নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য।
মাতার নাম : সুনীতি দেবী।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক(১৩৫২), অকৃতকার্য, বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল।
কর্মজীবন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক।
সাহিত্যকর্ম ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল প্রভৃতি। ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে ‘আকাল’ (১৩৫১) নামক কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা।
বিশেষ কৃতিত্ব তাঁর কবিতায় অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদেরকে সচকিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়।
জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ(২৯ বৈশাখ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থসমূহ মনে রাখার উপায়:
হরতালের পূর্বাভাস পেয়ে সুকান্তের চোখে ঘুম নেই, তাই মিঠে কড়া করে চা খেয়ে ছাড়পত্রের অভিযানের নামলে তার অকাল মৃত্যু হয়।
কবি সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বলা হয় – কিশোর কবি।
তাঁর কবিতায় যে দিকটি বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ পায়-শোষিত মানুষের জীবন, যন্ত্রণা, বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের হুংকার।
সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্য সংকলনটির নাম – আকাল(সুকান্তের জীবিতাবস্থায় একমাত্র গ্রন্থ)।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য-যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি।
পঞ্চাশের মন্বন্তর উপলক্ষ করে তিনি যে সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেন-আকাল।
এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি বলেছেন- কবি সুকান্ত।
সুকান্ত ভট্টাচার্য মারা যান – ২০ বৎসর ৯ মাস বয়সে যক্ষা রোগে।
কবিতার উৎস:
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ছাড়পত্র’ থেকে সংকলিত হয়েছে। ধারণা করা হয়, আঠারো বছর বয়সে পদার্পণের আগেই কিংবা আঠারো বছর বয়সে কবি এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন। এই কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন।
মর্মবাণী/মূলবাণী/উপজীব্য বিষয়: বয়:সন্ধিকালের বৈশিষ্ট্য।
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারবে।
আঠারো বছর বয়সের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
‘আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা’ – কথাটির তাৎপর্য উপলদ্ধি করতে পারবে।
আঠারো বছর বয়স কীভাবে জাতির কল্যাণ করে তা অনুধাবন করতে পারবে।
জটিল শব্দসমূহ :
অবিশ্রান্ত, আত্মা, একাত্মতা, উচ্চারণ, ক্ষতবিক্ষত, ক্ষুদ্ধ, গোপালগঞ্জ, ভট্টাচার্য, বিদ্রোহী, তরুণ, তাণ্ডবলীলা, দীর্ঘশ্বাস, দুর্ভিক্ষ, ধ্বংস, নিশ্চল, পদস্থলন, পৈতৃক, প্রান্তর, বঞ্চনা, ভয়ংকর, মন্ত্রণা, রবীন্দ্র, শোষণ, সংগ্রাম, সন্ধিক্ষণ, সুকান্ত, স্টিমার, স্পর্ধা।
কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ:
আঠারো বছর / বয়স কী দুঃ / সহ
স্পর্ধায় নেয় / মাথা তোলবার / ঝুঁকি
আঠারো বছর / বয়সেই অহ রহ
বিরাট দুঃসা / হসেরা দেয় যে / উঁকি
বিশ্লেষণ :
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। উপরের চার চরণ মাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, এর প্রতি পংক্তির মাত্রাসংখ্যা ৬ + ৬ + ২। ‘অহরহ’ শব্দ দুটিতে মূখ্য খণ্ডন হয়েছে। কবিতার আবৃত্তির গতি মধ্যম বা বিলম্বিত লয়ের।
শব্দার্থ ও টীকা:
সংশয় → ভয়
অহরহ → সর্বদা
তীব্র → অত্যন্ত
পাথর → কঠিন শিলা
দুর্বার → দুর্দমনীয়
পাথরবাধা → কঠিন অন্তরায়
দুঃসহ → সহনীয় নয় এমন
পূণ্য → ভাল কাজের ফসল
বিক্ষত → বিশেষভাবে আহত বা আঘাতের ফলে ক্ষত
ভীরু → সহজে ভয় পায় এমন, ভয়শীল।
দীর্ঘশ্বাস → প্রসারিত নিঃশ্বাস, কষ্টের সময়ে যে নিঃশ্বাস।
জয়ধ্বনি → জয়সূচক শব্দ, জয়ের আনন্দে উচ্চারিত ধ্বনি।
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ এবয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এসময় থেকে তাকে এক কঠিন ও দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি অন্যের উপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি এ বয়সেই মানুষ নিয়ে থাকে। বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ এ বয়সের তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে। আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা যৌবনে পদার্পণ করে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশব – কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল বয়সের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য তাকে সচেতভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। এ বয়স জানে রক্তদানের পূণ্য দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগ যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তাই এ বয়স সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে। সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্য-নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ-প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদশীলনতা এ বয়সেই মানুষের জীবনে বিশেষ তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং মনোজগতে তার প্রতিক্রিয়া ও হয় গভীর। এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা ভাল-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত¡, মতবাদ, ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে এই বয়সের তরুণেরা। দূর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার জীবনের এই সন্ধিক্ষনে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এই সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
চৌম্বকতত্ত্ব।
সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কাব্যে অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, বিপ্লব ও মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা মুক্তিকামী বাঙালিকে সাহস জুগিয়েছিল।
ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের পক্ষে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আকাল’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ (১৯৪৮) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি আঠারো বছর বয়সের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।
আলোচ্য কবিতায় সমাজজীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়সীরা কীভাবে জেগে উঠতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে।
আঠারো বছর বয়স অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে অদম্য দুঃসাহসে আঘাস সংঘাতের মধ্যেও টিকে থাকে।
আঠারো বছর বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর এগিয়ে চলাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য।
কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক):
১. আঠারো বছর বয়স পদাঘাতে ভাঙতে চায়-পাথর বাধা।
২. আঠারো বছর বয়স পুণ্য জানে – রক্তদানের।
৩. আঠারো বছর বয়স চলে- বাষ্পের বেগে।
৪. আঠারো বছর বয়স চলে- স্টিমারের বেগে।
৫. আঠারো বছর বয়সের কানে আসে- মন্ত্রণা।
৬. আঠারো বছর বয়স পথে প্রান্তরে ছোটায় – তুফান।
৭. আঠারো বছর বয়স কাঁপে – বেদনায়।
৮. আঠারো বছর বয়সে উঁকি দেয়- দু:সাহস।
৯. আঠারো বছর বয়স বয়স লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে হয় – কালো।
১০. ‘আঠারো বছর বয়স’ বয়সে অবিশ্রান্ত রূপে আসে – আঘাত।
১১. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মর্মবাণী- বয়:সন্ধিকালের বৈশিষ্ট্য।
১২. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার চরণ সংখ্যা- ৩২টি।
১৩. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি রচিত – ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে।
১৪. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের।
সারমর্ম:
এ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়:সন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবিলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। যৌবনের উদ্দীপনা সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।
পাঠ বিশ্লেষণ:
“আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।”
মানব জীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায় হচ্ছে আঠারো বছর বয়স। এ সময় মানুষ কৈশোর পার হয়ে যৌবনে পদার্পণ করে, পরনির্ভরতা ত্যাগ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে, নিজেই স্বাধীনভাবে চলার চেষ্টা করে। জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার উপযুক্ত বয়স আঠারো। এ সময় তরুণ মনকে ঘিরে রাখে নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা।
“আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।”
আঠারো বছর বয়সে মানুষ নির্ভয়ে চলে। তাদের দুরন্ত চলায় জীবনপথের সব বাধাবিঘœ ভেঙে যায়। পাথরসম কঠিন জীবনের মুখোমুখি হয়েও আঠারো বছরের যৌবনদীপ্ত মানুষ নির্ভয়ে এগিয়ে চলে। এ বয়সে তারা কোন প্রকার ভয়, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। কৈশোরে না পাওয়ার নানা কষ্টযন্ত্রণা পেছনে ফেলে, কান্না ভুলে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে আঠারো বছর বয়সীরা।
“এ বয়স জানে রক্তদানের পূণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।”
এই বয়সেই তারা সব বিপদ মোকাবিলায় এগিয়ে আসে। দেশ এবং জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আঠারো বছর বয়সে শুভ, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য তারা জান দিতে এবং প্রাণ নিতে প্রস্তুত থাকে।
“আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।”
আঠারো বছর বয়সটা ভয়ংকর সময়। এ বয়সের প্রাণবন্ত তরুণরা চারপাশের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-পীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, আন্দোলন গড়ে তোলে, ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এ বয়সেই মানুষের জীবনে অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা লক্ষ করা যায়। তাদের মনে নানা মাত্রিক পরিবর্তন দেখা দেয়। ভালো-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত¡, মতবাদ, ভাবধারার সঙ্গে পরিচয় ঘটে এ বয়সেই। তাদের চিন্তা-চেতনাতে তা প্রভাব বিস্তার করে।
“আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।”
আঠারো বছর বয়সে বাধা-বন্ধনহীন দুর্বার, গতিশীল। পথে প্রান্তরে সে ছুটে বেড়ায়, ঝড়ো হাওয়ার বেগে সব অন্যায় অবিচার উড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রচণ্ড সাহস ও শক্তি নিয়ে ছুটে চলে। মানুষের অকল্যাণ ও দু:খ-দুর্দশায়, দুর্যোগে শক্ত হাতে হাল ধরার বয়স আঠারো। তবে এ বয়স যেমন জীবনকে পরিপূূর্ণভাবে গড়ে তোলার, তেমনি জীবন থেকে চিরতরে হারিযে যাওয়ার বয়সও এটি। এ বয়সের হাল যদি কেউ ঠিকমতো ধরতে না পারে তাহলে তার জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। শত শত প্রাণ সেই ফাঁদে পড়ে হারিয়ে যায়।
“আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।”
আঠারো বছর বয়সে ক্রমাগত আঘাত আসে, যন্ত্রনা আসে। সেগুলো প্রতিহত করে তরুণকে এগিয়ে যেতে হয়। তাই সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারলে অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে এ বয়স কালো অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। আঠারো বছর বয়স তখন মানুষের যন্ত্রণার, কান্নার কারণ হয়ে ওঠে।
“তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।”
কবি আঠারো বছর বয়সের জয়জয়কারই বেশি শুনেছেন। এ বয়স জীবনের নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায়, দুর্যোগে যে অবিনশ্বর হয়ে ওঠে, চিরন্তন হয়ে ওঠে তা কবি জানেন। নেতিবাচক ইতিবাচকের চেয়ে সবচেয়ে বড় কথা এ বয়সেই মানুষ নতুন কিছু করে। এ বয়সেই নানা কিছু সৃষ্টি করে মানুষ, যা জগতের কল্যাণ বয়ে আনে।
“এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে
এ বয়সে তাই নেই কোন সংশয়
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।”
এ বয়স সবকিছুর ঊর্ধ্বে তুলে ধরে মানুষকে। ভীরুতা, কাপুরুষতার কোন স্থান নেই এ বয়সে। এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতা অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে। আঠারো বছর বয়স তাই বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের স্মারক। কারণ জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবন পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা এ বয়সেই নিশ্চিত হয়। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের মূল বৈশিষ্ট্য।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর :
১। আঠারো বছর বয়সে জীবনে বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা থাকে কেন?
উত্তর : আঠারো বছর বয়সে জীবনের নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয় বলে জীবনে বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা থাকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। জীবনের এই সন্ধিক্ষণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। তাছাড়া যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যও এ বয়স যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সমূহ বিপর্যয়ের সম্ভাবনাও এ বয়সে বেশি। তাই এ সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্থলন হতে পারে। জীবনে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা থাকে।
২। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবির যে অনুভবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি যৌবনকে সাহসী সৈনিক হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছেন। কবি আঠারো বছর বয়সকে দেশের স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন। আঠারো বছর বয়সের তরুণরা জীবনের নব নব অগ্রগতি সাধনের স্বপ্ন দেখে। কবি অনুভব করেছেন এ বয়সের তরুণরা চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দেখে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। আঠারো বছর বয়সে মানুষ পায়ের আঘাতে পথের বাধা ভেঙ্গে ফেলতে উৎসাহী হয়। তাই কবির অনুভবে মানুষের জীবনে আঠারো বছর বয়সটি অতি মূল্যবান।
৩। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের কী কী বৈশিষ্ট্যের কথা উলেখ করেছেন?
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের বেশকিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উলেখ করেছেন। যেমন :
আবেগ ও উচ্ছ্বাসে পূর্ণ।
দুঃসাহসের অধিকারী।
আঠারো মানবজীবনের ভয়হীন সময়।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী।
ত্যাগ স্বীকারে নির্ভীক।
সেবাব্রত পালনে দৃঢ়।
দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ।
বিপ্লবী চেতনার ধারক ও বাহক।
৪। কবি চেতনায় আঠারো বছর বয়সকে প্রত্যাশার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কবি চিরতারুণ্যকে তাঁর মধ্যে ধারণ করেন বলেই আঠারো বছর বয়সকে প্রত্যাশা করেন। আঠারো বছর বয়স পৃথিবীর সকল অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। এক্ষেত্রে তার কিছুটা ঝুঁকি নেয় সত্য, তবে শেষ পর্যন্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে। প্রবল গতিশীলতার কারণে এ বয়সিরা অনেক সময় বিপদের কারণ ঘটায়। কিন্তু তারপরও এ বয়স তারুণ্যকে প্রত্যাশা করেন।
৫। আমাদের দেশের তরুণরা জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হতে পারছে না কেন?
উত্তর : তারুণ্যের নেতিবাচক দিকগুলোর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হওয়ায় এদেশের তরুণরা জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হতে পারছে না। তরুণদের কানে চারপাশ থেকে নানা ধরনের মন্ত্রণা ভেসে আসে। তাই এসময় সিদ্ধান্তহীনতা ও বিভ্রান্তির কারণে তাদের পক্ষে ঠিকভাবে জীবনের হাল ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আর যদি এসব নেতিবাচকতা তাদের বেশি প্রভাবিত করে ফেলে তবে তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। দেশ ও জাতির জন্যে তারা কোন অবদান রাখতে কিংবা জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হতে পারে না।
৬। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তরুণদের প্রাণের কোন চিত্র তুলে ধরেছেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তরুণদের সংবেদনশীলতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনুভূতির তীব্রতা তুলে ধরেছেন। আঠারো বছর বয়সে তরুণরা নিজেদের চারপাশের অন্যায় অত্যাচার, শোষণ-পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি অনাচার দেখে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এ বয়সে তরুণদের অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা প্রকট হওয়ায় মনোজগতে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কবি কবিতায় সে চিত্রই তুলে ধরেছেন।
৭। ‘দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার’ – পংক্তিটিতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার’ বলতে আঠারো বছর বয়সে যথাযথ পরিচর্যার অভাবে তরুণদের জীবন সমস্যা-সংকটময় হয়ে ওঠাকে বোঝানো হয়েছে। কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও নানা জটিলতা অতিক্রম করতে হয়। এই সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্থলন হতে পারে। আর তাতে জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ কারণেই আঠারো বছর বয়স সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সময় দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার।
৮। ‘এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে, এই বয়সের তরুণরা ভালো মন্দ, ইতিবাচক নেতিবাচক নানা তত্ত¡, মতবাদ, ভাবধারার সাথে পরিচিত হতে শুরু করে। আঠারো বছর বয়সটা ভয়ংকর। এ বয়সের প্রাণবন্ত তরুণরা চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। এ বয়সে মানুষ জীবনে অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা অনুভব করে। চারপাশের নানা কিছুর সাথে এই বয়সেই তারা পরিচিত হতে থাকে। সেগুলোর মধ্যে ভালো যেমন আছে তেমনি আছে মন্দও। এ বিষয়টিই কবি আলোচ্য রচনাটিতে প্রকাশ করেছেন।
৯। ‘সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে’- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বিপদ মোকাবিলায় তরুণ প্রাণের এগিয়ে আসার বিষয়টি এখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে। আঠারো বছর বয়স স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্যনতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। তারা দেশ ও জনগণের মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তরুণরা শুভ, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য প্রাণ দিতে সদা প্রস্তুত থাকে।
১০। তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবীব্যাপী অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য, ভেদাভেদ দেখে যৌবনাধিকারী তাজা প্রাণের তরুণরা যন্ত্রণায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। আঠার বছর বয়সে তারুণ্যের সঞ্জীবনীশক্তিতে তরুণরা যৌবনপ্রাপ্ত হয়। এ বয়সে যৌবনের জোয়ার উজ্জীবত হয়ে তরুণরা অসীম শক্তি লাভ করে। মন থেকে ভয়, শঙ্কা দূর করে অফুরন্ত সাহস নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার অদম্য আকাঙ্খা। এ বয়সেই প্রকাশিত হয়। তাই যখন চারপাশে অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি রেখে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। প্রাণ বন্ত তাজা তরুণরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে ও অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে।
উদ্দীপকের বিষয় :
তরুণের তারুণ্যশক্তি ও প্রত্যয়।
দৃঢ়চিত্তে তরুণের পথচলা।
তন্ময় ও মন্ময় কবিতার বৈশিষ্ট্য।
তরুণদের অদম্য প্রাণশক্তি।
আঠারো বছর বয়সের ধর্ম।
যৌবনের উদ্দীপনায় মানবের অমিত প্রকাশ।
তারুণ্যের আত্মত্যাগী মনোভাব।
তারুণ্যের স্বপ্ন।
দেশ রক্ষার রক্ত শপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মোৎসর্গ।
তারুণ্যের দুর্বার কন্ঠ ও আত্মত্যাগ।
তরুণ সন্তানের জন্য বাবার শুভকামনা।
তরুণ সন্তানের জন্য বাবার শুভকামনা।
তারুণ্যের উন্মাদনায় পথ হারানোর আশঙ্কা।
সারকথা : চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের চেতনা ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার চেতনা অভিন্ন। কিন্তু এ বয়স সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যে তরুণদের জীবনে নানা সংকট ও জটিলতা নেমে আসতে পারে সে ক্ষেত্রে অভিন্ন।
নং | বিষয় | লেখক |
১ | আমার পথ | কাজী নজরুল ইসলাম |
২ | বিড়াল | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৩ | চাষার দুক্ষু | বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত |
৪ | সাম্যবাদী | কাজী নজরুল ইসলাম |
৫ | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৬ | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধূসুদন দত্ত |
৭ | বায়ান্নর দিনগুলো | শেখ মুজিবুর রহমান |
৮ | অপরিচিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৯ | মাসি-পিসি | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
১০ | জীবন ও বৃক্ষ | মোতাহের হোসেন চৌধুরী |
১১ | আমি কিংবদন্তির কথা বলছি | আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ |
১২ | নেকলেস | গী দ্য মোপাসাঁ/ পূর্ণেন্দু দস্তিদার |
১৩ | রেইনকোট | আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |
১৪ | নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় | সৈয়দ শামসুল হক |
১৫ | তাহারেই পড়ে মনে | সুফিয়া কামাল |
১৬ | ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ | শামসুর রাহমান |
১৭ | রক্তে আমার অনাদি অস্থি | দিলওয়ার খান |
১৮ | সেই অস্ত্র | আহসান হাবিব |
১৯ | মহাজাগতিক কিউরেটর | মুহম্মদ জাফর ইকবাল |