এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে – জীবনানন্দ দাশ
কবি পরিচিতি :
- নাম: জীবনানন্দ দাশ।
- জন্মপরিচয় জন্মসাল : ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ
- জন্মস্থান : বরিশাল
- পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : সত্যানন্দ দাশ
- মাতার নাম : কুসুমকুমারী দাশ
- শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯১৫), বজ্রমোহন স্কুল, বরিশাল।
- উচ্চমাধ্যমিক : আইএ (১৯১৭), বজ্রমোহন কলেজ, বরিশাল।
- উচ্চতর শিক্ষা : বি এ অনার্স (১৯১৯) ; কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ; এম এ ইংরেজি (১৯২১), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
- পেশা /কর্মজীবন অধ্যাপনা : কলকাতা সিটি কলেজ (১৯২২ – ১৯২৮), বাগেরহাট কলেজ (১৯২৯), দিলির রামযশ কলেজ (১৯২৯ – ১৯৩০), ব্্রজমোহন কলেজ (১৯৩৫ – ১৯৪৬), খড়গপুর কলেজ (১৯৫১ – ১৯৫২), বড়িষা কলেজ (১৯৫২), হাওড়া গার্লস কলেজ (১৯৫৩ – ১৯৫৪) ।
- সম্পাদনা : দৈনিক স্বরাজ।
- সাহিত্যকর্ম কাব্যগ্রন্থ : ঝরা পালক, ধূসর পান্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা’ ইত্যাাদি।
- উপন্যাস : মাল্যবান, সুতীর্থ, কল্যাণী
- প্রবন্ধগ্রন্থ : কবিতার কথা
- জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থসমূহ মনে রাখার উপায়:
রূপসী বাংলার পাখির ঝরাপালক দেখে বনলতা সেন তার কাব্যের ধূসর পান্ডুলিপিতে মহাপৃথিবীর বেলা অবেলায় কালবেলায় যে কার্য হয় তা উল্লেখ করেন।
লেখক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- আধুনিক বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ।
- পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সেকালের বিখ্যাত কবি।
- ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
- অসাধারণ কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্ররূপময় বলে আখ্যায়িত করেছেন।
- বুদ্ধদেব বসু তাঁকে আখ্যায়িত করেছে নির্জনতার কবি বলে।
- তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে ও ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
- ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
উৎস পরিচিতি :
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
- বাংলার শ্যামল প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
- বাংলার সবুজ মাঠ, গাছপালা, পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারবে।
- কবির প্রিয় স্বদেশের নদ-নদী এবং সেগুলোর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
- বাংলার রূপবৈচিত্র্য প্রকাশক নানা উপকরণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
- বাংলার পাখি শঙ্খচিল, লক্ষী পেঁচা প্রভৃতির স্বভাব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
- বাংলার সবুজ প্রকৃতিতে সন্ধ্যার রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে পারবে।
শব্দার্থ ও টীকা:
- এই পৃথিবীতে…সুন্দর করুণ – কবির চোখে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর , মমতারসে সিক্ত, সহানুভ‚ তিতে আর্দ্র ও বিষণ দেশ বাংলাদেশ।
- নাটা – লতাকবঞ্চ; গোলাকার ক্ষুদ্র ফল বা তার বীজ।
- বারুণী – বারুণানী; বরুণের স্ত্রী, জলের দেবী।
- যেখানে বারুণী থাকে…
- অবিরল জল – জলে পরিপূর্ণ এ দেশের অসংখ্য নদী-নালার স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্য ও সৌন্দর্যের রূপ আঁকা হয়েছে এই পংক্তি দুটির মধ্যে।
- সেইখানে শঙ্খচিল…
- অস্ফুট, তরুণ – বাংলাদেশ প্রাণী আর প্রকৃতির ঐক্য ও সংহতিতে একাকার।
- বিশালাক্ষী – যে রমণীর চোখ আয়ত বা টানাটানা।
- সুদর্শন – এক ধরনের পোকা।
- বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর – এখানে আয়তলোচনা দেবী দুর্গার কথা বলা হয়েছে।
কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ:
এই পৃথিবীতে এক / স্থান আছে – সবচেয়ে / সুন্দর করুণ; (৮ + ৮ + ৬)
সেখানে সবুজ ডাঙা / ভ’রে আছে মধুকূপী / ঘাসে অবিরল ; (৮ + ৮ + ৬)
সেখানে গাছের নাম : / কাঁঠাল, অশ্বথ, বট / জারুল, হিজল; (৮ + ৮ + ৬)
সেখানে ভোরের মেঘে / নাটার রঙের মতো / জাগিয়ে অরুণ; (৮ + ৮ + ৬)
বিশ্লেষণ :
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটি ১০ পংক্তি ও প্রতি পংক্তি ২২ মাত্রায় রচিত একটি সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। প্রতি পংক্তি ৮ + ৮ + ৬ মাত্রার তিন পর্বে বিভক্ত। এটি ছন্দ বিচারে অক্ষরবৃত্ত পয়ার ছন্দের অন্তর্ভুক্ত। কবিতাটির অন্ত্যমিল বা চরণ যথাক্রমে কখকখ, কখকখ, গঘগঘঙঙ।
সারমর্ম:
বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাশ। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটি কবির ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কবি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য সাবলীল ছন্দে অনন্যসাধারণ ভক্তিমায় উপস্থাপন করেছেন। অসাধারণ সুন্দর এই দেশ। সারা পৃথিবীর মধ্যে অনন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলালভূমি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। অসংখ্য বৃক্ষ, গুল্ম ছড়িয়ে আছে এদেশের জনপদে-অরণ্যে। মধুকূপী, কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল সেগুলোরই কোন কোনটির নাম। এদেশের পূর্বাকাশে যখন সূর্য ওঠে, মেঘের আড়াল থেকে তার রং হয় করঞ্জা রঙিন। আর এ দেশের প্রতিটি নদ-নদী ভরে থাকে স্বচ্ছতোয়া জলে। সেই জল ফুরায় না কখনই। জলের দেবতা অনিঃশেষ জলধারা দিয়ে স্রোতস্বিনী রাখে এদেশের অসংখ্য নদীকে। প্রকৃতি আর প্রাণিকূলের বন্ধনে গড়ে উঠেছে চির অবিচ্ছেদ্য এক সংহতি। তাই হাওয়া যখন পানের বনে চঞ্চলতা জাগায় তখন দূর আকাশের শঙ্খচিল যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর ধানের গন্ধের মতো অষ্ফুট লক্ষী চাও মিশে থাকে প্রকৃতির গভীরে, অন্ধকারের বিচিত্ররূপ এই দেশে। অন্ধকার ঘাসের ওপর লেবুর শাখা নুয়ে থাকে কিংবা অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায়। জন্ম দেয় শঙ্খমালা নামের রূপসী নারীর হলুদ শাড়ির বর্ণশোভা। কবির বিশ্বাস, পৃথিবীর অন্য কোথাও শঙ্খমালাদের পাওয়া যাবে না। আর বিশালাক্ষী বর দিয়েছিল বলেই নীল সবুজে মেশা বাংলার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে এই অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে।
পাঠ বিশ্লেষণ:
- এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ;
- সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;
- সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল;
এই পৃথিবীর এক স্থানের প্রতি কবির সবিশেষ দুর্বলতা ও তিনি সেই স্থানের বিশেষ অনুরাগী এবং মুগ্ধ। পৃথিবীর এই স্থানটি তাঁর কাছে সবচেয়ে সুন্দর, হৃদয়লালিত, মায়াময় করুণ। সেখানে সবুজের সমারোহ। স্থলভাগ ছেয়ে আছে সবুজ ঘাসে। সেখানে কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল গাছ স্নিগ্ধ ছায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
- সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ;
- সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে, – সেখানে বরুণ
- কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীর দেয় অবিরল জল ;
- সেইখানে শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল,
- সেইখানে ল²ীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ;
সেখানে আকাশে মেঘ ভাসে, নাটা ফলের রঙের মতো সূর্য ওঠে। সেখানে গঙ্গাসাগর আছে, তাতে বারুণী থাকে। জলের দেবতা অবিরল জল দিয়ে কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা জলাঙ্গীকে পূর্ণ করে দেয়। সেই জলের উপর দিয়ে পানের বনের মতো বাতাসে চঞ্চল সাদা সাদা শঙ্খচিল উড়ে যায়। সেখানে ল²ীপেঁচা আছে। সে আড়ালে থাকে, ধানের মৃদু গন্ধের মতো তার অবস্থান, অস্ফুট কোমল।
- সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে ঘাসের উপর;
- সুদর্শন উড়ে যায় ঘরে তার অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে;
- সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের ’পর—
- শঙ্খমালা নাম তার : এ-বিশাল পৃথিবীর কোন নদী ঘাসে
- তারে আর খুঁজে পাবে নাকো – বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর,
- তাই সে জন্মেছে নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভিতর।
পৃথিবীর সেই স্থানটিতে লেবুর শাখা অন্ধকারে ঘাসের উপর নুয়ে থাকে। তার পাশ দিয়ে অন্ধকারে সন্ধ্যার বাতাসে ভর করে গোবরে পোকা উড়ে ঘরে যায়। অন্ধকারে ঢেকে যাওয়ার আগে অস্তমিত সূর্যের সোনালি আলোয় সেই স্থানটি রূপসীর মতো সুন্দর হয়ে ওঠে। সেখানে শঙ্খমালা নামের রূপসী গায়ে হলুদ শাড়ি জড়িয়ে চমৎকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। এই পৃথিবীর আর কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ বিশলাক্ষীর আর্শীবাদেই শঙ্খমালা পৃথিবীর, সেই স্থান নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভিতর নিজের অস্তিত্বের ঠিকানা করেছে, জন্ম নিয়েছে। এই পৃথিবীর সেই এক স্থান কবির প্রিয় স্বদেশ, রূপসী বাংলাদেশ।
গুরুত্বপূর্ণ লাইন:
- সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুক‚পী ঘাসে অবিরল।
- সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।
- কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল;
- সেইখানে শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।
- সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে ঘাসের উপর
- এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে।
- তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকোবিশালাক্ষী দিয়েছিল বর।
বানান সতর্কতা :
মধুকূপী, অশ্বত্থ, লক্ষীপেঁচা, জলাঙ্গী, বারুণী, শঙ্খচিল, কর্ণফুলী, অরুণ, বিশালাক্ষী, রূপসী, সন্ধ্যা, ধলেশ্বরী, গঙ্গাসাগর।
জ্ঞানমূলক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
১। বরুণ কে? – জলের দেবতা।
২। জীবনানন্দ দাশ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন? – ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে।
৩। ‘জলাঙ্গী’ শব্দের অর্থ – জলাশয় বা জল ধারণকারী।
৪। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কে ঘরে উড়ে যায়? – সুদর্শন তার ঘরে উড়ে যায়।
৫। সুদর্শন কখন ঘরে উড়ে যায়? – সন্ধ্যার অন্ধকারে।
৬। মধুকূপী ঘাসে অবিরল কী ভরে আছে? – সবুজ ভাঙা।
৭। জীবনানন্দ দাশের কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?- চিত্ররূপময়।
৮। ‘অবিরল’ শব্দের অর্থ কী? – অবিশ্রান্ত, নিরন্তর।
৯। কী দিয়ে জলের দেবতা এদেশের নদ-নদীকে স্রোতস্বিনী রাখে? – অনিঃশেষ জলধারা।
১০। কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মার অবিরল জল দান করে কে? – জলের দেবতা বরুণ।
১১। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় অন্ধকার ঘাসের ওপর কী নুয়ে থাকে? – লেবুর শাখা।
১২। কবির চোখে সমগ্র পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ কোনটি? – বাংলাদেশ।
১৩। কে বর দিয়েছিল বলে বাংলার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে?- বিশালাক্ষী।
১৪। ‘বিশালাক্ষী’ শব্দটি দ্বারা কাকে বোঝানো হয়েছে? – আয়তলোচনা দেবী দুর্গাকে।
১৫। ‘নাটা’ কী? – গোলাকার ক্ষুদ্র ফল বা তার বীজ।
১৬। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় নিসর্গের সঙ্গে কী যুক্ত হয়েছে? – অনুভব ও বোধের বহুতর মাত্রা।
১৭। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় ভোরের মেঘে কীসের জেগে ওঠার কথা বলা হয়েছে? – অরুণের জেগে ওঠার কথা।
১৮। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় হলুদ শাড়ি পরিহিতা রূপসীর নাম কী? – শঙ্খমালা।
১৯। কবির মতে শঙ্খমালাদের পাওয়া যাবে কোথায়? – শুধু তাঁর দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশেই।
২০। কার বরে বাংলার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে? – বিশালাক্ষীর বরে।
২১। জীবনানন্দ দাশের পিতার নাম কী? – সত্যানন্দ দাশ।
২২। জীবনানন্দ দাশের মায়ের নাম কী? – কুসুমকুমারী দাশ।
২৩। কবি জীবনানন্দ দাশকে ‘নির্জনতম’ কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন কে? – বুদ্ধদেববসু।
২৪। কবি জীবনানন্দ দাশের কাছে সবচেয়ে সুন্দর করুণ কী? – তাঁর জন্মভূমি।
২৫। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বর্ণিত গঙ্গাসাগরের বুকে কী থাকে? – বারুণী।
২৬। ল²ীপেঁচা কীসের মতো অস্ফুট? – ধানের গন্ধের মতো।
২৭। ভোরের মেঘে জেগে ওঠা করুণ কোন রং ধারণ করেছে? – নাটা বা করমচা ফুলের রং। ২৮। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোন নদী, ঘাসে কাকে খুঁজে পাওয়া যায় না? – শঙ্খমালাকে।
২৯। কার বরে শঙ্খমালা বাংলার ঘাস আর ধানের ভিতর জন্মেছে? – বিশালাক্ষীর।
৩০। পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল বলা হয়েছে কাকে? – শঙ্খচিলকে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর :
১। ‘হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরে’ বলতে কবি কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ধান পাকার মৌসুমে মাঠের সৌন্দর্যকে বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মাঠ-ঘাট, প্রান্তর ধানসহ নানা ধরনের ফসলে ভরপুর। মাঠে মাঠে যখন ধান পাকে তখন যেন মাঠের প্রকৃতি হলুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই হলুদ প্রকৃতিকে কবির তাঁর কবিতায় রূপসীর শাড়িরূপে কল্পনা করেছেন, যা জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশ নামের রূপসীর শরীরে। প্রশ্নোক্ত লাইনটি কবি মূলত ধান পাকার মৌসুমে প্রকৃতির নবরূপে সজ্জিত হওয়াকেই বুঝিয়েছেন।
২। নীল আকাশের ঘাস আর ধানের ভেতর কবি অপরূপ সৌন্দর্য খুঁজে পান কেন?
উত্তর : জন্মভূমি বাংলার প্রকৃতির প্রেমে গভীরভাবে অনুরক্ত বলেই কবি বাংলার ঘাস আর ধানের ভেতর অপরূপ সৌন্দর্য খুঁজে পান। জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির রূপমুগ্ধ কবি। স্বদেশকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসেন। এই বাংলার প্রতিটি তুচ্ছ উপাদানে তিনি অপরূপ সৌন্দর্যের আভা দেখতে পান। প্রকৃতির প্রতি তিনি পুরোপুরি অনুরক্ত বলেই তাঁর কবিতায় প্রকৃতিকে পরম যতেœ স্থান দিয়েছেন। তাঁর মনের গহিনের এই সৌন্দর্যবোধ আর গভীর প্রকৃতিপ্রেমের কারণেই বাংলার ঘাস আর ধানের ভেতর কবি অপরূপ সৌন্দর্য খুঁজে পান।
৩। ‘বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর’ বলতে কবি এই বাংলার প্রকৃতিকে বিশালাক্ষী দেবীর আর্শীবাদ করাকে বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এদেশের চারদিকে নদী। এছাড়া মৌসুম বিশেষে এদেশের প্রকৃতি ধারণ করে নব নব রূপ। কবির মতে বিশালাক্ষী দেবীর আর্শীবাদপুষ্ট এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশ পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।
৪। বারুণী কোথায় থাকে ?- ব্যাক্যা কর।
উত্তর : বারুণী গঙ্গাসাগরের বুকে থাকে, যে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মহিমা দান করে নদীর নান্দনিক নয়নাভিরাম দৃশ্য। আর এই সৌন্দর্য বাড়াতে গঙ্গাসাগরের বুকে আশীর্বাদরূপিণী হয়ে অবস্থান করেন জলের দেবী বারুণী। তিনি জলদানে নদ-নদীকে প্রানবন্ত করে রাখেন।
৫। বিশালাক্ষী বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : বিশালাক্ষী বলতে কবি দেবী দুর্গার বরে পরিপুষ্ট বাংলার শ্যামল প্রকৃতির রূপকে বুঝিয়েছেন। দেবী দুর্গা শুধু শক্তিরই নয়, সৌন্দর্যেরও আধার। এখানে বিশালাক্ষী বলতে দেবী দুর্গার আয়তলোচনকে নির্দেশ করা হয়েছে। বাংলার নদ-নদী ও জলাভূমি সুবিশাল বাংলার বুকে বিশাল অক্ষির মতো। দেশমাতা ও দুর্গামাতার অভেদ কল্পনায় কবি এখানে দেবী দুর্গাকে বিশ্বলাক্ষ ী বলে মূলত কবির প্রকৃতির রূপকে বুঝিয়েছেন।
৬। ‘সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে’ বলতে কবি বাংলার নদীকে স্রোতস্বিনী করতে জলের দেবী বারুণীর অবদানকে বুঝিয়েছেন। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার রূপ সৌন্দর্য চিত্রায়িত করেছেন এক নিপুণ শিল্পীর তুলিতে। তিনি সমভাবে এদেশের নদ-নদীর ভরা যৌবনকে চিত্রায়িত করেছেন কাব্যিক ভাষায়। এদেশের প্রতিটি নদী ভরে থাকে স্বচ্ছতোয়া জলে। সে জল যেন ফুরায় না কখনোই। কেননা জলদেবতা বারুণী গঙ্গাসাগরে অবস্থান করে অনিঃশেষ জলধারা দিয়ে এদেশের অসংখ্য নদীকে স্রোতস্বিনী করে রাখে। আলোচ্য অংশে কবি জলের দেবী বারুণির এ ভূমিকাকেই বুঝিয়েছেন।
৭। কবি কেন বাংলার প্রকৃতির বন্দনা করেছেন?
উত্তর : জন্মভূমির রূপ মাধুর্যে বিমুগ্ধ হওয়ার কারণে কবি বাংলার প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। প্রতিটি মানুষের সঙ্গে জন্মভূমির রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। এ কারণে জন্মভূমির যে কোন সৌন্দর্যই মানুষকে আবেগাপ্লুত করে তোলে। এ বিষয়টি কবির মাঝেও বিদ্যমান রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রকৃতির এমন লীলাভূমি পৃথিবীর কোথাও নেই। আর এ কারণেই তিনি বাংলার প্রকৃতির বন্দনা করেছেন।
৮। জীবনানন্দ দাশের কাব্যভাষাকে অপ্রতিম কবিভাষা বলা হয়েছে কেন? – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : জীবনানন্দ দাশের কাব্যভাষাতে জীবন ও জগতের রহস্য ও মাহাত্ম অন্বিষ্ঠ রয়েছে বলেই একে অপ্রতিম কবিভাষা বলা হয়েছে। এ পৃথিবীতে ব্যক্তিমানুষের নানামাত্রিক অনুভূতি ও নিঃসঙ্গতাকে জীবনানন্দ দাশ অতলান্তিক এক অনুভূতিতে আবিস্কার করেছেন। এছাড়া তিনি ব্যক্তির যন্ত্রণা ও হাহাকারকে এক অন্য মাত্রা দান করেছেন স্বকীয় কাব্যভাষায়, যা আমাদের রহস্যাবৃত ও মাহাত্ম্যময়। এ কারণে তাঁর কাব্যভাষাকে অপ্রতিম কবিভাষা বলা হয়েছে।
৯। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি কী ধরনের চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্যমÐিত চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন। এদেশের জনপদে, অরণ্যে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য বৃক্ষ, গুল্ম ও লতা। তাছাড়া নদ-নদীতে রয়েছে স্বচ্ছতোয়া জল। সন্ধ্যার অন্ধকার এদেশে এক রহস্যময় সৌন্দর্য নির্মাণ করে। এ বিষয়গুলোকেই জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছেন ; যা এক অনন্য চিত্রকল্পের জন্ম দিয়েছে।
১০। জীবনানন্দ দাশকে ‘নির্জনতম’ কবি বলার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : জীবনানন্দ দাশ তাঁর আবেগ প্রকাশে এক ধরনের অনির্বচনীয় শব্দ ব্যবহারে নিজেকে রহস্যময়তায় আবৃত রাখেন বলেই তাঁকে ‘নির্জনতম’ কবি বলা হয়েছে। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় শব্দ ব্যবহার ও আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাধারণ কোন রীতি অনুসরণ করেননি। বরং অপ্রচলিত শব্দে তিনি অপ্রচলিত এক ভাবের জন্ম দিয়েছেন, যা কবিতায় স্থানিক এক রহস্যময়তা সৃষ্টি করেছে। এই রহস্যময়তায় ঢাকা পড়ে জীবনানন্দের কাব্যবোধ সবার অগোচরে চলে গেছে বলেই আমরা তাঁকে নির্জনতম কবি হিসেবে অভিহিত করি।
উদ্দীপকের বিষয় :
- গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য।
- মাতৃভূমির বন্দনা।
- প্রকৃতির প্রতি কবিদের অনুরাগ।
- স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত কবি।
- নদী তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন।
- শস্য-শ্যামল চিরসবুজ বাংলার চিত্র।
- বাংলাদেশের সৌন্দর্য।
- স্বদেশের প্রতি নিবিড় মমতা।
- দেশের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা।
সারকথা : উদ্দীপকের উপস্থাপিত কবির প্রকৃতি চেতনা ও স্বদেশপ্রেমই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় অখণ্ডরূপে ধরা পড়েছে। তাই মন্তব্যটি যথার্থ।
নং | বিষয় | লেখক |
১ | আমার পথ | কাজী নজরুল ইসলাম |
২ | বিড়াল | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৩ | চাষার দুক্ষু | বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত |
৪ | সাম্যবাদী | কাজী নজরুল ইসলাম |
৫ | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৬ | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধূসুদন দত্ত |
৭ | বায়ান্নর দিনগুলো | শেখ মুজিবুর রহমান |
৮ | অপরিচিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৯ | মাসি-পিসি | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
১০ | জীবন ও বৃক্ষ | মোতাহের হোসেন চৌধুরী |
১১ | আমি কিংবদন্তির কথা বলছি | আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ |
১২ | নেকলেস | গী দ্য মোপাসাঁ/ পূর্ণেন্দু দস্তিদার |
১৩ | রেইনকোট | আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |
১৪ | নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় | সৈয়দ শামসুল হক |
১৫ | তাহারেই পড়ে মনে | সুফিয়া কামাল |
১৬ | ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ | শামসুর রাহমান |
১৭ | রক্তে আমার অনাদি অস্থি | দিলওয়ার খান |
১৮ | সেই অস্ত্র | আহসান হাবিব |
১৯ | মহাজাগতিক কিউরেটর | মুহম্মদ জাফর ইকবাল |
২০ | আঠারো বছর বয়স | সুকান্ত ভট্টাচার্য |