সমাস বাংলা ব্যাকরণ

সমাস বাংলা ব্যাকরণ


সমাসের রীতি সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে বলে এটি সংস্কৃত শব্দ। সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের এক পদীকরণ। বাংলা ব্যাকরণে পরস্পর অর্থসঙ্গতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।

যেমনঃ নেই পরোয়া যার=বেপরোয়া। সমাসের উদ্দেশ্যঃ

  • (১)  সমাস ভাষাকে সংক্ষেপ করে।
  • (২) নতুন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করে।

সমাসের শ্রেণী বিভাগঃ সমাস প্রধানত ছয় প্রকারঃ

<<<<¦ দ্বন্দ্ব সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: দোয়াত ও কলম= দোয়াত-কলম।

  • (১) দুই পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে।
  • (২) পূর্বপদ এবং পরপদ দুই পদের মাঝখানে ও,এবং,আর এই তিনটি অব্যয় থাকবে।
  • (৩) ছোট শব্দটি প্রথমে বড় শব্দটি শেষে থাকবে।
  • যেমনঃ মা-বাবা=মা ও বাবা  যেমনঃ জা ও পতি=দম্পতি, পিতা ও মাতা=পিতা-মাতা

দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়:

  • ১।   মিলনাত্মক শব্দ যোগেঃ দুই পদের মাঝে মিল থাকবে অর্থাৎ দুই পদের মধ্যে রক্তের কিংবা বৈবাহিক সম্পর্ক থাকবে। যেমনঃ মা-বাপ, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি, চা-বিস্কুট, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, মশা-মাছি।
  • ২।   বিরোধার্থক শব্দযোগেঃ পূর্বপদ ও পরপদ একে অপরের বিপরীত হবে। যেমনঃ দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক, ভাল-মন্দ, ছোট-বড়, দেব-দানব, আদা-জল, ধনী-গরীব, সুরাসুর, জমা-খরচ, হেস্ত-নেস্ত।
  • ৩।   সমার্থক শব্দ যোগেঃ পূর্বপদ ও পরপদ একই অর্থ বোঝাবে। এখানে বস্তুবাচক এবং ক্ষমতার সম্পর্ক থাকে।
  •      যেমনঃ হাট-বাজার, ঘর-দুয়ার, কল-কারখানা, মোল্লা-মৌলভী, খাতা-পত্র, রাজা-বাদশা, রাজা-উজির, ডাক্তার-বৈদ্য।
  • ৪।   সংখ্যাবাজক শব্দযোগেঃ সাত-পাঁচ, নয়-ছয়,সাত-সতের, ঊনিশ বিশ,
  • ৫।   দুটো সর্বনামযোগেঃ যা-তা, যে-সে, যথা-তথা,তুমি আমি, এখানে-সেখানে।
  • ৬।   দুটো ক্রিয়াযোগেঃ দেখা-শোনা, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা দেওয়া-খাওয়া।
  • ৭।   দুটো ক্রিয়া বিশেষণযোগেঃ ধীরে-সুস্থে, আগে- পাছে, আকারে-ইঙ্গিতে।
  • ৮।   দুটো বিশেষণযোগেঃ ভাল-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি-বকেয়া।
  • ৯।   অঙ্গবাচক শব্দযোগেঃ হাত-পা, নাক-কান, বুক-পিঠ, নাক-মুখ।
  • ১০।  বিপরীতার্থক শব্দযোগেঃ আয়-ব্যয়, জমা-খরচ, ছোট-বড়, ছেলে বুড়ো, লাভ-লোকসান।
  • ১১।  প্রায় সমার্থক ও সহচরঃ কাপড়-চোপড়, পোকা-মাকড়, দয়া-মায়া, ধুতি-চাদর।

অলুক দ্বন্দ্ব: যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ

  1. দুধে-ভাতে,
  2. জল-স্থলে,
  3. দেশে-বিদেশে,
  4. হাতে-কলমে,
  5. যাকে-তাকে,
  6. মায়ে-ঝিয়ে,
  7. বাঘে-মোঝে,
  8. ভেবে-চিন্তে,
  9. ঘরে-বাইরে,
  10. কোলে-পিঠে।

বহুপদী দ্বন্দ্ব: তিন বা বহু পদে দ্বন্দ্ব সমাস হলে তাকে বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ

  1. আমরা, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল,
  2. আম-গাছ-তলা,
  3. সাহেব-বিবি-গোলাম,
  4. হাত-পা-নাক-চোখ,
  5. তেল-নুন-লকড়ী ইত্যাদি।

<<<<¦ দ্বিগু সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। ত্রিকাল=তিন কালের সমাহার।

  1. পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকবে। যেমন: তিন মাথার সমাহার=তেমাথা
  2. ব্যাসবাক্যে সাধারণত সমাহার বা সমষ্টি থাকবে। যেমন: ত্রিপদী=ত্রিপদের সমাহার।
  3. সমাস নিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। পঞ্চভূতের সমাহার= পঞ্চভূত (বিশেষ্য পদ)।

দ্বিগু সমাসের উদাহরণঃ

  • শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী
  • ত্রিফলের সমাহার = ত্রিফলা
  • পঞ্চবটের সমাহার = পঞ্চবটী
  • তিন মাথার সমাহার = তেমাতা
  • পঞ্চ নদীর সমাহার = পঞ্চনদ
  • চৌ (চার) চিরের সমাহার = চৌচির
  • চৌরাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা
  • সাত সমুদ্রের সমাহার = সাত সমুদ্র
  • চৌ (চার) চাল যে ঘরের = চৌচালা
  • পঞ্চভূতের সমাহার = পঞ্চভূত
  • শত বর্ষের সমাহার = শতবার্ষিকী
  • তিন মোহনার সমাহার = ত্রিমোহনী
  • আট ধাতুর সমাহার= অষ্টধাতু
  • চার বাহুর সমাহার = চতুর্ভুজ
  • ছয় ঋতুর সমাহার = ষড়ঋতু
  • ত্রি কালের সমাহার = ত্রিকাল
  • চার অঙ্গের সমাহার = চতুরঙ্গ
  • সপ্ত অহের সমাহার =সপ্তাহ
  • পাঁচ সেরের সমাহার =পসুরি

<<<<¦ তৎপুরুষ সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান ভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্ব পদের বিভক্তি অনুসারে তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ করা হয়।

যেমনঃ দুঃখকে দুঃখকে প্রাপ্ত=দুঃখপ্রাপ্ত পূর্বপদ এখানে (দুঃখকে) কে বিভক্তি এসেছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস।

তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকারঃ

১।   দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাষঃ পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে,রে ব্যাপিয়া) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।

  • নিত্যকাল ব্যাপিয়া ধরা = নিত্যধারা
  • অর্ধ রূপে মৃত = অধমৃত
  • চিরকাল বাপিয়া সুন্দর = চিরসুন্দর
  • দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত
  • বইকে পড়া = বইপড়া
  • হলুদকে বাটা = হলুদ বাটা
  • বিষ্ময়কে আপন্ন = বিষ্ময়াপন্ন
  • পরলোকে গত = পরলোকগত
  • বেগকে সংরবণ = বেগসংবরণ
  • শোককে অতীত = শোকাতীত
  • জলকেসেচন = জলসেচন
  • বীজবোনা = বীজকে বোনা
  • ভাতরাঁধা = ভাতকে রাধা
  • ব্যক্তিকে গত = ব্যক্তিগত
  • শরণকে আগত = শরণাগত
  • রথকে চালান = রথচালান
  • শরকে নিক্ষেপ = শরনিক্ষেপ
  • ক্ষণকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী = ক্ষণস্থায়ী
  • সংখ্যাকে অতীত = সংখ্যাতীত
  • চরণকে আশ্রিত = চরণাশ্রিত
  • দ্রুত যথা তথা গামী = দ্রুতগামী
  • স্বর্গকে প্রাপ্ত = স্বর্গপ্রাপ্ত
  • পৃষ্ঠকে প্রদর্শন = পৃষ্ঠপ্রদর্শন
  • দুঃখকে অতীত = দুঃখাতীত
  • বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন
  • ছেলেকে ভুলানো = ছেলে ভুলানো
  • চির কাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
  • বয়ঃকে প্রাপ্ত = বয়প্রাপ্ত
  • পুত্রকে লাভ = পুত্রলাভ
  • চিরদিন ধরে শত্রু = চিরশত্রু

২।   তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদে দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক বিভক্তি লোপ পেলে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমনঃ

  • মন দিয়ে গড়া=মনগড়া
  • পাঁচ দ্বারা কম= পাঁচ কম
  • পাঁচ দ্বারা কম=পাঁচ কম
  • বিদ্যা দ্বারা হীন=বিদ্যাহীন
  • শ্রম দ্বারা লব্ধ= শ্রমলব্ধ
  • এক দ্বারা ঊণ=একোন
  • বাক্ দ্বারা বিতণ্ডা=বাগবিতণ্ডা
  • কন্টক দ্বারা আকীর্ণ=কন্টকাকীর্ণ
  • ধনাঢ্য=ধনে আঢ্য=(দ্বারা)
  • বাক্ দ্বারা বিতণ্ডা=বাগবিতণ্ডা
  • স্বভাব দ্বারা সিদ্ধ=স্বভাব সিদ্ধ
  • বর দ্বারা আহূত=বরাহূত
  • বজ্র দ্বারা আহত= বজ্রাহত
  • বাক দিয়ে দত্তা=বাগদত্তা
  • মাতৃ দ্বারা হীন=মাতৃহীন
  • পদ দ্বারা দলিত= পদদলিত
  • মধু দিয়ে মাখা=মধুমাখা
  • ছায়া দ্বারা শীতল=ছায়াশীতল
  • স্বর্ণমন্ডিত=স্বর্ণ দ্বারা মন্ডিত
  • ন্যায় দ্বারা সঙ্গত=ন্যায়সঙ্গত
  • জ্ঞান দ্বারা শূন্য=জ্ঞানশূন্য
  • অস্ত্র দ্বারা উপচার=অস্ত্রোপাচার
  • রত্ম শোভিত= রত্ম দ্বারা শোভিত
  • জল দ্বারা মগ্ন=জলমগ্ন
  • বাক দ্বারা দত্তা= বাগ্দত্তা
  • স্বর্ণমন্ডিত=স্বর্ণ দ্বারা মন্ডিত
  • বিজ্ঞান দ্বারা সম্মত=বিজ্ঞান সম্মত
  • ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা=ঢেঁকি ছাঁটা
  • রক্ত দ্বারা অক্ত= রক্তাক্ত

৩। চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে-জন্য নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: [বি: দ্র: কে জন্য নিমিত্ত থাকবে]

  • গুরুকে ভক্তি=গুরুভক্তি
  • আরামের জন্য কেদারা=আরাম কেদারা
  • বসতের নিমিত্ত বাড়ি=বসতবাড়ি
  • বিয়ের জন্য পাগল=বিয়েপাগল
  • দেবকে দত্ত=দেবদত্ত
  • শিশুদের জন্য বিভাগ=শিশুবিভাগ
  • মরেছে জন্য কান্না (নিমিত্ত)=মরাকান্না
  • চুষবার জন্য কাগজ=চোষকাগজ
  • পের নিমিত্ত বন=তপোবন
  • সেচনের নিমিত্ত কলস=সেচনকলস
  • মাথার (চুলের) জন্য কাঁটা=মাথার কাঁটা
  • পাঠের জন্য শালা=পাঠশালা

৪।   পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে [বি: দ্র: হইতে, থেকে থাকবে]। যেমন:

  • খাঁচা থেকে ছড়া= খাঁচাছড়া
  • বিলাত থেকে ফেরত= বিলাতফেরত
  • মুখ থেকে ভ্রষ্ট=মুখভ্রষ্ট
  • দেশ থেকে পালাতক=দেশপালাতক
  • আগা হতে গোড়া=আগাগোড়া
  • প্রান হতে প্রিয়= প্রানপ্রিয়
  • পদ থেকে চ্যুত=পদচ্যুত
  • ভদ্র হতে ইতর= ভদ্রেতর
  • রোগ হতে মুক্ত= রোগমুক্ত
  • দল থেকে ছুট=দলছুট
  • ধর্ম হতে ভ্রষ্ট=ধর্মভ্রষ্ট
  • স্কুল থেকে পালানো=স্কুলপালানো
  • জেল থেকে মুক্ত=জেলমুক্ত
  • জন্ম হতে অন্ধ= জন্মান্ধ
  • সত্য হতে ভ্রষ্ট=সত্যভ্রষ্ট
  • চলাক হতে ভয়=চলাকভয়
  • ঋণ থেকে মুক্ত=ঋণমুক্ত
  • বন্ধন হতে মুক্ত=বন্ধনমুক্ত
  • স্বর্গ হতে ভ্রষ্ট=স্বর্গভ্রষ্ট

৫।   ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। (বি: দ্র: র, এর থাকবে।)

  • চায়ের বাগান=চাবাগান
  • রাজার পুত্র=রাজপুত
  • বৃহতের পতি=বৃহস্পতি
  • কবিদের গুরু=কবিগুরু
  • যুদ্ধের উত্তর=যুদ্ধোত্তর
  • বনের পতি=বনস্পতি
  • গণের তন্ত্র=গণতন্ত্র
  • বনের মধ্যে=বনমধ্যে
  • রাজার কন্যা=রাজকন্যা
  • পথের রাজা=রাজপথ
  • কর্ণের কুহর=কর্ণকুহর
  • তপম্বির কন্যা=তপস্বীকন্যা
  • মালের গুদাম=মালগুদাম
  • প্রাণের বধ=প্রানবধ
  • ভুজের বল=ভুজবল
  • ভারের অপর্ণ=ভারার্পণ
  • জীবনের সঞ্চার=জীবন সঞ্চার
  • সন্ধ্যার প্রদীপ=সন্ধ্যাপ্রদীপ
  • মাতার সেবা=মাতৃসেবা
  • নাটকেরঅভিনয়=নাট্যাভিনয়
  • ঐতিহাসিকের প্রাক=প্রাগৈতিহাসিক
  • মনের যোগ=মনোযোগ
  • কলার ভবন=কলাভবন
  • বিশ্বের ভারতী=বিশ্বভারতী
  • খেয়ার ঘাট=খেয়াঘাট
  • দূতের আবাস=দূতাবাস
  • অহ্নের পূর্বভাগ=পূর্বাহ্ন
  • বজ্রের সম=বজ্রসম
  • ক্রোড়ের পত্র=ক্রোড়পত্র
  • উপলের খন্ড=উপলখন্ড
  • তার প্রতি=তৎপ্রতি
  • সুখের সময়=সুখসময়
  • হাতের ঘড়ি=হাতঘড়ি
  • নদীর মাঝে=মাঝনদী
  • প্রজাদের তন্ত্র= প্রজাতন্ত্র
  • কার্যের ক্ষতি=কার্যক্ষতি
  • ফুলের কুমারী= ফুলকুমারী
  • পুষ্পের সৌরভ=পুষ্পসৌরভ
  • গৃহের কর্ত্রী=গৃহকর্ত্রী
  • পৌরদের সভা=পৌরসভা
  • আমার প্রতি=মৎপ্রতি
  • শ্বশুরের বাড়ি=শ্বশুরবাড়ি
  • ছাগীর দুগ্ধ=ছাগদুদ্ধ
  • কার্যের আলয়=কার্যালয়
  • জনের কন্ঠ=জনকন্ঠ
  • বিদ্যার সাগর=বিদ্যাসাগর

৯. অলুক তৎপুরুষ সমাস:  [বি: দ্র: বিভক্তি লোপ পাবে না]

  • ঘোড়ার ডিম,
  • মাটির মানুষ,
  • হাতের পাঁচ,
  • মামার বাড়ি,
  • সাপের পা,
  • মনের মানুষ,
  • কলের গান,
  • খসে পড়া,
  • ছাঁচে ঢালা,
  • আইনের প্যাঁচ,
  • ভাগের মা,
  • সোনার বাংলা,
  • সোনার তরী,
  • হাতে কাটা,
  • ঘিয়ে ভাজা,
  • চোখের বালি,
  • বালুর বলদ,
  • চোখের দেখা,
  • গানের আসর,

৬. সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ,য়,তে) লোপ হয়ে সে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।যেমন:

  • গাছে পাকা=গাছপাকা
  • দিবায় নিদ্রা=দিবানিদ্রা
  • পূর্বে অদৃষ্ট=অদৃষ্টপূর্ব
  • রথে আরোহণ=রথারোহণ
  • পুথিতে গত=পুথিগত
  • পূর্বে শ্রুত=শ্রুতপূর্ব
  • সত্যে আগ্রহ=সত্যাগ্রহ
  • জলে মগ্ন=জলমগ্ন
  • কর্মে নিপুন=কর্মনিপুন
  • বাকে পটু=বাকপটু
  • পূর্বে ভূত=ভূতপূর্ব
  • পূর্বে অশ্রুত=অশ্রুত পূর্ব
  • কোটারে স্থিত=কোটরস্থিত
  • দানে বীর= দানবীর
  • সংখ্যায় লঘিষ্ঠ=সংখ্যালঘিষ্ঠ
  • তালে কানা= তালকানা
  • অকালে পক্ব=অকালপক্ব
  • মাথায় ব্যথা= মাথাব্যথা
  • রাতে কানা=রাতকানা

৭.   নঞ তৎপুরুষ সমাস: না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমনঃ

  • ন আচার=অনাচার
  • ন কাতর=অকাতর
  • বে (নয়) আইনি=বেআইনি
  • নয় পর্যাপ্ত=অপর্যাপ্ত
  • ন অভিজ্ঞ=অনভিজ্ঞ
  • ন অতিদূর=নাতিদূর/অনতিদূর
  • ন অতিশীতোষ্ণ=নাতিশীতোষ্ণ
  • ন সহযোগ=অসহযোগ
  • ন উন্নত=অনুন্নত
  • ন সুখ=অসুখ
  • ন অতি দীর্ঘ=নাতিদীর্ঘ
  • ন অতি খর্ব=নাতিখর্ব
  • ন কেশা=অকেশা
  • ন সুর=অসুর
  • নাই জানা=অজানা
  • ন (নয়) সরকারি=বেসরকারি
  • নয় সৃষ্টি=অনাসৃষ্টি
  • নাই হুঁশ=বেহুঁশ
  • নয় উচিত=অনুচিত
  • নাই খুঁত=নিখুঁত
  • নম হাজির=গরহাজির
  • ন কাল=অকাল/আকাল
  • ন (নয়) ক্ষত=অক্ষত
  • ন অতিবৃহৎ=অনতিবৃহৎ
  • ন মিল=অমিল
  • ন সময়=অসময়
  • ন উর্বর=অনুর্বর
  • ন কেজো=অকেজো
  • ন অশন=অনশন
  • ন কাতর=অকাতর
  • ন আদর=অনাদার
  • ন ভাব=অভাব
  • ন লৌকিক=অলৌকিক
  • ন বিশ্বাস=অবিশ্বাস
  • ন (মন্দঅর্থ) গাছ=আগাছা
  • নয় ভাঙা=অভাঙা
  • নাই খরচা=নিখরচা
  • নয় রসিক=বেরসিক
  • নাই মিল=গরমিল
  • নয় এক=অনেক

৮.   উপপদ তৎপুরুষ সমাসঃ যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। [বি: দ্র: বাক্যের শেষে যে বা যা থাকবে]। যেমনঃ

  • জলে চরে যা=জলচর
  • জল দেয় যে=জলদ
  • ক্ষীণভাবে বাঁচে যে= ক্ষীণজীবী
  • মন হরণ করে যে=মনোহরিণী
  • পুথিপড়ে যে/যা=পুথিপোড়া
  • মনে মরেছে যে=মনমরা
  • সত্য বলে যে= সত্যবাদী
  • সর্বনাশ করে যে= সর্বনাশা
  • হাড় ভাঙ্গে যাতে= হাড়ভাঙ্গা
  • বুক ভাঙ্গে যাতে= বুকভাঙ্গা
  • হালুই করে যে= হালুইকর
  • একান্নেবর্তে যে=একান্নবর্তী
  • জাদু করে যে= জাদুকর
  • স্বর্ণ করে যে= স্বর্ণকার
  • মাছি মারে যে= মাছিমারা
  • ছা-পোষে যে=ছা পোষা
  • পঙ্কে জন্মে যা=পঙ্কজ
  • প্রিয়ম্ বলে যে (নারী) প্রিয়ংবদা
  • গৃহে থাকে যে=গৃহস্থ
  • সর্ব হারিয়েছে যারা=সর্বহারা
  • কুম্ভ করে যে=কুম্ভকার
  • প্রভা করে যে= প্রভাকর
  • ধামা ধরে যে= ধামাধরা
  • ছেলে ধরে যে= ছেলেধরা
  • অর্থ করা যায় যার দ্বারা= অর্থকরী
  • বাজি করে যে= বাজিকর
  • পা চাটে যে= পাচাটা
  • ভার বহন করে যে= ভারবাহী
  • টনক নড়ে যাতে=টনকনড়া
  • পকেট মারে যে= পকেটমার

<<<<¦ কর্মধারয় সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতিয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: নীল যে পদ্ম=নীলপদ্ম।

(১) পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে (২) এছাড়াও যিনি-তিনি, যা-তা, যেই-সেই, আগে-পরে ইত্যাদি থাকে।

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার হয়ে থাকে:

১.   মধ্যপদলোপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।

  • সিংহ চিহ্নিত আসন=সিংহাসন
  • সাহিত্য বিষয়ক সভা=সাহিত্যসভা
  • রান্না করার ঘর= রান্নাঘর
  • ভিক্ষা লব্ধ অন্ন= ভিক্ষান্ন
  • পল মিশ্রিত অন্ন=পলান্ন
  • মৌ-সঞ্চয়কারী মাছি=মৌমাছি
  • আত্মলিখিত জীবনী=আত্মজীবনী
  • প্রাণ যাওয়ার তরে ভয়= প্রাণভয়
  • বৌ পরিবেশন করা ভাত=বৌভাত
  • রেলের উপর চলে যে গাড়ি= রেলগাড়ি
  • হস্ত দ্বারা চালিত শিল্প=হস্তশিল্প
  • গো (ক্ষুরের) পরিমিদ পদ= গোষ্পদ
  • গীতি পূর্ণ যে নাট্য= গীতিনাট্য
  • ঘোষণা সম্বলিত যে পত্র= ঘোষণাপত্র
  • আত্মবিষয়ে যে স্বাতন্ত্র্য=আত্মস্বাতন্ত্র্য
  • জীবন নাশের আশঙ্কায় যে বিমা=জীবনবিমা
  • ঘরে আশ্রিত জামাই= ঘরজামাই
  • মানি রাখার ব্যাগ= মানিব্যাগ
  • স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ=স্মৃতিসৌধ
  • জ্যোৎনা শোভিত রাত= জ্যোৎনারাত
  • ধর্মবিহিত কার্য= ধর্মকার্য
  • আয়ের উপর কর=আয়কর
  • জাদু পরিপূর্ণ ঘর=জাদুঘর প্রীতি
  • উপলক্ষে ভোজ= প্রীতিভোজ
  • এনর অক্ষির ন্যায় অক্ষি=এনাক্ষি
  • এক অধিক বিংশতি=একবিংশতি
  • রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় নীতি= রাষ্ট্রনীতি
  • চিনি নির্মানের কল=চিনিকল
  • তুফান তুল্য গতিশীল যে মেলা= তুফানমেলা
  • এক অধিক দশ= একাদশ
  • হাতে চালানো পাখা= হাতপাখা
  • আক্কেলসূচক দাঁত=আক্কেলদাঁত
  • পরিকল্পনা= কার্যপরিকল্পনা
  • মোমনির্মিত বাতি= মোমবাতি

২।   উপমান কর্মধারয় সমাস: সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।

  •  ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ=ভ্রমর কৃষ্ণকেশ
  • তুষারের ন্যায় শুভ্র=তুষারশুভ্র
  • অরুণের ন্যায় রাঙা=অরুণরাঙা
  • কুন্দের মতো শুভ্র=কন্দশুভ্র
  • ফুটির মতো ফাটা=ফুটিফাটা
  • ঘনের ন্যায় শ্যাম=ঘনশ্যাম
  • বকের ন্যায় ধার্মিক=বকধার্মিক
  • হরিণের ন্যায় চপল=হরিণচপল
  • গজের ন্যায় মূর্খ=গজমুর্খ
  • কুসুমের ন্যায কোমল=কুসুম কোমল
  • কাজলের ন্যায় কালো= কাজলকালো
  • বিড়ালের ন্যায় তপস্বী=বিড়ালতপস্বী
  • তুষারের ন্যায় ধবল=তুষারধবল
  • বজ্যের ন্যায় কঠোর=বজ্রকঠোর
  • প্রস্তরের ন্যায় কঠিন=প্রস্তরকঠিন
  • অগ্নির ন্যায় শর্মা=অগ্নিশর্মা
  • নবনীতের ন্যায় কোমল= নবনীতকোমল
  • গো-র ন্যায় বেচারী=গোবেচারী
  • হিমের ন্যায় শীতল=হিমশীতল
  • শশকের ন্যায় ব্যস্ত=শশব্যস্ত
  • তমালের লতা=তমাললতা
  • মিশির মতো কালো=মিশকালো

৩।   উপমিত কর্মধারয়: সাধারণ গুনের উলে­খ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।

  •  মুখ চন্দ্রের ন্যায়=মুখচন্দ্র
  • চরণ কমলের ন্যায়=চরণকমল
  • অধর পল­বের ন্যায়=অধপল­ব
  • চরণ পদ্মের ন্যায়=চরণপদ্ম
  • কথা অমৃতের ন্যায়=কথামৃত
  • নয়ন পদ্মের ন্যায়=নয়নপদ্ম
  • কর কমলের ন্যায়=করকমল
  • বীর সিংহের ন্যায়=বীরসিংহ
  • বাহুলতার ন্যায়=বাহুলতা
  • নর সিংহের ন্যায়=নরসিংহ
  • পাদপদ্মের ন্যায়=পাদপদ্ম
  • কুমারী ফুলের ন্যায়=ফুলকুমারী

৪।   রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়।

  • ক্রোধ রূপ অনল=ক্রোধানল
  • বিষাদ রূপ সিন্ধু=বিষাদ সিন্ধু
  • মন রূপ মাঝি=মনমাঝি
  • বিদ্যা রূপ ধন=বিদ্যাধন
  • সংসার রূপ সাগর=সংসারসাগর
  • হৃদয় রূপ মন্দির=হৃদয়মন্দির
  • আনন্দ রূপ মন্দির=হৃদয়মন্দির
  • আনন্দ রূপ সাগর=আনন্দসাগর
  • ভব রূপ নদী=ভবনদী
  • পরান রূপ পাখি=পরাণ পাখি
  • চিত্ত রূপ চকোর=চিত্তচকোর
  • আকাশ রূপ গাঙ=আকাশগাঙ
  • যৌবন রূপ বন=যৌবনবন
  • ক্ষুধা রূপ অনল=ক্ষুধানল
  • জীবন রূপ প্রদীপ=জীবনপ্রদীপ
  • শোক রূপ সাগর=শোকসাগর
  • বিদ্যা রূপ সাগর=বিদ্যাসাগর
  • জীবনরূপ স্রোত=জীবনস্রোত
  • শোক রূপ অনল=শোকানল
  • সুখ রূপ সাগর=সুখসাগর
  • জ্ঞান রূপ বৃক্ষ= জ্ঞানবৃক্ষ
  • মোহ রূপ নিদ্রা=মোহনিন্দ্রা
  • দেহ রূপ পিঞ্জর=দেহপিঞ্জর
  • জীবন রূপ তরী=জীবনতরী

<<<<¦ বহুব্রীহি সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়,তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথাঃ বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার=বহুব্রীহি।

  • আয়ত লোচন যায়=আয়তলোচনা
  • স্বচ্ছ সলিল যার=স্বচছ সলিলা
  • মহান আত্মা যার=মহাত্মা
  • নীল বসন যার=নীল বসনা
  • স্থির প্রতিজ্ঞা যার=স্থির প্রতিজ্ঞ
  • ধীর বুদ্ধি যার=ধীরবুদ্ধি
  • নদী মাতা যারা=নদীমাতৃক
  • বি (বিগত) হয়েছে পত্মী যার= বিপত্মীক
  • কমলের ন্যায় অক্ষি যার=কমলাক্ষ
  • পদ্ম নাভিতে যার=পদ্মনাভ
  • দশ আনন যার= দশানন
  • বান্ধবসহ বর্তমান=সবান্ধব
  • ঊর্ণ নাভিতে যার=ঊর্ননাভ
  • যুবতী জায়া যার= যুবজানি
  • চন্দ্র চূড়ায় যার=চন্দ্রচূড়
  • সমান কর্মী যে=সহকর্মী
  • সহ উদর যাদের বা সমান উদর যাদের=সহোদর
  • বিশ্র মিত্র যার= বিশ্বামিত্র
  • সমান বর্ণ যার= সমবর্ণ
  • আট প্রহরের উপযুক্ত=আটপৌরে
  • সমান তীর্থ যার= সতীর্থ
  • বেগের সঙ্গে বর্তমান=সবেগ
  • সগন্ধ যার= সুগন্ধি
  • পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার= পদ্মগন্ধি
  • মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার=মৎস্য
  • গন্ধা নাই মল (দাষ) যাতে= নির্মল
  • নীল অম্বর যার=নীলাম্বর
  • বীণা পানিতে যার=বীণাপানি
  • শূল পানিতে যার=শূলপানি
  • হত ভাগ্য যার=হতভাগ্য
  • গৌর অঙ্গ যার=গৌরাঙ্গ
  • রাশ ভারি যার=রাশভারি
  • জলের সহিত বর্তমান=সজল
  • বিচিত্র কর্ম যার=বিচিত্রকর্মা
  • চার ভুজ বিশিষ্ট যার= চতুর্ভুজ
  • চার পা বিশিষ্ট প্রাণী= চতুষ্পদ

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদঃ বহুব্রীহি সমাস আট প্রকারঃ

১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহিঃ পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমান হয়। যেমনঃ

  • হত হয়েছে শ্রী যার= হতশ্রী
  • খোশ মেজাজ যার=খোশমেজাজ
  • হৃত হয়েছে সর্বস্ব যার= হৃতসর্বস্ব
  • নীল কন্ঠ যার= নীলকন্ঠ
  • পক্ব কেশ যার= পক্বকেশ

২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহিঃ বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি বলে। যেমনঃ

  • আশীতে (দাঁতে) বিশ যার=আশীবিষ
  • কথা সর্বম্ব যার=কথা সর্বস্ব
  • বজ্রতে দেহ যার=বজ্রদেহ
  • বীণা পানিতে যার=বীণাপানি
  • পদ্ম নাভিতে যার=পদ্মনাভ
  • বোঁটা খসেছে যার=বোঁটাখসা
  • দুই কান কাটা যার=দুকানকাটা
  • ছা পোষা যার=ছাপোষা
  • এরূপঃ পাতা-চাটা, পাতাছেঁড়া, ধামাধরা

৩। ব্যতিহার বহুব্রীহিঃ ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। পূর্বপদে ‘আ’ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়। যেমনঃ

  • হাতে হাতে যে যুদ্ধ=হাতাহাতি
  • কানে কানে যে কথা=কানাকানি
  • ঘুষিতে ঘুষিতে যে লড়াই=ঘুষাঘুষি
  • লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ=লাঠালাঠি
  • কেশে কেশে ধরে যে যুদ্ধ=কেশাকেশি
  • দেখায় দেখায় যে ক্রিয়া=দেখাদেখি
  • হাসিতে হাসিতে যে ক্রিয়া=হাসাহাসি
  • এরূপঃ চুলাচুলি, কাড়াবাড়ি, গালাগালি, কোলাকুলি, গুতাগুঁতি

৪।   নঞ্ বহুব্রীহিঃ বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ্চ্ বহুব্রীহি বলে।

  • ন (নাই) জ্ঞান যার= অজ্ঞান
  • বে (নাই) হেড যার= বেহেড
  • না (নাই) চারা যার= নাচার
  • নি (নাই) ভুল যার= নির্ভুল
  • না (নয়) জানা যা= নাজানা
  • বে (নাই) ওয়ারিশ যার=বেওয়ারিশ
  • বে (নাই) তার যার= বেতার
  • নাই শঙ্কা যার=নিঃশঙ্ক
  • নাই কলঙ্ক যার=নিষ্কঙ্ক
  • বিগত পত্মী যার= বিপত্মীক
  • কর্ম নাই যার= বেকার
  • অক্ষর জ্ঞান নেই যার=নিরক্ষর
  • এরূপঃ নাহক, নিরুপায়, নির্ঝাঞ্ঝাট অবুঝ অকেজো, বে-পরোয়া, বেহুশ, অনন্ত

৫। মধ্যপদ লোপী বহুব্রীহিঃ বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্ত পদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে।

  • বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর=বিড়ালচোখী
  • হাতে ঘড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=হাতেঘড়ি
  • দশ বছর বয়স যার=দশবহুরে
  • কমলের মতো অক্ষি যার=কমলাক্ষ
  • কাঞ্চন বা সোনার মতো প্রভা যার=কাঞ্চন প্রভা
  • শূর্পের (কুলা) ন্যায় নখ যে নারীর=শূর্পনখা
  • গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=গায়েহলুদ
  • এরূপঃ মেনিমুখো, বিড়ালাক্ষী

৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহিঃ যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্ত পদে আ. এ. ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যায়ন্ত বহুব্রীহি।

  • এক দিকে চোখ যার=একচোখা
  • ঘরের দিকে মুখ যার=ঘরমুখো
  • নিঃ (নেই) খরচ যার=নি খরচে
  • দুই দিকে টান যার=দোটানা
  • কোনো কাজে লাগে না যা=অকেজো
  • দুই দিকে মন যার=দোমনা
  • এরূপঃ একগুঁয়ে, একঘরে, দোনলা, দোতলা, ঊনপাঁজুরে,

৭। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহিঃ পূর্বপদ সংখ্যাবাকে এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়।

  • দশ গজ পরিমান যার=দশগজি
  • চৌ (চার) চাল যে ঘরের=চৌচালা
  • দশ আনন যার=দশানন
  • দশ ভুজ যার=দশভুজা
  • দুটি নল যার=দোনলা
  • সহস্র লোচন যার=সহস্র লোচন
  • চার চাল যে ঘরের=চৌচালা
  • সে (তিন) তার যে যন্ত্রের=সেতার
  • তিন পা বিশিষ্ট যা=তেপায়া

৮। অলুক বহুব্রীহিঃ সে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।

  • মাথায় পাগড়ি যার=মাথায় পাগড়ি
  • গলায় গামছা যার=গলায় গামছা,
  • মুখে ভাত (শিশুকে) দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=মুখে ভাত
  • এরূপঃ হাতে-ছড়ি, কানে-কলম, গায়ে পড়া, হাতে বেড়ি, মাথায় ছাতা, কানে খাটো।

<<<<¦ অব্যয়ীভাব সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

  • মানানের অভাব=বেমানান
  • বন্দো বস্তের অভাব=বেবন্দোবস্ত
  • ভাতের অভাব=হাভাত
  • মিলের অভাব=গরমিল
  • লুনের অভাব=আলুনি
  • টকের অভাব মিষ্টির অভাব- না টক না মিষ্টি
  • হা-ঘর=ঘরের অভাব
  • জীবন পর্যন্ত=যাবজ্জীবন
  • হীন দেবতা=ঔপদেবতা
  • ঈষৎ লাল=ফিকালাল
  • রূপেরযোগ্য=অনুরূপ
  • দিনভব=সমস্তদিন
  • অক্ষিরঅগোচরে=পরোক্ষ
  • আত্মাকে অধি=অধ্যাত্মা
  • ভূতকে অধিকার করে=অধিভূত
  • দৈবকে অধিকার করে=অধিদৈব
  • দুঃকে (দুঃখকে) গত=দুর্গত
  • দক্ষিণকে প্রগত=প্রদক্ষিণ

১. সামীপ্য (উপ) অর্থে:

  • নগরীর সমীপে=উপনগরী
  • কূলের সমীপে=উপকূল
  • কন্ঠের সমীপে=উপকন্ঠ

২. বিপ্সা (অনু, প্রতি):

  • প্রতি দিন=দিন দিন
  • প্রতি ক্ষণে=ক্ষণে ক্ষণে
  • ক্ষণে ক্ষণে=অনুক্ষণ

৩. অভাব (নিঃ=নির):

  • আমিষের অভাব=নিরামিষ
  • ভাবনার অভাব=নির্ভাবনা
  • জলের অভাব=নির্জল
  • উৎসাহের অভাব=নিরুৎসাহ
  • ঝঞ্ঝাটের অভাব=নির্ঝঞ্ঝাট

৪. পশ্চাৎ (অনু)

  • পশ্চাৎ গমন=অনুগমন
  • পশ্চাৎ ধারণ=অনুধাবন
  • পশ্চাৎ সরণ=অনুসরণ
  • পশ্চাৎ তাপ=অনুতাপ

৫. অন্যান্য

  • ইষৎ নত=আনত
  • ঈষৎ রক্তিম= আরক্তিম
  • অক্ষির অগোচরে=পরোক্ষ
  • গ্রহে গ্রহে= প্রতিগ্রহে
  • মনে মনে= প্রতিমন
  • জনে জনে= প্রতিজন
  • বছর বছর= প্রতিবছর
  • রোজ রোজ=হররোজ

৬. অতিক্রান্ত (উৎ)

  • বেলাকে অতিক্রান্ত= উদ্বেল
  • শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত=উচ্ছৃঙ্খল
  • ছিন্নকে অতিক্রান্ত= উচ্ছিন্ন

৭. সাদৃশ্য (উপ)

  • শহরের সদৃশ=উপশহর
  • গ্রহের তুল্য= উপগ্রহ
  • বনের সদৃশ=উপবন
  • ভাষার সদৃশ=উপভাষা
  • কথার সদৃশ্য=উপকথা
  • দ্বীপের সদৃশ=উপদ্বীন
  • নদীর সদৃশ=উপনদী
  • সাগরের সদৃশ=উপসাগর
  • বিভাগের সদৃশ=ঔপবিভাগ
  • মূর্তির সদৃশ=প্রতিমূর্তি
  • মাতার সাদুশ=ঔপমাতা

৮. অনতিক্রম্যতা (যথা):

  • রীতিকে অতিক্রম না করে=যথারীতি
  • সাধকে অতিক্রম না করে=যথাসাধ্য
  • নিয়মকে অতিক্রম না করে=যথানিয়ম
  • বিধিকে অতিক্রম না করে=যথাবিধি
  • ইস্টকে অতিক্রম না করে=যথেষ্ট
  • ইচ্ছাকে অতিক্রম না করে=যথেচ্ছা

৯. বিরোধ (প্রতি)

  • বিরুদ্ধ বাদ=প্রতিবাদ
  • বিরুদ্ধ কূল=প্রতিকূল
  • বিরুদ্ধ যোগ= প্রতিযোগ

১০. পর্যান্ত (আ)

  • জীবন পর্যন্ত=আজীবন
  • সমুদ্র পর্যন্ত=আসামুদ্র
  • মূল পর্যন্ত=আমূল
  • মরণ পর্যন্ত=আমরণ
  • কৈশোর পর্যন্ত=আকৈশোর
  • জন্ম পর্যন্ত=আজন্ম
  • জানু পর্যন্ত=আজানু
  • অদ্য পর্যন্ত=অদ্যাবধি
  • কর্ণ পর্যন্ত=আকর্ণ
  • জীবন পর্যন্ত=যাবজ্জীবন

<<<<¦ নিত্য সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমনঃ

  • অন্য গ্রাম=গ্রামান্তর
  • কেবল দর্শন=দর্শনমাত্র,
  • অন্য গৃহ=গৃহান্তর,
  • কাল তুল্য সাপ=কালসাপ,
  • দুই এবং নব্বই=বিরানব্বই

<<<<¦ প্রাদি সমাস ¦>>>>

সংজ্ঞাঃ প্র, প্রতি, অনু প্রভূতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস। যেমনঃ

  • প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন=প্রবচন
  • পরি (চর্তুর্দিকে) যে ভ্রমন=পরিভ্রমন
  • অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ=অনুতাপ
  • প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত=প্রভাত
  • প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) গতি=প্রগতি
  • উৎ (উৎক্রান্ত) বেলা=উদ্বেল

ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয়-01

HSC বাংলা সাহিত্য গল্প,কবিতা,উপন্যাস

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি-
নংগল্প + কবিতার নামসাহিত্যিকদের নামলিঙ্ক
০১আমার পথকাজী নজরুল ইসলামClick
০২বিড়ালবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়Click
০৩চাষার দুক্ষুবেগম রোকেয়া সাখাওয়াতClick
০৪বায়ান্নর দিনগুলোশেখ মুজিবুর রহমানClick
০৫অপরিচিতারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরClick
০৬মাসি-পিসিমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়Click
০৭জীবন ও বৃক্ষমোতাহের হোসেন চৌধুরীClick
০৮জাদুঘরে কেন যাবআনিসুজ্জামানClick
০৯নেকলেসগী দ্য মোপাসাঁ/ পূর্ণেন্দু দস্তিদারClick
১০রেইনকোটআখতারুজ্জামান ইলিয়াসClick
১১আহ্বানবিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়Click
১২মহাজাগতিক কিউরেটরমুহম্মদ জাফর ইকবালClick
১৩সাম্যবাদীকাজী নজরুল ইসলামClick
১৪ঐকতানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরClick
১৫বিভীষণের প্রতি মেঘনাদমাইকেল মধূসুদন দত্তClick
১৬নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়সৈয়দ শামসুল হকClick
১৭তাহারেই পড়ে মনেসুফিয়া কামালClick
১৮ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯শামসুর রাহমানClick
১৯রক্তে আমার অনাদি অস্থি দিলওয়ার খানClick
২০ সেই অস্ত্রআহসান হাবিবClick
২১আঠারো বছর বয়সসুকান্ত ভট্টাচার্যClick
২২লোক লোকান্তরমীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদClick
২৩এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে জীবনানন্দ দাশClick
২৪আমি কিংবদন্তির কথা বলছিআবু জাফর ওবায়দুল্লাহClick
২৫লালসালুসৈয়দ ওয়ালীউল্লাহClick
২৬সিরাজউদ্দৌলাসিকান্দার আবু জাফরClick
২৭বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদনবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়Click
২৮বিদ্রােহীকাজী নজরুল ইসলাম Click
২৯গৃহরোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন Click
৩০মানব কল্যাণ-আবুল ফজলClick
৩১বিলাসীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়Click
৩২সোনার তরীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরClick
Spread the love

One thought on “সমাস বাংলা ব্যাকরণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *