Friday, March 29, 2024
HomeAdmissionজাতিসংঘ (United Nations)

জাতিসংঘ (United Nations)

জাতিসংঘ (United Nations) পার্ট-১

তথ্যপ্রবাহ…….

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘ (United Nations)। ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন ৫০টি দেশ জাতিসংঘ (United Nations) এর মূল সনদে স্বাক্ষর করে। ১৯৪৫ সালের ১৫ অক্টোবর জাতিসংঘ সনদে ৫১তম দেশ হিশেবে পোল্যান্ড স্বাক্ষর করে। প্রতিষ্ঠাকালীন ৫১টি সদস্য নিয়ে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯২।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সম্মেলন-

লন্ডন ঘোষণা :

১২ জুন ১৯৪১ সাল। জার্মান-ব্রিটেনকে আক্রমণ করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের ৯টি প্রবাসী সরকার পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য লন্ডনের জেমস প্রাসাদে যে ঘোষণা দেয় তাই লন্ডন ঘোষণা। এটি জাতিসংঘ (United Nations) প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।

আটলান্টিক সনদ :

১৪ আগস্ট ১৯৪১ সাল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরে ‘ব্রিটিশ নৌ-তরী প্রিন্সেস অব ওয়েলস- এ মিলিত হয়ে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যে ঘোষণা দেন তাকে ‘আটলান্টিক সনদ’ বলে।

ওয়াশিংটন ঘোষণা :

১৯৪২ সালের ১লা জানুয়ারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, সোভিয়েত এবং চীনের প্রতিনিধি সহ ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং ঐ বৈঠক কেই  ‘জাতিসংঘ ঘোষণা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মস্কো সম্মেলন :

১৯-৩০ অক্টোবর, ১৯৪৩ সাল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য ৭ দফা ঘোষণা করেন।

তেহরান সম্মেলন :

নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৪৩ সাল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এবং সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট স্ট্যালিন ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৩ সালে তেহরান আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের সকল দেশকে সদস্য হওয়ার আহŸান করেন।

ডাম্বারটন ওকস সম্মেলন :

২১ আগস্ট-২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪। ওয়াশিংটনের ডাম্বারটন ওকস্ ভবনে জাতিসংঘের রূপরেখা, নিরাপত্তা পরিষদ গঠন ও স্থায়ী সদস্য নির্বাচন এবং সংগঠনের (জাতিসংঘ) নামকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন সম্মেলন মিলিত হয়।

ইয়াল্টা সম্মেলন :

ফেব্রæয়ারি ১৯৪৫ সাল। ইউক্রেনের ইয়াল্টায় ডাম্বারটন সম্মেলনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত। ৫টি স্থায়ী সদস্যের ঠবঃড় প্রদান ক্ষমতা দেয়ার জন্য পুনরায় মিলিত হয়।

সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন :

২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন ১৯৪৫। ২৬ জুন ১৯৪৫ সালে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা ১১১ ধারা সম্বলিত জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করেন। ১৯৪৫ সালের ১৫ অক্টোবর ৫১ তম দেশ হিসেবে পোল্যান্ড জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করে। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর এ সনদ কার্যকরী হয়।

এছাড়াও …….

  1. ১৯৪২ সালের কাসাব্লাঙ্কা সম্মেলন।
  2. ১৯৪৩ সালের ভার্জিনিয়া সম্মেলন।

জাতিসংঘের চারটি মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। যথাঃ- 

  1. বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষা করা।
  2. জাতিসমূহের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখা।
  3. দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সহায়তা করা, ক্ষুধা, রোগব্যধি ও অশিক্ষাকে জয় করা এবং পারস্পরিক অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধকে উৎসাহিত করতে একযোগে কাজ করা।
  4. জাতিসমূহকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তাকল্পে একটি ফোরাম হিসেবে কাজ করা।

জাতিসংঘের মূল সংস্থাসমূহ

জাতিসংঘের মূলসংস্থা ৬টি। যথা-      

  1. সাধারণ পরিষদ (General Assembly)
  2. নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council)
  3. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council)
  4. আন্তর্জাতিক আদালত (International Court of Justice)
  5. সচিবালয় (Secretariat)
  6. অছি পরিষদ (Trusteeship Council)

সাধারণ পরিষদ

  • সাধারণ পরিষদকে বলা হয়- জাতিসংঘের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
  • সাধারণ পরিষদ গঠিত হয় সকল সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়ে (বর্তমান সদস্য- ১৯৩টি)।
  • সাধারণ পরিষদের প্রধানকে- সভাপতি বলা হয়।
  • নিয়মিত অধিবেশন ছাড়াও সাধারণ পরিষদ বিশেষ ও জরুরী অধিবেশনে মিলিত হয়।
  • জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে প্রথম নারী সভাপতি – বিজয় লক্ষী পন্ডিত (ভারত)।
  • সাধারণ পরিষদে প্রতিটি দেশ প্রতিনিধি পাঠাতে পারে- সর্বোচ্চ ৫ জন।
  • সাধারণ পরিষদে প্রত্যেকটি দেশের ভোট দেয়ার ক্ষমতা থাকে- ১টি।
  • জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বাৎসরিক নিয়মিত অধিবেশন শুরু হয়- প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার।
  • জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়- ২৩ অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৬।
  • জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত- ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে (লন্ডনে)।
  • সাধারণ পরিষদের সভাপতির মেয়াদকাল- ১ বছর।
  • সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্ধারিত হয়- সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে।

নিরাপত্তা পরিষদ

  • নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য- ১১টি।
  • নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সংখ্যা- ১৫ টি।
  • নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য সংখ্যা-৫টি।
  • নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা-  ১০টি।
  • নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যরা নির্বাচিত হন- ২ বছরের জন্য।
  • ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ছিল- ১১ টি।
  • নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির মেয়াদকাল- ১ মাস।
  • Veto Power- ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ ’আমি মানি না’।
  • জাতিসংঘের Veto Power  রয়েছে- ৫ টি স্থায়ী সদস্য দেশের।
  • অঞ্চল ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদে যেভাবে সদস্য নির্বাচিত- এশিয়া থেকে ২টি, আফ্রিকা থেকে ৩টি, ল্যাটিন আমেরিকা থেকে ২টি, পশ্চিম ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ২টি এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ১টি দেশ।
  • নিরাপত্তা পরিষদে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য- ৯টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজন (৫টি স্থায়ী ও অতিরিক্ত ৪টি)।
  • নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন জাতিসংঘের সদর দফতরের বাহিরে অনুষ্ঠিত হয়- ২ বার। ১৯৭১ সালে আদ্দিস আবাবায়, ১৯৭৩ সালে পানামা সিটিতে।
  • নিরাপত্তার পরিষদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়- ১৯৯২ সালে।
  • নিরাপত্তার পরিষদের দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়- ২০০০ সালে।
  • পেরেজ দ্যা কুয়েলার নিরাপত্তা পরিষদকে ‘সেফটি নেট’ বলে অভিহিত করেছেন।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ

  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদকে বলা হয়- টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ঋধসরষু।
  • এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য- ১৮।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বর্তমান সদস্য- ৫৪।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন- ৩ বছরের জন্য।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে প্রতিবছর অবসর নেয়- ১৮টি সদস্য এবং নতুন করে যোগদান করে ১৮ টি সদস্য।
  • সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে ইকোসকের (ঊঈঙঝঙঈ) সদস্য নির্বাচিত হয়।

আন্তর্জাতিক আদালত

  • আর্ন্তজাতিক আদালত গঠিত হয়- ১৯৪৫ সালের জুনে।
  • আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দফতর- হেগ (নেদারল্যান্ড)।
  • আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক- ১৫ জন।
  • আন্তর্জাতিক আদালতের একজন বিচারক নির্বাচিত হন- ৯ বছরের জন্য।
  • আন্তর্জাতিক আদালতের সভাপতি নির্বাচিত হন- ৩ বছরের জন্য।

অছি পরিষদ

  • জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাচঁটি স্থায়ী রাষ্ট্র এর সদস্য।
  • অছি পরিষদের মূল কাজ- অছি বা ট্রাস্টভুক্ত সকল দেশের জনগণের উন্নয়ন, আত্মনির্ভরশীল, স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের পথ সুগম করা।
  • ১৯৯৪ সালে পালাউ-এর স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে অছি পরিষদের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

সচিবালয়

  • জাতিসংঘের সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু- সচিবালয়।
  • জাতিসংঘে ১ জন মহাসচিব, ১ জন উপমহাসচিব এবং ১২ জন অধস্তন সচিব রয়েছে।
  • জাতিসংঘ সচিবালয়ের প্রধানকে বলা হয়- সেক্রেটারী জেনারেল বা মহাসচিব।
  • জাতিসংঘ মহাসচিব নিযুক্ত হন- নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে।
  • জাতিসংঘের মহাসচিবের মেয়াদ- ৫ বছর
  • জাতিসংঘ সচিবালয়ের সদর দপ্তর- যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
  • জাতিসংঘের ইউরোপীয় সদরদপ্তর- সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
 
জাতিসংঘ মহাসচিবের তথ্য
নাম দেশ কার্যকাল বিশেষ তথ্য
ট্রিগভেলী নরওয়ে ১৯৪৬-৫৩ একমাত্র পদত্যাগকারী মহাসচিব, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকালীন মহাসচিব।
দ্যা হ্যামার শোল্ড সুইডেন ১৯৫৩-৬১ ২ বার বিমান দূর্ঘটনায় নিহিত। মরনোত্তর নোবেল লাভ (১৯৬১সালে)।
উথান্ট মায়ানমার ১৯৬১-৭১ প্রথম এশিয়ান মহাসচিব, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মহাসচিব।
কুর্টওয়াল্ড হেইম অস্ট্রিয়া ১৯৭১-৮১ পরবর্তীতে নিজ দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত।
জাভিয়ার পেরেজ দ্য কুয়েলার পেরু ১৯৮২-৯১ পরবর্তীতে নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
বুট্রোস ঘালি মিশর ১৯৯২-৯৬ আফ্রিকা হতে নির্বাচিত প্রথম মহাসচিব। usa এর ভেটোর কারণে ২য় হয়নি।
কফি আনান ঘানা ১৯৯৭-২০০৬ শান্তিতে নোবেল লাভ (২০০১ সাালে)।
দ: কোরিয়া ২০০৭-২০১৭ দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের উত্থান্টের পর জাতিসংঘের দ্বিতীয় এশীয় মহাসচিব।
অ্যান্টনিও গুতেরেস পর্তুগাল ২০১৭-বর্তমান  বর্তমান মহাসচিব

 

জাতিসংঘ (United Nations) পার্ট-২

Spread the love
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments