নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়– সৈয়দ শামসুল হক
কবি পরিচিতি
সৈয়দ শামসুল হক একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য ও শিশু সাহিত্যের লেখক হওয়ায় তিনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। চিত্রনাট্য রচয়িতা ও গীতিকার হিসেবেও তিনি খ্যাত। মানুষের জটিল জীবনপ্রবাহ এবং মনস্তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ তাঁর সাহিত্যকর্মের মূল প্রবণতা।
জন্ম ও বংশ পরিচয় সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন সৈদয় শামসুল হক ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়া-শোনা করেন। তিনি প্রথমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রযোজক ছিলেন। পরে তিনি পুরোপুরি সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন।
সাহিত্য-প্রতিভা মানুষের জটিল জীবনপ্রবাহ এবং মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ তাঁর সাহিত্যকর্মের মূল প্রবণতা। সাহিত্যের গঠনশৈলীর ক্ষেত্রে তিনি সর্বদাই নিরীক্ষাপ্রিয়। একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য ও শিশু সাহিত্যের লেখক হওয়ায় তিনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
রচনাবলি কাব্যনাট্য : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, গণনায়ক, নূরুলদীনের সারাজীবন, এখানে এখন, ঈর্ষা।
কাব্যগ্রন্থ : বৈশাখে রচিত পক্তিমালা, প্রতিধ্বনিগণ, পরাণের গহীন ভিতর। রজ্জুপথে চলেছি, একদা এক রাজ্যে, বিরতিহীন উৎসব, নিজস্ব বিষয়, এক আশ্চর্য সংগ্রামের স্মৃতি, প্রেমের কবিতা ধ্বংসস্তুপে কবি ও নগর প্রভৃতি।
উপন্যাস : এক মহিলার ছবি, অনুপম দিন, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, স্মৃতিমেধ, বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ, নির্বাসিতা, মেঘ ও মেশিন, কালঘর্ম, এক মুঠো জন্মভ‚মি, অচেনা, আলোর জন্য প্রভৃতি।
কবি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন।
- প্রথমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
- তিনি বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রযোজক ছিলেন।
- চিত্রনাট্য রচয়িতা ও গীতিকার হিসেবেও তিনি খ্যাত।
- একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য ও শিশু সাহিত্যের লেখক হওয়ায় তিনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
- চিত্রনাট্য রচয়িতা ও গীতিকার হিসেবেও তিনি খ্যাত।
- মানুষের জটিল জীবনপ্রবাহ এবং মনস্তাাত্তি¡ক বিশ্লেষণ তার সাহিত্যকর্মের মূল প্রবণতা।
- সাহিত্যের গঠনশৈলীর ক্ষেত্রে তিনি সর্বদাই নিরীক্ষাপ্রিয়।
উৎস: ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটি সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাটক ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’ থেকে সংকলিত হয়েছে। এটি এই নাটকের প্রস্তাবনা অংশ।
মূলবাণী/মর্মবাণী/উপজীব্য বিষয়: প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব।
কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ
↓↓ ↓ ↓ ↓↓ ↓ ↓ ↓ ↓
এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায় (১০)
↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়। (১৩)
↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓
কালঘুম যখন বাংলায় (৯)
তার দীর্ঘ দেহ নিয়ে/ আবার নূরলদীন দেখা দেয়/ মরা আঙিনায় (৮ + ১১ + ৬)
ছন্দ বিশ্লেষণ : ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটি পাঠ করে দেখা যায় এটি প্রবাহমান অন্ত্যমিল রক্ষিত একটি গদ্যছন্দের কবিতা। এর মাত্রাবিন্যাসের অসমতার কারণে এটি গদ্য ছন্দের অভিধা পেয়েছে। পংক্তি শেষে অন্ত্যমিল কবিতাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সারমর্ম:
নাটকটির প্রস্তাবনা অংশে সূত্রধার আবেগঘন কাব্যিক বর্ণনার মাধ্যমে দর্শকদের সঙ্গে নাট্যকাহিনীর সংযোগ স্থাপন করেছেন। নূরুলদীন এক ঐতিহাসিক চরিত্র। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে সামন্তবাদ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাহসী কৃষকনেতা নুরুলদীনের সংগ্রামের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নূরুলদীনের সাহস আর ক্ষোভকে অসামান্য নৈপুণ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে।
১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ কালরাত থেকে থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় মাস যখন এই বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়, যখন শকুনরূপী দালালের আলখাল্লায় ছেয়ে যায় দেশ ; যখন বাঙালি হারায় তার স্বপ্ন ও বাক-স্বাধীনতা, যখন স্বজনের রক্তে ভেসে যায় ইতিহাসের একটি পৃষ্ঠা তখন মনে পড়ে ইতিহাসের প্রতিবাদী নায়ক নূরুলদীনকে এই চেতনাই কবিতাটিতে সৈয়দ শামসুল হক তুলে ধরতে চেয়েছেন। ১১৮৯ বঙ্গাব্দে (১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে) নূরুলদীনের ডাকে মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছিল, এখনও ঠিক সেইভাবে জেগে উঠবে বাংলার জন মানুষ এটাই কবির বিশ্বাস। এভাবে কবির শিল্পভাবনায় নূরুলদীন ক্রমান্বয়ে এক চিরায়ত প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়। ইতিহাসের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে নূরুলদীন মিশে যায় বাংলার শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ভিড়ে অংশগ্রহণ করে সমকালীন আন্দোলন সংগ্রামে। তাই কবির মনে হয় অভাগা মানুষ জেগে উঠে পাহাড়ি ঢলের মতো ভাসিয়ে দেবে সকল অন্যায় যখন নূরুলদীন দিবে ডাক- ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়।’
পাঠ বিশ্লেষণ
“ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না তার চলিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার।”
নীল আকাশে হাজার হাজার তারা, পূর্ণিমার চাঁদ শোভমান। নিচে ঊনসত্তর হাজার লোকালয়, হাট-বাজার, গঞ্জ ঘুমে বিভোর-স্তব্ধ। এই শান্ত-শান্তিময় জীবনের ওপর পূর্ণিমার চাঁদ ঢেলে দিচ্ছে ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না। প্রকৃতি আর জীবন হয়ে উঠেছে আরও মায়াময়।
“স্তব্ধতার দেহ ছিড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত?”
অকস্মাৎ শান্তিময় মায়াময় স্তব্ধতা বিদীর্ণ করে প্রচÐ ধ্বনিতে, প্রচÐ শব্দে জনজীবন- লোকালয় জেগে ওঠে। সতর্ক কান পেতে শোনে শত্রæর আগমন ধ্বনি, দখলদার শোষকের তীব্র শিস্ কানে বাজে।
“গোল হয়ে আসুন সকলে,
ঘন হয়ে আসুন সকলে,” ভয়ংকর বিপদের ইঙ্গিত পেয়ে সবাই জেগে ওঠে, নূরলদীনের মতো নেতার কাছে ছুটে আসে। নেতা তাদের অভয় দেন। সবাইকে গোল হয়ে ঘন হয়ে বসতে বলেন শলা-পরামর্শের জন্য, কীভাবে শত্রæর মোকাবিলা করা যায়।
“এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায়/নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।”
১১৮৯ সনের একদিন নূরলদীন রংপুরের মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন। সেদিনও ছিল এমন তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমা। কালঘুম যখন বাংলায় সেদিনও হানা দিয়েছিল শত্রæরা। সরল কৃষকেরা তাদের ফসলের অধিকার চেয়েছিল, তাই বিদেশি শাসকরা করেছিল জবরদস্তি অবিরাম। বিদেশিদের অন্যায় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেদিন কৃষকদের ডাক দিয়েছিলেন নূরলদীন। আজও হঠাৎ সেই দুঃসময় হানা দিয়েছে বাংলায়। তাই নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
“যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়;”
হানাদার শত্রুরা শকুনের রূপ ধরে আসে এই বাংলায়। শকুন যেমন তার প্রাণবন্ত খাদ্যবস্তুকে নখরে ছিন্নভিন্ন করে শক্ত ঠোঁটে ছিঁড়ে খায়, তেমনি শত্রুরাও নির্বিচারে এদেশের মানুষকে যত্রতত্র হত্যা করে শকুনের মতো নির্মম হাতে।
“যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালের আলখেল্লায়;”
শকুনেরা আবার হানা দেয় ১৯৭১-এ এই বাংলায়। চালায় নিমর্ম হত্যাযজ্ঞ এদেশীয় দোসর দালালদের সহযোগিতায়। সারা দেশ ছেয়ে যায় ঘৃণ্য দালাদের আলখেল্লায়।
“যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়;”
বাংলার মনোরম প্রকৃতির কোলে লালিত সহজ-সরল মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনের স্বপ্ন ছিল। সে জীবন বাংলার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ঘিরে আবর্তিত। ঘৃণ্য হানাদারদের ষড়যন্ত্র আর নিষ্ঠুরতায় সেই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে নূরলদীনের কথা সংগতভাবেই মনে পড়ে যায়।
“যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।”
বাংলার ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় বিদেশি শত্রুদের ষড়যন্ত্র শোষণ আর রক্ত ঝরার কথা রয়েছে। ১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯৩০, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬১, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালে এই বাংলায় নির্বিচারে চলেছে গুলি। আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে অজস্র রক্ত ঝরেছে, হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য স্বাধীনতাকামী নিরপরাধ মানুষকে।
“সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপুত্রে মেশে।”
স্মৃতির প্রশন্ত প্রান্তরে যখন দুধ-জ্যোৎস্না ঝরে পড়ে, তখন কেউ ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকে না। প্রতিবাদ করে, প্রতিরোধ করে, মুখোমুখি লড়াই করে। তারপর অশ্রুপাত করে স্বজনদের জন্য। সমস্ত অশ্রু ছোট ছোট নদী হয়ে ব্রহ্মপুত্র মিশে যায়।
“অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায় যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,”
দুঃসময়ে দুর্যোগে অসহায় মানুষ যখন কষ্ট পায়, বোবা হয়ে যায়, তখন তাদের মনে আশা জেগে ওঠে। তাদেরকে বিপদ থেকে বাঁচাতে, শৃঙ্খলমুক্ত করতে ‘আবার নূরুলদীন একদিন আসবে বাংলায়। কিংবদন্তিতুল্য দুঃসাহসী নূরুলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায় দিবেন ডাক- ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবায়।’
নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লাইন:
- নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে ঊনসত্তর হাজার।
- ধবল দুধের মতো জ্যোৎন্সা তার ঢালিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার।
- তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস দিয়ে এত বড় চাঁদ?
- যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়;
- নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
- যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
- ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক):
- চরিত্র বিচারে নূরুলদীন চরিত্রটি – একটি ঐতিহাসিক চরিত্র।
- নূরুলদীন ছিলেন – একজন সাহসী কৃষকনেতা। নূরুলদীনের দেহ ছিল – দীর্ঘ দেহ বিশিষ্ট।
- ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটি সংকলিত হয়েছে – ‘নূরুলদীনের সারাজীবন শীর্ষক কাব্যনাটকের প্রস্তাবনা অংশ থেকে।
- নূরুলদীন কৃষকনেতা ছিলেন- রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের।
- কৃষকনেতা নূরুলদীনের যে ধরনের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে – সামন্তবাদ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম।
- সামন্তবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন বলতে বোঝানো হয়েছে- ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন
- নূরুলদীন সামন্তবাদ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম করেছিলেন – (১৭৮৩ খিস্টাব্দে)।
- নূরুলদীনের ডাকে বাংলার মানুষ জেগে উঠেছিল – ১১৮৯ বঙ্গাব্দে (১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে)।
- এই বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয় – ১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৯ মাস।
- কবিতায় ‘সংসার যখন নষ্ট’ বোঝাতে যে কয়েকটি নষ্ট জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে – নষ্ট ছেলে, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট।
- সংসার যখন নষ্ট তখন নিলক্ষার আকাশে তীব্র শিস দিয়ে দেখা দেয় -এত বড় চাঁদ।
- ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় স্তব্ধতায় দেহ বলতে বোঝানো হয়েছে – নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ।
- ‘নিলক্ষা’ শব্দের অর্থ – দৃষ্টিসীমা অতিক্রমী।
- ‘বাহে’ শব্দের অর্থ – বাপুহে (ভাই সম্ভোধন করে)।
- ‘বাহে’ শব্দটি যে এলাকার সম্বোধন বিশেষ – দিনাজপুর, রংপুর।
- ‘কোনঠে’ শব্দের অর্থ – কোথায়।
- সকলের প্রতি কবির মিনতি ছিল – স্থির হয়ে বসার জন্য।
- দীর্ঘদেহ নিয়ে নূরুলদীন আবার দেখা দেয় – মরা আঙিনায়।
- ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় স্বাধীনতা হরণকারীদের কবি প্রতিকীরূপে বলেছেন- শকুন।
- ‘কাল পূর্ণিমা’ কথাটি উল্লেখিত আছে – নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়।
- নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার শেষ লাইন – ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’
- কবির শিল্পভাবনায় নূরুলদীন পরিণত হয়- এক চিরায়ত প্রতিবাদের প্রতীকে।
- ইতিহাসের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে নূরুলদীন মিশে যায় – শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ভিড়ে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর:
১। নুরলদীন ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?
উত্তর : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্যে নূরুলদীন ইতিহাসে বিখ্যাত। নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে। তিনি ছিলেন রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সামন্তবাদ বিরোধী এক সাহসী কৃষক নেতা। ১৭৮২ সালে তাঁর ডাকে এ অঞ্চলের মানুষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কৃষক নেতা নূরলদীনের এ আন্দোলন সংগ্রামের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
২। কবির কেন এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায় নূরলদীনের কথা মনে পড়ে?
উত্তর : এমনই এক রাতে বাংলার কৃষকদের সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন বলে কবির এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায় নূরলদীনের কথা মনে পড়ে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলা তথা ভারতবর্ষের কৃষকরা নানাভাবে নিপীড়িত শোষিত হচ্ছিল। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও তারা অনাহারে থাকত। তার ওপর জমিদারকে অত্যাচার তাদের জীবনকে আরও দুর্বিসহ করে তুলেছিল। কৃষকরা এসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সেই বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন রংপুরের নূরলদীন, এমনই এক স্নিগ্ধ স্বচ্ছ পূর্ণিমার রাতে। এ কারণেই কবির এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমার নূরলদীনের কথা মনে পড়ে।
৩। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় অভাগা মানুষ কী প্রত্যাশা করে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় অভাগা মানুষ নূরলদীনের প্রত্যাবর্তন প্রত্যাশা করে। নূরলদীন প্রতিবাদী চরিত্রের নাম। অভাগা মানুষ আশা করে তিনি একদিন আসবেন। এসে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। সমাজে তাদের ওপর যত অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন হচ্ছে তার প্রতিবাদ করবেন। তাদের দু:খ-দুর্দশা দেখে নূরলদীন তা দূর করবেন। তাই অভাগা মানুষ চায় নূরলদীনের প্রত্যাবর্তন।
৪। কবি কেন সকলকে স্থির হয়ে বসার জন্যে মিনতি করেন?
উত্তর : কবি সকলকে সংগঠিত হওয়ার জন্যে স্থির হয়ে বসার মিনতি করেন। অতীতে ঘটে যাওয়া নানা ধরনের সংগ্রামী ইতিহাস কবি সকলকে শোনাতে চান। কারণ অতীতের সেইসব ঘটনার সাথে বর্তমানের বিপদের মিল রয়েছে। কবি চান অতীতের সে ঘটনাগুলো শুনে মানুষ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হোক। তাই কবি মিনতি করেন সকলে যেন ঘন হয়ে উপস্থিত হয় এবং স্থির হয়ে বসে কবির কথা শুনে শত্রæর বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে।
৫। ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় ‘ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায়’ বলে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় প্রতিটি সংগ্রামের ইতিহাসকে ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা দ্বারা বোঝানো হয়েছে। কবি সংগ্রামী চেতনার ইতিহাসকে বড় করে দেখতে গিয়ে ইতিহাসের প্রতিটি বিদ্রোহের কথা মনে করেন। ফকির বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ নীল-বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি সব সংগ্রামের ইতিহাস মানুষের মনে লিপিবদ্ধ। ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় কবি এসব বিদ্রোহের ইতিহাসের বর্ণনা দেখতে পান।
৬। বাংলা আঙ্গিনাকে মরা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : অত্যাচারিত হতে হতে বিধ্বস্ত অবস্থা হওয়ায় বাংলার আঙিনাকে ‘মরা আঙ্গিনা’ বলা হয়েছে। বাংলার মাটি বার বার বিদেশিদের দ্বারা হয়েছে শাসিত। নিরীহ বাংলা বলে পরিচিত এই ভূন্ড বার বার শকুনেরা হানা দিয়েছে। অত্যাচারীর ধ্বংসলীলায় এই অঞ্চল হয়েছে বিধ্বস্ত। বাংলার এমন করুণ অবস্থার প্রেক্ষিতে এই আঙিনাকে মরা আঙিনা বলা হয়েছে।
৭। ‘যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালের আলখাল্লায়’- বলতে কবি কী বুুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালের আলখাল্লায়’ বলতে কবি ১৯৭১ সালের এদেশের শকুনরূপী দালালদের দৌরাত্মকে বুঝিয়েছেন। আমাদের এই সোনার বাংলা বার বার বিদেশিদের লোলুপতার শিকার হয়েছে। তারা হানা দিয়েছে এ বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রান্তরে। তাদের সাহায্য করেছে এদেশেরই কিছু দালাল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে। তাদের জন্যেই দেশ ও জাতি হয়েছে বিপন্ন। উদ্ধৃত অংশ দ্বারা কবি এদেশের মাটিতে দালালদের এমন দৌরাত্মাকেই বুঝিয়েছেন।
৮। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয় কীভাবে?
উত্তর : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার বাংলাদেশ মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বরতার প্রতিবাদে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশবাসীর ওপর চালায় নির্মতা অত্যাচার। তাদের তান্ডবেক বিধ্বস্ত হয় এই বাংলা। এভাবেই বাংলাদেশ মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়।
কবিতার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- কবিতার মোট চরণ সংখ্যা : ৪২টি
- বিরাম চিহ্নের ব্যবহার : ৪৭টি
- নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় : ৬ বার
- নূরুলদীনের নাম : ১২ বার
গুরুত্বপূর্ণ আরো তথ্য:
- রং : নীল
- পাখি : শকুন
- নদী : ব্রহ্মপুত্র
- সাল : ১১৮৯
- স্থান : রংপুর
গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু তথ্য:
নিলক্ষা আকাশ, ধবল দুধ, চাঁদ পূর্ণিমার, বন্ধ দরোজায়, কালঘুম, মরা আঙিনায়, দালালের আলখাল্লা, স্বপ্ন লুট, কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত, প্রশস্ত প্রান্তর, স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্না, অভাগা মানুষ।
কবিতার অন্তনির্হিত তাৎপর্য:
- প্রতিবাদী চেতনা : “কালঘুম যখন বাংলায়…..দেখা দেয় মরা আঙিনায়।”
- চেতনার পথ ধরে : “যখন আমার স্বপ্ন লুট…..কথা মনে পড়ে যায়।”
- আত্মবিশ্বাস ও যোগ্য নেতৃত্ব : ‘আবার নূরুলদীন একদিন কাল…বাহে, কোনঠে সবায়?”
- বিদেশিদের আগ্রাসন ও নির্যাতন :“নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ঠ যখন সংসার”
- নিভৃতে লালিত প্রেরণা : “ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না….দিয়ে এত বড় চাঁদ।”
- ঐতিহাসিক ঘটনা : নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় যখন শকুন….দালালেরই আলখাল্লায়;”
- পরাধীনতার অর্গল ভেঙ্গে কাঙ্খিত নেতৃত্বের উদয়: “নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় যখন আমার স্বপ্ন ….ইতিহাসে প্রতিটি পৃষ্ঠায়।”
- দুর্দিনের যাত্রী : “অভাগা মানুষ……..দিনের ডাক, “জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?”
- প্রথম লাইন : “নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগণিত আর”
- শেষ লাইন : “দিবে ডাক “জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?”
নং | বিষয় | লেখক |
১ | আমার পথ | কাজী নজরুল ইসলাম |
২ | বিড়াল | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৩ | চাষার দুক্ষু | বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত |
৪ | সাম্যবাদী | কাজী নজরুল ইসলাম |
৫ | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৬ | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধূসুদন দত্ত |
৭ | বায়ান্নর দিনগুলো | শেখ মুজিবুর রহমান |
৮ | অপরিচিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৯ | মাসি-পিসি | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
১০ | জীবন ও বৃক্ষ | মোতাহের হোসেন চৌধুরী |
১১ | আমি কিংবদন্তির কথা বলছি | আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ |
১২ | নেকলেস | গী দ্য মোপাসাঁ/ পূর্ণেন্দু দস্তিদার |
১৩ | রেইনকোট | আখতারুজ্জামান ইলিয়াস |