আহ্বান – বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
লেখক পরিচিতি :
নাম বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়।
জন্ম পরিচয়: জন্ম তারিখ : ১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : মুরারিপুর (মাতুলালয়) চব্বিশ পরগনা।
পৈত্রিক নিবাস : ব্যারাকপুর, চব্বিশপরগণা।
পিতৃ ও মাতৃপরিচয় পিতার নাম : মহানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাতার নাম : মৃণালিনী দেবী।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : এন্ট্রান্স (১৯১৪), বনগ্রাম স্কুল।
উচ্চ মাধ্যমিক : আই.এ.(১৯১৬), কলকাতা রিপন কলেজ।
উচ্চতর : বি.এ.(ডিস্টিংশনসহ), ১৯১৮, কলকাতা রিপন কলেজ।
কর্মজীবন/পেশা শিক্ষকতা : হুগলি জেলার জাঙ্গীপাড়া স্কুল, সোনারপুর হরিনাভি স্কুল, কলকাতা খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল
স্কুল, ব্যারাকপুরের নিকটবর্তী গোপালনগর স্কুল।
সাহিত্যকর্ম উপন্যাস : পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, ইছামতি, দৃষ্টিপ্রদীপ, আদর্শ হিন্দু হোটেল, দেবযান,
অশনি সংকেত ইত্যাদি।
ছোটগল্প : মেঘমল্লাহ, মৌরীফুল, যাত্রাবদল, কিন্নর দল ইত্যাদি।
আত্মজীবনীমূলক রচনা : তৃণাঙ্কুর।
পুরস্কার ও সম্মাননা ইছামতী উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ।
জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ১ নভেম্বর, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ।
উৎস পরিচিতি : ‘আহ্বান’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের রচনাবলি থেকে সংকলিত হয়েছে।
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
মানুষের উদার ও মানবিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবে।
ধন-সম্পদ অপেক্ষা স্নেহ-মমতার বন্ধন যে অধিক মূল্যবান তা বুঝতে পারবে।
কুসংস্কার ও গোঁড়ামি কীভাবে মানুষে মানুষে দূরত্ব তৈরি করে তা অনুধাবন করতে পারবে।
আন্তরিকতা দিয়ে কীভাবে মানুষের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানো যায় তা অনুধাবন করতে পারবে।
দারিদ্রপীড়িত গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবনধারা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
‘আহŸান’ গল্পের বুড়ির প্রতি গোপালের তথা লেখকের শ্রদ্ধা ও অনুরাগের বিষয় গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে পারবে।
মূলবক্তব্য :
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান লেখক। উপন্যাসের মতো বাংলা ছোটগল্পেও তিনি অনন্য, অসাধারণ। তাঁ ‘আহ্বান’ গল্পটি তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ। গল্পটিতে নিঃসন্তান, অসহায় এক বৃদ্ধার মাতৃস্নেহের স্বরূপ এবং লেখকের মানবিক চেতনার সাবলীল প্রকাশ লক্ষ করা যায়। এ গল্পের নায়ক শহর থেকে নিজ গ্রামে বেড়াতে আসা লেখককে প্রথমত গ্রামে থাকার আহ্বান করা হয়। তবে কাহিনীর মূল তাৎপর্য এখানে নয়। গল্পের অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও জীবন্ত চরিত্র বুড়িকে সর্বদা গল্পের কথক তথা লেখকের প্রতি মমতা থাকতে দেখা গেছে। রক্তের সম্পর্কের এমনকি সম্প্রদয়ের কেউ না হয়েও সে লেখককে খুব কাছের মানুষ, একেবারে আত্মার আত্মীয় মনে করেছে। আর এ কারণেই লেখক গ্রাম এলেই বুড়িকে তাঁর কাছে ছুটে যেতে দেখা যায়। আজ দুধ, কাল ফল এভাবে সামান্য সম্বলটুকুও সে লেখককে খেতে দিয়ে আনন্দ পায়। আসলে বুড়ির নিজের কেউ না থাকায় এবং একমাত্র নাতজামাইয়ের কাছ থেকে অবহেলিত হওয়ায় সে লেখককেই নিজের ছেলে ভাবতে শুরু করে। সে বলে “গোপাল, যদি মরি, আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস।” এটি ছিল লেখকের কাছে বুড়ির একটি আত্মিক আহ্বান। শেষবার লেখক গ্রামে এসেই শুনতে পেলেন বুড়ি বেঁচে নেই। সে আগের দিন মারা গেছে এবং মৃত্যুর পূর্বে বারবার গোপালের নাম উচ্চারণ করেছে। তখন লেখকের মনে হলো- “ওর স্নেহাতুর আত্মা বহু দূর থেকে আমার আহ্বান করে এনেছে।” তাছাড়া লেখকের এ ভাবনাটি মোটেই অনর্থক নয়। কারণ গোপালের দেওয়া কাফনের কাপড় যেমন ছিল বুড়ির আত্মিক আহ্বান, তেমনি তার কবরে গোপালের মাটি পাওয়াটাও ছিল এ গল্পের একটি অনিবার্য আহ্বান। গল্পটিতে অসা¤প্রদায়িক চেতনার স্বত:স্ফূর্ত প্রকাশ ঘটেছে। জাতি ধর্মের উর্ধ্বে মানুষ হিসেবে মানুষের সাথে আত্মিক সম্পর্ক কতটা চিরন্তন হতে পারে, সেই দিকটি আলোচ্য গল্পে বিকাশ ও পরিণতি লাভ করেছে।
বানান সর্তকতা:
দীর্ঘজীবী, গোয়ালিনী, স্নেহাতুর, সলজ্জভাবে, আহ্লাদ, দিগম্বরী, তাচ্ছিল্য, কটুতিক্ত, স্ত্রী, আজ্ঞে, পৈতৃক, জ্যৈষ্ঠ, জিজ্ঞাসা, আদৌ।
উদ্দীপকের বিষয় :
সন্তানের জন্য মায়ের আকুলতা।
স্নেহের প্রতি অবমাননা।
অন্যের সস্তানের প্রতি মাতৃস্নেহের জাগরণ।
জন্মভূমির সঙ্গে মানুষের গভীর বন্ধন।
সন্তানের কাছে মায়ের অন্তি প্রত্যাশা।
প্রিয়জন হারানোর শোক।
পলিবাংলার মানুষের পারস্পরিক সম্প্রীতি।
সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা ও কল্যাণ কামনা।
অতিথির প্রতি গভীর অনুরাগ ও সমবেদনা।
প্রিয়জনদের কাছে উপেক্ষিত হওয়া মানুষের জীবনযন্ত্রণা।
নীচ মানসিকতা ও সংকীর্ণতাবোধ।
চৌম্বকতথ্য :
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ছিলেন অসাধারণ মেধাবী।
অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি বেড়ে ওঠেন।
কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।
তিনি শহর থেকে দূরে অবস্থান করে নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যসাধনা করেন।
তাঁর গদ্য কাব্যময় ও চিত্রাত্মক বর্ণনায় সমৃদ্ধ।
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘আহŸান’ গল্পটি একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প।
‘আহŸান’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের রচনাবলি’ থেকে সংকলিত হয়েছে।
‘আহŸান’ গল্পের মূলকথা হচ্ছে- ধন সম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই মানুষের মধ্যে স্নে-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ধর্মীয় গোড়ামি মানুষের মধ্যকার উদার ও মানবিক সম্পর্ক নষ্ট করে।
এ গল্পের অন্যতম উপজীব্য দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবনধারার প্রতিফলন।
গ্রামের চক্কোত্তি মশায় ভিটেয় চালাঘর তুলতে লেখককে খড় বাঁশ দিলেন।
লেখক বাজারে যাওয়ার পথে আমগাছের ছায়ায় এক বৃদ্ধাকে দেখলেন, যার এক নাতজামাই ছাড়া সংসারে আর কেউ নেই।
বুড়ি স্নেহ বাৎসল্যের বশে লেখককে আদর করে ‘গোপাল’ বলে ডাকত, আর প্রতিদিনই তাঁর জন্য এটা সেটা নিয়ে আসত।
বুড়িকে ‘মা বলে ডাকত ঐ গ্রামের হাজরার বউ।
লেখক অসুস্থ বুড়িকে দেখতে গেলে বুড়ি আহ্লাদে আটখানা হয়েছিল।
‘যদি মরি, আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস।’- লেখককে উদ্দেশ্য করে বুড়ি একথা বলেছিল।
দেড় বছর পর লেখক গ্রামে এসে জানতে পারেন যে, বুড়ি গত রাতে মারা গেছে।
‘ওর স্নেহাতুর আত্মা বহু দূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে।’- এ অনুভব লেখকের।
কবর দেওয়ার সময় সবার সাথে লেখকও এক কোদাল মাটি দিলেন।
লেখক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :
তিনি ‘ইছামতি’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।
‘তৃণাঙ্কুর’ তার আত্মজীবনীমূলক রচনা।
‘পথের পাঁচালি’ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস।
তাঁর গদ্য কাব্যময় ও চিত্রাত্মক বর্ণনায় সমৃদ্ধ।
সারমর্ম :
একটি উদার মানবিক সম্পর্কের গল্প। মানুষের স্নেহ মমতা প্রীতির যে বাঁধন তা ধনসম্পদে নয়, হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। ধনী-দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ ও বৈষম্য, বিভিন্ন ধর্মেও মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব সংস্কার ও গোঁড়ামির ফলে গড়ে উঠে তাও ঘুচে যেতে পারে। নিবিড় স্নেহ ও উদার হৃদয়ের আন্তরিকতা ও মানবীয় দৃষ্টির ফলে। দারিদ্র্য-পীড়িত গ্রামের মানুষের সহজ-সরল জীবনধারার প্রতিফলনও এই গল্পের অন্যতম উপজীব্য। এ গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থানে বেড়ে ওঠা চরিত্রের মধ্যে সংকীর্ণতার ও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গিও প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গ্রামীণ লোকায়াত প্রান্তিক জীবনধারা শাস্ত্রী কঠোরতা থেকে যে অনেকটা মুক্ত সে সত্যও এ গল্পে উন্মোচিত হয়েছে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ভেঙে চুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে – লেখকের পৈত্রিক বাড়িতে।
২. লেখক দেশে গিয়েছে – ছুটিতে।
৩. লেখকের বাবার পুুরাতন বন্ধু – গ্রামের চক্কোত্তি মশায়।
৪. ‘চক্কোত্তি’ যে উপাধির সংক্ষিপ্ত রূপ তা হল – চক্রবর্তী।
৫. পূজারী ব্রাহ্মণের উপাধি হলো – চক্রবর্তী।
৬. বুড়ির স্বামী জমির মারা গিয়েছে – অনেকদিন আগে।
৭.বুড়ি আপন মনে লেখককে খুব খানিকটা বকে গেল – উঠানের কাঁঠালতলায় বসে।
৮. বুড়ি আপন মনে লেখককে খুব খানিকটা বকে গেল- উঠানের কাঁঠালতলায় বসে।
৯. লেখক চাকরি করতেন – কলকাতায়।
১০.১ম বার লেখক গ্রামে গিয়ে উঠেছে – এক জ্ঞাতি খুড়োর বাসায়।
১১. ২য় বার লেখক গ্রামে গিয়ে উঠেছে – তার নতুন তৈরি খড়ের ঘরে।
১২. ২য়বার লেখক গ্রামে গেলে বুড়ি এসে বসেছিল- ঘরের নিচু দাওয়ায়।
১৩. বুড়ি আম বের করল – তার ময়লা ছেঁড়া কাপড়ের প্রান্ত থেকে।
১৪. বুড়ি লেখকে সম্বোধন করত – গোপাল বলে।
১৫. ‘অ গোপাল আমার, তো জন্যি নিয়ে আলাম’- বুড়ি একথা বলেছিল – লেখকের জন্য আম নিয়ে আসার সময়।
১৬. গ্রামে কয়েকদিন থেকেই আপনজন নেই – লেখকের।
১৭. লেখকের মা পিসিমা মারা গিয়েছে – বাল্যকালে।
১৮. বুড়ি গোপালের বসার জন্য পেতে দিতে বলল – খাজুরের চাটখানা।
১৯. বুড়ি যখন অনুযোগের সুরে লেখকের সাথে কথা বলতে লাগল তখন লেখক বুড়ির তুলনা করেছিল – তার মা, পিসিমার সাথে।
২০. বুড়ি যদি মরে যায় তাহলে লেখককে কিনে দিতে বলল – কাফনের কাপড়।
২১. বুড়ির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় লেখক বুড়ির পাতানো মেয়ের কাছে কিছু টাকা দিল – পথ্য ও ফলের জন্য।
২২.১ম বার লেখক গ্রামে এসেছিল – কোন এক ছুটিতে।
২৩. ২য় বার লেখক গ্রামে এসেছিল – জ্যৈষ্ঠ মাসে।
২৪. ৩য় বার লেখক গ্রামে এসেছিল – আশ্বিন মাসের শেষে।
২৫. ৪র্থ বার লেখক গ্রামে এসেছিল – শরতের ছুটিতে(২য় দিনের জন্য)।
২৬. ২য় বার লেখক গ্রাম থেকে যাওয়ার পর আবার গ্রামে এসেছিল – ৫-৬ মাস পর
২৭. ৩য় বার লেখক গ্রাম থেকে যাওয়ার পর আবার গ্রামে এসেছিল – দেড় বছর পর
২৮. ২য় বার বাড়ি গেলে ১ম দিন বুড়ি লেখকের জন্য নিয়ে এসেছিল- আম
২৯. ২য় বার বাড়ি গেলে ২য় দিন বুড়ি লেখকের জন্য নিয়ে এসেছিল- এক ঘটি দুধ।
৩০. ৩য় বার গ্রাম এলে লেখকের উঠানে এসে লেখককে ডেকেছিল- হাজরা ব্যাটার বউ।
৩১. ৪র্থ বার গ্রামে এলে লেখকের সাথে দেখা করতে এসেছিল- বুড়ির নাতজামাই।
৩২. ৪র্থবার গ্রামে গেলে লেখকের সাথে সবার আগে দেখা হল-পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরীর সঙ্গে।
৩৩. ‘ওমা আজই তুমি এলে’- উক্তিটি – পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরীর।
৩৪. লেখককে সেই বহুদূরের শহর থেকে আহŸান করে গ্রামে নিয়ে এসেছে- বুড়ির স্নেহাতুর আত্মা।
৩৫. ‘আমার মন হয়তো ওর ডাক এবার আর তাচ্ছিল্য করতে পারেনি’- এখানে ‘ওর’ বলতে বোঝানো হয়েছে – বুড়িকে।
৩৬. লেখক বুড়ির কাফনের কাপড় কেনার টাকা দিল – বুড়ির নাত জামাইয়ের হাতে।
৩৭. বুড়িকে মাটি দেয়া হবে – বেলা বারোটার দিকে।
৩৮. বৃদ্ধাকে কবর দেয়া হয়েছে – তিত্তিরাজ গাছের তলায়।
৩৯. লেখকের সঙ্গে পড়তো – আবেদালি।
৪০. আবেদালির ছেলের নাম – গনি। ৪১. ‘আহ্বান’ গল্পটি সংকলন করা হয়েছে – বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর রচনাবলি থেকে।
পাঠ বিশ্লেষণ:
দিলাম এক কোদাল মাটি—
মুসলিম রীতি অনুসারে মানুষ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়া হয়। লেখককে বুড়ি যে স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছিলেন তাতে ধর্মের ভেদ ছিল না। লেখকের গ্রামের মানুষরা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিল লেখকের ধর্ম-বর্ণের কথা। শুকুর মিঞা যখন লেখককে বুড়ির কবরে মাটি কবরে দিলেন। এখানে লেখকের অসা¤প্রদায়িক চেতনাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন?
বুড়ি তার স্নেহের বন্ধনে লেখককে বেঁধে নেয়। লেখককে আদর করে ‘গোপাল’ বলে ডাকে। একদিন সকালবেলা বুড়ি দুধ নিয়ে গেলে লেখক তার কারণ জানতে চান এবং বুড়িতে কত টাকা দিতে হবে তা জিজ্ঞাসা করেন। বুড়ি লেখকের এ আচরণে ঘাবড়ে গেল। পরে সে লেখকের প্রতি স্নেহের দাবিতে ঐ দুধের জন্য পয়সা কেন নিবে সেই প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
আমার কি মরণ আছে রে বাবা!
লেখক কুশলাদি জিজ্ঞাসা করায় বুড়ি তাকে আক্ষেপ করে এ কথা বলেছিল। কারণ এই জগতে বুড়ির আপন বলতে কেউ নেই। এক নাতজামাই তার খোঁজখবর নেয় না। এক পাতানো মেয়ের কাছে সে থাকে। ঠিকমতো খেতে পায় না। তার জীবন-যন্ত্রণা কেবল মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হতে পারে। এই কারণে সে আক্ষেপ করে লেখককে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না।
গল্পের লেখককে বুড়ি সন্তানের মতো স্নেহ করত। সেই স্নেহের দাবিতেই বুড়ি লেখককে তার বাড়িতে যেতে বলেছিল। কিন্তু লেখক নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় বৃদ্ধার বাড়িতে যেতে পারেননি।
তেনার বড্ড অসুখ। এবার বোধ হয় বাঁচবে না।
ছয় মাস পরে লেখক গ্রামে গেলে সেখানে বুড়ির পাতানো মেয়ে হাজরা ব্যাটার বউ তাকে খবর দেয় যে, বুড়ি খুব অসুস্থ, হয়তো আর বাঁচবে না। লেখককে সে দেখতে চায়।
কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক ফালি কুমড়ো।
‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি লেখককে সন্তানের মতো স্নেহ-মমতায় সিক্ত করতে চাইত। তাই সে স্নেহের দাবিতে লেখকের জন্য নানা কিছু নিয়ে আসে। লেখক অন্য ধর্মের লোক হলেও বুড়ির কাছে তিনি ছিলেন সন্তানতুল্য। তাই তাঁর জন্য বুড়ির এত দরদ।
গোলাপোরা ধান, গোয়ালপোরা গরু।
বহুদিন পরে লেখক গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এক বুড়ির সাথে পরিচিত হন। সে এখন জীর্ণ-শীর্ণ দেহের অধিকারী, সব দিন ঠিকমতো খেতে পায় না। পাতানো এক মেয়ে অন্যের বাড়ি কাজ করে যা আয় করে তার থেকে ঐ বুড়িকে সাহায্য করে। কিন্তু বুড়ির অবস্থা এমন ছিল না স্বামী জমির করাতির জীবিতকালে তার গোলাভরা ধান ছিল, গোয়ালভরা গরু ছিল।
পৈত্রিক বাড়ি যা ছিল ভেঙ্গে চুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে।
ছেলেবেলায় লেখক তাঁর পৈতৃক বাড়ির যে অবস্থা দেখেছেন তার সাথে বর্তমানের কোন মিল নেই। কোন বসতবাড়িতে মানুষ বসবাস করলে তা যেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও জীর্ণতামুক্ত থাকে, সেখানে বসবাস না করলে তার আবার আগাছা জঙ্গলে পরিপূর্ণ, জীর্ণ হয়ে পড়ে। ঝড়ে, বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ি ভেঙে যায়। মেরামত না করার ফলে দেয়াল ধসে পড়ে। আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে লেখক সেটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
সারকথা: অর্থ বিত্ত নয়, সমাজ ধর্ম নয়, মানুষের মানবীয় অনুভূতির প্রভাবেই মানুষে স্নেহ-মমতার গভীর বন্ধন রচিত হয়। এই বিশেষ দিকটিই উদ্দীপক ও ‘আহ্বান’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
নং | বিষয় | লেখক |
১ | আমার পথ | কাজী নজরুল ইসলাম |
২ | বিড়াল | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৩ | চাষার দুক্ষু | বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত |
৪ | সাম্যবাদী | কাজী নজরুল ইসলাম |
৫ | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৬ | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধূসুদন দত্ত |
৭ | বায়ান্নর দিনগুলো | শেখ মুজিবুর রহমান |
৮ | অপরিচিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৯ | মাসি-পিসি | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
১০ | জীবন ও বৃক্ষ | মোতাহের হোসেন চৌধুরী |
১১ | আমি কিংবদন্তির কথা বলছি | আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ |
১২ | নেকলেস | গী দ্য মোপাসাঁ/ পূর্ণেন্দু দস্তিদার |
১৩ | রেইনকোট | আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |
১৪ | নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় | সৈয়দ শামসুল হক |
১৫ | তাহারেই পড়ে মনে | সুফিয়া কামাল |
১৬ | ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ | শামসুর রাহমান |
১৭ | রক্তে আমার অনাদি অস্থি | দিলওয়ার খান |
১৮ | সেই অস্ত্র | আহসান হাবিব |