Thursday, March 28, 2024
Home Blog Page 10

চাষার দুক্ষু-রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

চাষার দুক্ষু-

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

 


অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :

সভ্যতার বস্তুগত দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।

মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তির উন্নতিই যে দেশ ও জাতির  উন্নতি নয়, সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।

জাতির মেরুদণ্ড চাষার সাথে অন্যান্য পেশাজীবী শ্রেণির আয় বৈষম্য সম্পর্কে জানতে পারবে।

বর্তমানে বাংলার কৃষকদের অবর্ণনীয় শ্রম এবং তাদের নিদারুণ দারিদ্র সম্পর্কে ধারণা  লাভ করবে।

পূর্বে দেশবাসীর বস্ত্র সমস্যা সমাধানে কৃষকরমণীদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।

সভ্যতার নামে পরানুকরণ ও বিলাসিতায় দরিদ্র কৃষকের ক্ষতিকর পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারবে।

আমাদের পরিত্যাগ করা স্বদেশী পণ্য লুফে নিয়ে ইউরোপীয়দের প্রচুর মুনাফা অর্জন সম্পর্কে জানতে পারবে।

সভ্যতা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দেশি শিল্পগুলো ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে পারবে।

দেশের চাষিদের অবস্থার পরিবর্তনে স্বদেশী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবে।

পাঠশালা আর ঘরে ঘরে চরকা ও টেকোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে।


উৎস পরিচিতি :

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত ‘চাষার দুক্ষু’ শীর্ষক রচনাটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত “রোকেয়া রচনাবলি থেকে নেওয়া হয়েছে।

মূলবাণী/মর্মবাণী/উপজীব্য বিষয়: কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি


শব্দার্থ ও টীকা

ছেইলা –    ছেলে। সন্তান-সন্ততি অর্থে।

পৈছা –    স্ত্রীলোকদের মণিবন্ধনের প্রাচীন অলঙ্কার।

দানা   –    খাদ্য অর্থে।

অভ্রভেদী     –    অভ্র অর্থ আকাশ।

ট্রামওয়ে      –    ট্রাম চলাচলের রাস্তা।

বায়স্কোপ     –    চলচ্চিত্র, ছায়াছবি, সিনেমা।

চাষাই সমাজের মেরুদন্ড – বাংলা কৃষিপ্রধান দেশ।

কৌপিন      –    ল্যাঙ্গট।

মহীতে –    পৃথিবীতে।

টেকো –    সুতা পাকাবার যন্ত্র।

এন্ডি –    মোটা রেশমি কাপড়।

বেলোয়ারের চুড়ি      –    উৎকৃষ্ট স্বচ্ছ কাচে প্রস্তুত চুড়ি।


সারমর্ম

তাঁর শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাÐ থেকে শুরু করে লেখালেখির জগৎ উৎসর্গ করা হয়েছে পশ্চাৎপদ নারীসমাজের মুক্তি ও সমৃদ্ধির জন্য। কিন্তু ‘চাষার দুক্ষু’ শীর্ষক প্রবন্ধটি তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত কৃষকদের বঞ্চনার মর্মন্তুদ দলিল হয়ে আছে। ভারতবর্ষের সভ্যতা ও অগ্রগতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি দেখিয়েছেন, সেখানে কৃষকদের অবস্থা কত শোচনীয়। কুটির শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়ে আত্মনির্ভরশীল গ্রাম সমাজকে চরম সংকটের মধ্যে ফেলেছে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী। কৃষকদের এই মুমূর্ষু অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন গ্রামে গ্রামে পাঠশালা প্রতিষ্ঠানের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আর গ্রামীণ কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। এই প্রবন্ধে রোকেয়ার অসাধারণ পাÐিত্য, যুক্তিশীলতা ও চিন্তার বিস্ময়কর অগ্রসরতার প্রতিফলন ঘটেছে।


গুরুত্বপূর্ণ লাইন

চাষাই সমাজের মেরুদণ্ড।

দেড় শত বৎসর পূর্বে ভারতবাসী অসভ্য বর্বর ছিল।

তবে আমার ‘ধান ভানিতে শিবের গান’ কেন?

একটি চাউল পরীক্ষা করিলেই হাঁড়ি ভরা ভাতের অবস্থা জানা যায়।

“ধান্য তার বসুন্ধরা যার”।

“কৃষক কন্যা জমিরনের মাথায় বেশ ঘন ও লম্বা চুল ছিল, তার মাথায় তেল লাগিত প্রায় আধ পোয়াটাক।

এই তো ৩০/৩৫ বৎসর পূর্বে বিহার অঞ্চলে দুই সের খেসারির  বিনিময়ে কৃষক পত্মী কন্যা বিক্রয় করিত।

সুতরাং দেখা যায়, ইউরোপীয় মহাযুদ্ধের সহিত চাষার দারিদ্র্যের সম্পর্ক অতি অল্পই।

কৃষক রমণী স্বহস্তে চরকায় সুতা কাটিয়া বাড়িসুদ্ধ সকলের জন্য কাপড় প্রস্তুত করিতে।

আসাম এবং রংপুর জেলায় এক প্রকার রেশম হয়, স্থানীয় ভাষায় তাহাকে ‘এন্ডি’ বলে।

এন্ডি কাপড় বেশ গরম এবং দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়।

একখানি এন্ডি কাপড় অবাধে ৪০ (চল্লিশ) বৎসর টেকে।

পল্লিগ্রামে সুশিক্ষা বিস্তারের চেষ্টা হওয়া চাই।

গ্রামে গ্রামে পাঠশালা আর ঘরে ঘরে চরকা ও টেকো হইলে চাষার দারিদ্র্য ঘুচিবে।


গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(জ্ঞানমূলক)

১.   ভারতবাসী অসভ্য বর্বর ছিল –  ১৫০ বছর আগে।

২.   দেড়শত বৎসর হইতে আমরা হইতেছি – সভ্য থেকে সভ্যতর।

৩.   আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ও জাতির সমকক্ষ হইতে চলিয়াছি- শিক্ষায়, সম্পদে।

৪.   এখন আমাদের স্থান নাই – সভ্যতা ও ঐশ্বর্য রাখিবার।

৫.   ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকা ইউরোপের মহাযুদ্ধকে উল্লেখ করেছেন – ৭ বছর আগের ঘটনা বলে।

৬.   লেখিকার মতে চাষার অবস্থা খুব ভালো ছিল না ঐ সময় হতে – ৫০ বছর আগেও।

৭.   ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকার সময় হতে ৫০ বছর আগে টাকায় সরিষার তৈল পাওয়া যেত – ৮ সের।

৮.   ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকার সময় হতে ৫০ বছর আগে টাকায় ঘৃত পাওয়া যেত – ৪ সের।

৯.   ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকা তখনকার সময়ের একটি গল্পের উল্লেখ করেছেন যখন- টাকায় ৮ সের সরিষার তৈল পাওয়া যেত।

১০. ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে উলে­খিত গল্পে কৃষককন্যার নাম – জমিরন।

১১. মাথায় বেশ ঘন ও লম্বা চুল ছিল – জমিরনের।

১২. জমিরনের মাথায় তেল লাগিত প্রায় – আধ পোয়াটাক।

১৩. ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে লেখিকা অত্যন্ত দরিদ্র বলেছেন – রংপুর জেলার কোন কোন গ্রামের কৃষকদের।

১৪. ধান ও পাটের জন্য প্রসিদ্ধ – রংপুর।

১৫. ইউরোপীয় মহাযুদ্ধের সাথে চাষার দারিদ্র্যের সম্পর্ক – অতি অল্প।

১৬. এখন টাকায় ৩/৪ সের চাউল পাওয়া সত্তে¡ও কৃষক থাকে- অর্ধানশনে।

১৭. ‘মরাই ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু’- কৃষকের এরূপ অবস্থা ছিল লেখিকার সময় হতে অন্তত – শতাধিক বছর আগে।

১৮. লেখিকার সময় হতে অন্তত শতাধিক বছর আগে কৃষক রমণী কাপড় প্রস্তুত করিত – স্বহস্তে চরকায় সুতা কাটিয়া।

১৯. আসাম এবং রংপুর জেলায় যে রেশম হয় তার নাম – এন্ডি।

২০. এন্ডি রেশমের পোকা প্রতিপালন ও তাহার গুটি হইতে সুতা কাটা – অতি সহজসাধ্য কার্য।

২১. তৎকালীন কেউ কারও বাড়ি দেখা করিতে যাইবার সময় হাতে লইয়া যাইত – টেকো (সুতা পাকাবার যন্ত্র)।

২২.  লেপ, কম্বল, কাঁথা কিছুই প্রয়োজন হয় না- ৪/৫ খানি এন্ডি কাপড় থাকিলে।

২৩. সেকালে রমনীগণ হাসিয়া খেলিয়া পূরণ করিত – বস্ত্র সমস্যা।

২৪. লেখিকার সময় হতে অন্তত শতাধিক বছর আগে চাষা অন্নবস্ত্রের কাঙাল ছিল না কারণ – সে তখন অসভ্য বর্বর ছিল।

২৫. এখন চাষাদের পেটে ভাত নাই কারণ – সে সভ্য হইয়াছে।

২৬. পূর্বে পল্লীবাসিনীগণের কাপড় কাচার জন্য প্রয়োজন হইত – ক্ষার।

২৭. এখন পল্লিবাসিনীগণের কাপড় কাচার জন্য প্রয়োজন হয় – ধোপার।

২৮. পল্লীবাসিনীগণের শিরায় শিরায়, ধমনীতে ধমনীতে প্রবেশ করিয়াছে-বিলাসিতা।

২৯. মুটে মজুর দুই পদ নড়িতে পারে না-  ট্রাম না হইলে।

৩০. প্রথম দৃষ্টিতে ট্রামের ভাড়া পাঁচটা পয়সা মনে হয় – অতি সামান্য।

৩১. ট্রামে যাইতে আসিতে লাগিয়া যায়  – দশ পয়সা।

৩২. বিলাসিতা ওরফে সভ্যতার সাথে তাহাদের স্কন্ধে চাপিয়া আছে- অনুকরণপ্রিয় নামক আর একটা ভূত।

৩৩. তাহাদের আর্থিক অবস্থা সামান্য একটু সচ্ছল হইলেই তাহারা অনুকরণ করিয়া থাকে – প্রতিবেশী বড়লোকদের।

৩৪. ‘চাষার বৌ ঝির যাতায়াতের জন্য সওয়ারি চাই; ধান ভানিবার জন্য ভারানি চাই’- এগুলোর উল্লেখ করে লেখিকা বোঝাতে চেয়েছেন তাহাদের- অনুকরণপ্রিয়তা নামক দোষটিকে।

৩৫. সভ্যতার চূড়ান্ত হইবে – শিবিকাবাহকগণ পালকি লইয়া ট্রামে যাতায়াত করিলেই।

৩৬. আমরা সুসভ্য হইয়া পরিত্যাগ করিয়াছি – এন্ডি কাপড়।

৩৭. ইউরোপীয় নর-নারীদের অঙ্গে কোট, প্যান্ট ও স্কার্ট রূপে এন্ডি কাপড় শোভা পাইল – আসাম সিল্ক নামে।

৩৮. ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে প্রতিফলন ঘটেছে – বেগম রোকেয়ার অসাধারণ পাÐিত্য, যুক্তিশীলতা ও চিন্তার বিস্ময়কর অগ্রসরতার।


প্রথম ও শেষ লাইন

প্রথম লাইন: ক্ষেতে ক্ষেতে পুইড়া মরি, রে ভাই পাছায় জোটে না ত্যানা।

শেষ লাইন: গ্রামে গ্রামে পাঠশালা আর ঘরে ঘরে চরকা ও টেকো হইলে চাষার দারিদ্র ঘুচিবে।

বিড়াল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বিড়াল

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের


উৎস পরিচিতি

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংলকন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। তিন অংশে বিভক্ত এই গ্রন্থটিতে যে কটি প্রবন্ধ আছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রচনা ‘বিড়াল’।

মূলবাণী/মর্মবাণী/উপজীব্য বিষয় : হাস্যরসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী আলোচনার মাধ্যমে সমাজের নিগূঢ় বিষয় উপস্থাপন


শব্দার্থ ও টীকা

  1. চারপায়      –    টুল বা চৌকি।
  2. প্রেতবৎ      –    প্রেতের মতো।
  3. ওয়েলিংটন     –    বীর যোদ্ধা।
  4. ডিউক –    ইউরোপীয় সমাজের বনেদি বা অভিজাত ব্যক্তি।
  5. মার্জার –    বিড়াল
  6. ব্যূহ রচনা    –    প্রতিরোধ বেষ্টনী তৈরি করা।
  7. প্রকটিত –    তীব্রভাবে প্রকাশিত।
  8. ষষ্টি   –    লাঠি।
  9. দিব্যকর্ণ      –    ঐশ্বরিকভাবে শ্রবণ করা।
  10. ঠেঙ্গালাঠি     –    প্রহার করার লাঠি।
  11. শিরোমণি     –    সমাজপতি।
  12. ন্যায়ালংকার   –    ন্যায়শাস্ত্রে পন্ডিত।
  13. ভার্যা –    স্ত্রী।
  14. সতরঞ্চ খেলা –    পাশা খেলা। দাবা খেলা।
  15. লাঙ্গুল –    লেজ। পুচ্ছ।
  16. সোশিয়ালিস্টিক  –    সমাজতান্ত্রিক।
  17. নৈয়ায়িক      –    ন্যায়শাস্ত্রে পন্ডিত ব্যক্তি।
  18. কস্মিনকালে    –    কোনো সময়ে।
  19. মার্জারী মহাশয়া      –    স্ত্রী বিড়াল।
  20. জলযোগ      –    হালকা খাবার। টিফিন।
  21. সরিষা ভোর   –    ক্ষুদ্র অর্থে (উপমা)।
  22. পতিত আত্মা   –    বিপদগ্রস্ত বা দুর্দশাগ্রস্ত আত্মা।

জটিল শব্দসমূহের অর্থ ও বানান অনুশীলন

  1. শয়নগৃহ      –    শোয়ার ঘর।
  2. লোচন –    চোখ।
  3. পাষাণবৎ     –    পাথরের মতো।
  4. এক্ষণে –    এখন।
  5. উদরসাৎ     –    খেয়ে ফেলা।
  6. অভিপ্রায়      –    ইচ্ছা।
  7. সকাতরচিত্তে   –    কাতর মনে।
  8. ক্ষুৎপিপাসা    –    ক্ষুধা ও পিপাসা।
  9. আহারিত     –    সংগ্রহ করা হয়েছে এমন।
  10. মূলীভূত      –    আসল, গোড়ার।

‘বিড়াল’ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লাইন

  • আমাদের কালো চামড়া দেখিয়া ঘৃণা করিও না।
  • খাইতে দাও নহিলে চুরি করিব।
  • অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আসে নাই।”
  • সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি।
  • সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই।
  • আমি যদি নেপোলিয়ন হইতাম, তবে ওয়াটারলু জিতিতে পারিতাম কি না।
  • ওয়েলিংটন হঠাৎ বিড়ালত্ব প্রাপ্ত হইয়া, আমার নিকট আফিং ভিক্ষা করিতে আসিয়াছে।
  • আমি তখন ওয়াটারলু মাঠে ব্যূহ-রচনায় ব্যস্ত, অত দেখি নাই।
  • কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।
  • দুধ মঙ্গলার, দুহিয়াছে প্রসন্ন।
  • মনুষ্যকুলে কুলাঙ্গার স্বরূপ পরিচিত হইবে, ইহা বাঞ্ছনীয় নহে।
  • অনেক অনুসন্ধানে এক ভগ্ন যষ্টি আবিষ্কৃত করিয়া সগর্বে মার্জারীর প্রতি ধাবমান হইলাম।
  • এ সংসারের ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস সকলই তোমরা খাইবে, আমরা কিছু পাইব না কেন?
  • আমরা খাইলেই তোমরা কেন শাস্ত্রানুসারে ঠেঙ্গা লাঠি লইয়া মারিতে আইস, তাহা আমি বহু অনুসন্ধানে পাইলাম না।
  • বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না।
  • আমি তোমার ধর্ম সঞ্চয়ের মূলীভূত কারণ।
  • আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি?
  • অধর্ম চোরের নহে- চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম কৃপণ ধনীর।
  • চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী।
  • তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না।

সারমর্ম

একদিন কমলাকান্ত নেশায় বুঁদ হয়ে ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে। বিড়ালের “সোশিয়ালিস্টিক’, ‘সুবিচারিক’, ‘সুতার্কিক’ কথা শুনে বিষ্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত কমলাকান্তের মনে পড়ে আত্মরক্ষামূলক শ্লেষাত্মক বাণী- “বিজ্ঞ লোকের মতে এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবেন, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে”-এবং তিনি সে রকম কৌশলের আশ্রয় নেন। সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষে একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়েও, বঙ্কিমচন্দ্র একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শাসক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা কী শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তা এ প্রবন্ধে পাঠ করে উপলদ্ধি করা যায়। বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিস্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্তি¡ক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে, “আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পারলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া ওঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক।’ মাছের কাটা, পাতের ভাত- যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিড়ালের ক্ষিধে দূর করা যায়,লোকজন তা না করে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার নর্দমায় ফেলে দেয়,—যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়, ক্ষুধাকাতর শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না, এমন ঘোরতর অভিযোগ আনে বিড়ালটি।


পাঠ বিশ্লেষণ

“ বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নহে।”

কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা থাকা স্বাভাবিক, তবে অপরিচিত চাওয়া হলো লোভ যা মেনে নেওয়া যায় না। আফিংয়ে বুঁদ কমলাকান্ত যখন ওয়াটারলুর যুদ্ধে জেতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাময় তখন হঠাৎ ‘মেও’ শব্দ হয়। প্রথমে তিনি ভাবেন ওয়েলিংটন হয়তো বিড়ালরূপে তার কাছে আফিং চাইতে এসেছে। তার মনে পড়ল ডিউককে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, আর অতিরিক্ত দেওয়া যায় না। কারণ বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নয়। কাজেই সবকিছুতেই পরিমিতি রক্ষা করা দরকার।

“আমি তখন ওয়াটার্লূর মাঠে ব্যুহ রচনায় ব্যস্ত।”

কমলাকান্ত নেপোলিয়ন হলে কীভাবে ওয়াটারলু যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারতেন আফিমের নেশায় বুঁদ হয় তারই ছক তৈরিতে তিনি ব্যস্ত। তিনি যখন যুদ্ধের মাঠে ব্যূহ রচনা করছেন, বিড়াল তখন তার জন্য রেখে যাওয়া দুধ পান করে নিঃশেষ করছে। অন্যদিকে মনোযোগ থাকায় কমলাকান্ত তা টের পাননি।

“কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।”

নিজের পরিশ্রমের ফসল অন্য কেউ বিনা পরিশ্রমে আত্মসাৎ করলে যে অবস্থা দাঁড়ায়, কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ বিড়াল এসে খেয়ে ফেলায় তারও তখন সেই অবস্থা। প্রসন্নকে দিয়ে অনেক কষ্টে তিনি দুধ আনিয়েছিলেন। অথচ বিড়াল তা নিঃশেষ করেছে। এখন বিড়াল তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছে আর হয়তো ভাবছে, কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।

“সে দুগ্ধে আমারও যে অধিকার, বিড়ালেরও তাই।”

কমলাকান্তের মাথায় হঠাৎ সাম্যচিন্তা ঢুকেছে। তিনি হঠাৎ তার আর বিড়ালের সম অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। কারণ দুধ কমলাকান্তের বাবার নয়। দুধ মঙ্গলা গাভীর, দোহন করেছে প্রসন্ন গোয়ালিনী। কাজেই সেই দুধে কমলাকান্তেরও যে অধিকার, বিড়ালেরও সেই অধিকার।

“অতএব পুরুষের ন্যায় আচরণ করাই বিধেয়।”

বাংলায় একটা প্রথা প্রচলিত আছে যে, বিড়াল দুধ খেয়ে গেল তাকে তাড়া করে মারতে হয়। সেই প্রথা না মানলে কমলাকান্ত মানুষের কাছে পরিচিত হবেন। কাজেই বিড়ালকে তাড়া করে মেরে পুরুষের মতো আচরণ করাকেই তিনি সঙ্গত মনে করলেন।

“অতএব তুমি সেই পরম ধর্মের ফলভাগী।”

মানুষের পরম ধর্ম হলো পরোপকার করা। কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে বিড়ালের ক্ষুধা মিটেছে, সে উপকৃত হয়েছে। আর পরোপকার কাজটি করেছে কমলাকান্ত। এই যুক্তিতে কমলাকান্ত সেই পরম ধর্মের ফলভাগী।

“চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী।”

চোর যেমন দোষী, কৃপণ ধনী তেমনই দোষী। কারণ দরিদ্র সাধ করে চুরি করে না। গরিব যখন খাদ্য বস্ত জোগাড় করতে পারে না, তখন সে চুরি করে। অথচ ধনীরা গরিব বা দুস্থদের কোন রকম সাহায্য করে না, বরং বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে থাকে। এদিক থেকে চুরির দায়ে চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী নানা কারণে তার চেয়ে শত গুণে দোষী।

“ যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয়, তাহার জন্য ভোজের আয়োজন কর- আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহŸানেই তোমার অন্ন খাইয়া ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দন্ড কর – ছি! ছি!”

নিমন্ত্রণ করলে যে বিরক্ত হয় তার জন্য ভোজের আয়োজন করা হয় এবং তাকেই খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়। অথচ যে ক্ষুধার্ত তাকে নিমন্ত্রণ করা হয় না। আবার সে যদি বিনা নিমন্ত্রণেই ক্ষুধার জ্বালায় খাদ্য খেয়ে ফেলে তাহলে তাকে চোর বলে শাস্তি দেওয়া হয়। এটা উচিত নয়।

“খাইতে দাও- নহিলে চুরি করিব।”

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রধান ও সর্বপ্রথম চাহিদা হলো খাদ্য। স্বাভাবিক উপায়ে খাদ্য জোগাড় করতে না পারলে মানুষকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বিড়াল যেমন কমলাকান্তের  জন্য  রেখে দেওয়া দুধ চুরি করে খায়, মানুষও তেমনি উপায়ন্তর না দেখে চুরি করে। তাছাড়া এ পৃথিবীর মাছ মাংসে সবারই অধিকার আছে। তার বত্যয় ঘটলে দাবি উঠতেই পারে. খাইতে দাও- নহিল চুরি করিব।

“যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন, তিনি আগে  তিন দিবস উপবাস করিবেন।”

সৎ উপায়ে যখন কেউ অন্নসংস্থান করতে ব্যর্থ হয়, তখনই সে অসুদপায় অবলম্বন করে। যার জন্য তাকে অপরাধী ভাবা হয়। অথচ বিচারকরা তার কার্যকারণ অনুধাবন করেন না। কাজেই যে বিচারক চোরকে সাজা দেবেন, তিনি আগে তিন দিন না খেয়ে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণাটা উপলদ্ধি করবেন। তারপর চোরের বিচার করবেন।

“বিজ্ঞ লোকের মত এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে।”

পরাজিত হয়েও পরাজয় না মানার বিকল্প অভিনয় করতে হবে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, সে পরাজিত হয়েছে-এ হলো বিজ্ঞ লোকের অভিমত। প্রসঙ্গত, কমলাকান্ত দরিদ্র বিড়ালের যুুক্তিতে পরাজিত হয়ে গম্ভীর ভাব ধারণ করে উপদেশ প্রদানে মনোযোগ দেন। বিড়ালের কথাগুলো নীতিবিরূদ্ধ, এতে পাপ হবে। আর তা থেকে মুক্তির জন্য ধর্মাচরণে মন নিতে হবে। বিড়াল এসব উপদেশ ক্ষুধানুসারে বিবেচনা করবে বলে জানিয়ে দেয়।

“একটা পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড় আনন্দ হইল।”

পতিত আত্মা আসলে পতিত নয়- সে সচেতন ও বিদ্রোহী। আর তা অন্ধকারেও অবস্থান করে না, সে আলোকিত। তবে তথাকথিত ধনীরা দরিদ্র দুস্থদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করে পণ্ডিত হিসেবে বিবেচনা করে। পতিত আত্মা ক্ষুধার্ত থাকলে নীতিজ্ঞান আর ধর্মজ্ঞান মানে না। কিন্তু বিড়াল এটাকে ক্ষুধার্তের অধিকার বলে যুক্তি দেখাও। কমলাকান্তও নানা যুক্তি দিয়ে, উপদেশ দিয়ে এসব নীতিবিরুদ্ধ কাজ থেকে বিড়ালকে বিরত থাকার সম্মতি আদায় করতে পেরেছেন। তাই এটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনতে পেরেছেন মনে করে কমলাকান্তের বড় আনন্দ হলো।


গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক)

  • ১.   লেখক বসে ছিল -চার পায়ীর উপর।
  • ২.   লেখকের হাতে ছিল – হুকা।
  • ৩.   দেয়ালের উপর ছায়াগুলো – চঞ্চল ছায়া।
  • ৪.   লেখকের ঘরে আলো জ্বলিতেছে – মিট মিট করে ক্ষুদ্র আলো।
  • ৫.   দেয়ালের উপর চঞ্চল ছায়াগুলো নাচছে – প্রেতের মতো।
  • ৬.   লেখকের হাতে হুঁকো থাকার কারণ -আহার প্রস্তুত হয়নি বলে।
  • ৭.   লেখক হুঁকো হাতে নিজেকে ভাবছিল – নেপোলিয়ন।
  • ৮.   নেপোলিয়ন আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন -সমগ্র ইউরোপে
  • ৯.   নেপোলিয়ন পরাজিত হন – ১৮১৫ সালে সংঘটিত ওয়াটার লুর যুদ্ধে ওয়েলিংটনের ডিউকের হাতে তিনি পরাজিত হন।
  • ১০.  পরাজিত নেপোলিয়নকে নির্বাসিত করা হয় – সেন্ট হেলেনা দ্বীপে।
  • ১১.  নেপোলিয়ন মৃত্যু বরণ করেন-১৮২১ সালে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে।
  • ১২.‘বিশেষ অপরিমিত লোভ ভালো নহে’- উক্তিটি – কাল্পনিক ডিউকের (বিড়াল) প্রতি লেখকের।
  • ১৩. প্রসন্ন লেখকের জন্য রেখে গিয়েছিল – দুধ।
  • ১৪. প্রসন্ন লেখকের জন্য দুধ রেখে গিয়েছিল – মঙ্গলার (গরুর নাম)
  • ১৫.লেখকের জন্য রেখে যাওয়া দুধ খেয়ে উদরসাৎ করেছিল – মার্জার
  • ১৬.মার্জারের ‘মেও’ বলার মধ্যে ছিল -ব্যঙ্গ।
  • ১৭. “কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায়—–শূন্যস্থানে হবে -কই।
  • ১৮. মার্জারী স্বজাতিমল্ডলে কাপুরুষ বলে উপহাস করে – কমলাকান্তকে
  • ১৯. লেখক স্বজাতিমণ্ডলে কাপুরুষ বলে উপহাস করে- কমলাকান্তকে
  • ২০.মার্জারী লেখককে খাওয়ার কথা বলেছিলেন – ৬টি জিনিস(ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস)।
  • ২১. মার্জারীর মতে চোর অপেক্ষা অধার্মিক – বড় বড় সাধু।
  • ২২. চোর যে চুরি করে, সে অধর্ম – কৃপণ ধনীর।
  • ২৩. মার্জারির মতে জ্ঞানোন্নতির জন্য মানবজাতিকে শিক্ষা নিতে হবে – বিজ্ঞ চতুষ্পদের নিকট থেকে।
  • ২৪. মার্জারির মতে ধর্ম হচ্ছে -পরোপকার।
  • ২৫. মার্জারির মতে কমলাকান্তের ধর্মের সহায় – স্বয়ং মার্জারী।
  • ২৬. মার্জারীর মতে লজ্জার কথা হচ্ছে – দরিদ্র্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া
  • ২৭. অনেক মার্জার কবি হয়ে যায় – গৃহপালিত মার্জারকে দেখে যার গায়ে লোম হয় এবং লেজ ফুলে যায়।
  • ২৮. মার্জারের মতে মার্জাররা পুষ্টি পায় – গৃহমার্জার (পালিত) হলে।
  • ২৯. মার্জারের লেজ ফুলে যায় এবং গায়ে লোম হয় – গৃহমার্জার হলে।
  • ৩০.  অনাহারী মার্জারীর দাঁত – বাহির হইয়া আছে।
  • ৩১.  অনাহারী মার্জারীর জিহ্বা – ঝুলিয়া পড়িয়াছে।
  • ৩২.  মার্জারীর মতে কমলাকান্ত দূরদর্শী কারণ সে – আফিংখোর।
  • ৩৩. মার্জারীর মতে দরিদ্র চোর হয় – ধনীর দোষে।
  • ৩৬. মার্জারীর মতে একজন লোক আহার্য সংগ্রহ করে – ৫০০ জন দরিদ্রের।
  • ৩৭. “তোমার কথাগুলি ভারি সোশিয়ালিস্টিক” – উক্তিটি – মার্জারের প্রতি কমলাকান্তের।
  • ৩৮. মার্জারের মতে সমাজের ধন বৃদ্ধির অর্থ – ধনীর ধন বৃদ্ধি।
  • ৩৯. ‘কস্মিনকালেও কেহ তাহাকে কিছু বুঝাইতে পারে না’ – কার? – যে বিচারক বা নৈয়ায়িক।
  • ৪০. যে বিচারক চোরকে সাজা দিবে মার্জার তাকে উপবাসে থাকতে বলেছে – ৩ দিন।
  • ৪১. লেখককে আগামিকাল প্রসন্ন ছানা দিলে লেখক তা খাবে – বিড়ালের সাথে ভাগাভাগি করে।
  • ৪২. মার্জার ক্ষুধায় নিত্যান্ত অধীর হলে লেখক তাকে বলেছিল -এক
  • ৪৩.মার্জার বিদায় হলে লেখক ভাবতে লাগল – একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার হতে লেখক আলোতে এনেছে।
  • ৪৪. সমাজে উন্নতি নাই – সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত(কমলাকান্তের উক্তি)
  • ৪৫. ‘বিড়াল’ গল্পে পতিত আত্মা বলতে বোঝানো হয়েছে – বিড়ালকে
  • ৪৬. ‘বিড়াল’ গল্পের প্রথম অংশটি – নিখাদ হাস্যরসাত্মক।
  • ৪৭. ‘বিড়াল’ গল্পের শেষ অংশটি – নিগূঢ়  অর্থে সন্নিহিত।

চরিত্র:

নেপেলিয়ন, ওয়েলিংটন, মঙ্গলা, প্রসন্ন, মার্জার, নসিরামবাবু, হাকিম ও কমলকান্ত, নিউমান ও পার্কর।

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত


শব্দার্থ ও টীকা

  • বিভীষণ –    রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর।
  • অরিন্দম      –    অরি বা শত্র“কে দমন করে যে।
  • পশিল –    প্রবশে করল।
  • রক্ষঃপুরে     –    রাক্ষসদের পুরী বা নগরে।
  • তাত   –    পিতা।
  • নিকষা –    রাবণের মা।
  • কুম্ভকর্ণ      –    রাবণের মধ্যম সহোদর।
  • বাসববিজয়ী    –    দেবতাদের রাজা ইন্দ্র বা বাসবকে জয় করেছে যে,
  • তস্কর –    চোর।
  • গঞ্জি   –    তিরস্কার কবি।
  • ভঞ্জিব আহবে –    যুদ্ধদ্বারা বিনষ্ট করব।
  • আহবে –    যুদ্ধে।
  • ধীমান্  –    ধীসম্পন্ন।
  • রাঘব –    রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
  • রাঘবদাস     –    রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ।
  • রাবণি  –    রাবণের পুত্র।
  • স্থাপিলা বিধুরে বিধি
  • স্থাণুর ললাটে   –    বিধাতা চাঁদকে আকাশে নিশ্চল করে স্থাপন করেছেন।
  • বিধু   –    চাঁদ।
  • রক্ষোরথি     –    রক্ষকুলের বীর।
  • রথী   –    রথচালক।
  • শৈবালদের ধাম      –    পুকুর।
  • শৈবাল –    শ্যাওলা।
  • মৃগেন্দ্র –    পশুরাজ সিংহ।
  • কেশরী –    কেশযুক্ত পশুরাজ সিংহ।
  • মহারথি      –    মহাবীর।
  • মহারথীপ্রথা   –    শ্রেষ্ঠ বীরদের আচরণ প্রথা ।
  • সৌমিত্রি      –    লক্ষ¥ণ।
  • নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার     –    লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থান।
  • প্রগল্ভে      –    নির্ভীক চিত্তে।
  • নন্দন কানন   –    স্বর্গের উদ্যান।
  • মহামন্ত্র-বলে যথা
  • নম্রশিরঃ ফণী  –    মন্ত্রপূত সাপ যেমন মাথা নত করে।
  • লক্ষি   –    লক্ষ করে।
  • ভর্ৎস –    তিরস্কার করছ।
  • মজাইলা      –    বিপদগ্রস্ত করলে।
  • বসুধা –    পৃথিবী।
  • রুষিলা –    রাগান্বিত হলো।
  • মন্দ্র   –    শব্দ, ধ্বনি।
  • জীমূতেন্দ্র     –    মেঘের ডাক বা আওয়াজ।
  • জলাঞ্জলি      –    সস্পূর্ণ পরিত্যাগ।
  • দুর্মতি –    অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি।

কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ

  1. এতক্ষণে    অরিন্দম /   কহিলা   বিষাদে        (৮ + ৬)
  2. জানিনু   কেমন আসি /   ল²ণ  পশিল            ( ৮ + ৬)
  3. রক্ষপুরে!   হায়,  তাত /  উচিত   কি তব        (৮ + ৬)
  4. এ কাজ?    নিকষা সতী /   তোমার   জননী!    (৮ + ৬)

বিশ্লেষণ : “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কাব্যাংশটি ছন্দ বিশ্লেষণে দেখা যায় এটি ১৪ মাত্রার প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। পংক্তির রচনান্তে মিল না থাকায় এর পর্ব অমিত্রাক্ষর ছন্দের অভিধান পেয়েছে। এ প্রতিটি পংক্তি বা চরণ ৮ ও ৬ মাত্রায় দুটি পর্বে বিভক্ত হয়ে মোট ১৪টি মাত্রায় রচিত হয়েছে। এখানে যে শুধু অন্ত্যমিল রক্ষিত হয়নি তাই নয়, বিরামচিহ্ন ব্যবহারেও স্বাধীন হয়েছেন কবি। তিনি বিরামচিহ্ন ব্যবহারে বক্তব্যের অর্ধেকে বা স্পষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যার ফলে ভাব প্রকাশের প্রবহমানতা কবিতাংশে ছন্দের বিশেষ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।

ছন্দ : “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কাব্যাংশটি ১৪ মাত্রার অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রথম পংক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পংক্তির চরণান্তের মিলনহীনতার কারণে এ ছন্দ ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ নামে সমধিক পরিচিত। এ কাব্যাংশের প্রতিটি ১৪ মাত্রায় এবং (৮ + ৬) মাত্রার দুটি পর্বে বিন্যস্ত। লক্ষ করার বিষয় যে, এখানে দুই পংক্তির চরণান্তিক মিলই কেবল পরিহার করা হয়নি, যতিপাত বা বিরামচিহ্নের স্বাধীন ব্যবহারও হয়েছে বিষয় বা বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে। এ কারণে ভাবপ্রকাশের প্রবহমানতাও কাব্যাংশটি ছন্দের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।

পয়ার ছন্দ; ও অমৃত্রাক্ষর ছন্দ!

মধুসূদন – পূর্ব হাজার বছরের বাংলা কবিতার ছন্দ ছিল পয়ার। একটি চরণের শেষে আর একটি চরণের মিল ছিল ঐ ছন্দের অনড় প্রথা। মধুসূদন বাংলা কবিতার এ প্রথাকে ভেঙ্গে দিলেন। তিনি প্রথম চরণের সঙ্গে দ্বিতীয় চরণের মিল রক্ষা করেননি বলেই তাঁর প্রবর্তিত ছন্দকে বলা হয় ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’। তবে এটি বাংলা অক্ষরবৃত্ত ছন্দেরই নবরূপায়ণ। তাঁর শ্রেষ্ঠতম কীর্তি মেঘনাদ বধ কাব্যে’ এ ছন্দের সফল প্রয়োগ ঘটে। এ ছন্দে আরও কিছু নতুন বিষয় তিনি যোগ করেছিলেন বলে একে বলা হয় “১৪ মাত্রার অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দ”।


কবিতার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিশ্লেষণ

রাবন: দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কার রাজা, যিনি পুরাণের রাক্ষসরাজ (বাল্মীকি-রামায়ণে খলনায়ক কিন্তু মধুসূদন-মেঘনাদবধ মাহাকাব্যে নায়ক), মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত, রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, কনক লঙ্কা-মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত, রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, কনক লঙ্কা-রাজ্য।

কুম্ভকর্ণ:     রাজা রাবণের মধ্যম ভাই, শূলিশম্ভুনিভ

বিভীষণ:     রাজা রাবনের ছোই ভাই, তাত, পিতৃতুল্য, গুরু জন, রথী রাবণ-অনুজ, রামের ভক্ত, রাম-রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী, রাঘবদাস, মেঘনাদের চাচা, পিতৃব্য, রক্ষোরথি, প্রভু, বীরকেশরী, বিজ্ঞতম তুমি, মহারথী, আমি, রাক্ষসরাজানুজ, রক্ষোবর, দূর্মতি।

নিকষা: রাবণের মা, সতী।

বীরবাহু:     রাজা রাবণের পুত্র, যুদ্ধে মুত্যু হয়।

মেঘনাদ:     রাজা রাবণের কনিষ্ঠ পুত্র, অরিন্দম, বাসববিজয়ী, ধীমান, রাবণি, দাসেরে, অজ্ঞ দাস, ভ্রাতৃ-পুত্র, বৎস, রাবণ-আত্মজ, বাসবত্রাস, দাসে।

রাম:  রাজা রামচন্দ্র, রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান (বাল্মীকি-রামায়ণের নায়ক, মধুসূদন-মেঘনাবধ, মহাকাবব্যে খলনায়ক ও হীনরূপে উপস্থাপিত), রাঘব, অধম রাম।

লক্ষণ: রামের কনিষ্ঠ ভাই, তস্কর, রামানুজ, শৃগাল, ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, সৌমিত্রি কুমতি, দৈত্য, দুরাচার দৈত্য, নরাধম, বনবাসী, দম্ভী, চণ্ডাল।

নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার: রক্ষঃপুর, লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞাস্থান।


জেনে রাখা দরকার

  • ১.   অরিন্দম-মেঘনাদের উপাধি।
  • ২.   রক্ষ:পুর বলতে বুঝানো হয়েছে-লঙ্কাপুরকে।
  • ৩.   মেঘনাদের রাজ্যের নাম-লঙ্কাপুর।
  • ৪.   মেঘনাদের বাবার নাম-রাবণ।
  • ৫.   মেঘনাদের চাচার নাম-বিভীষণ।
  • ৬.   রাবনের মায়ের নাম-নিকষা।
  • ৭.   রামানুজ হলো ল²ণ-(রামের ছোট ভাই)
  • ৮.   লক্ষণের মায়ের নাম সুমিত্রা।
  • ৯.   সৌমিত্রি বলতে বুঝানো হয়েছে-ল²ণকে।
  • ১০.  রাঘবদাস হল-বিভীষণ।
  • ১১.  প্রফুল­ কমলে বাস করে-কীট।
  • ১২.  রাবণ-অনুজ হল-বিভীষণ।
  • ১৩. রাবণ আত্মজ হল-মেঘনাদ।
  • ১৪.  সর্বদা পাপ থেকে বিরত থাকে-দেবতারা।
  • ১৫.  বীরেন্দ্র বলী’ বলা হয়েছে- মেঘনাদকে।
  • ১৬.  রাক্ষসরাজ হল-রাবণ।
  • ১৭.  রাক্ষরাজানুজ হল-বিভীষণ।
  • ১৮.  জগতে বিখ্যাত-বিভীষণ

সারমর্ম

মেঘনাবদ কাব্যের ষষ্ঠ সর্গে লক্ষণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসী বীর মেঘনাদের। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্যে স্বর্ণালঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবন শত্র“র উপুর্যপরি দৈব কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবন পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসাবে বরণ করে নেন।

যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইস্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। মায়া দেবীর আনুকুল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায় লক্ষণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশে সমর্থ হয়। কপট লক্ষণ নিরন্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষণের অনুপ্রবেশ যে মায়াবলে সম্পন্ন হয়েছে বুঝতে বিলম্ব ঘটেনা তার। ইতিমধ্যে লক্ষণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করে লক্ষণের কাছে। কিন্তু লক্ষণ তাকে সময় না দিয়ে আক্রমণ করে। এ সময়ই অকসস্মাৎ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারের দিকে চোখ পড়ে মেঘনাদেব দেখতে পায় বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণকে। মুহুর্তে স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। খুল­ুতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে পতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেই নাটকীয় ভাষাই বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ অংশে সংকলিত হয়েছে। এ অংশে মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা। জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরুত্বের কথা যেমন এখানে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত যড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বলে।


পাঠ বিশ্লেষণ

  1. “এতক্ষণে”- অরিন্দম কহিলা বিষাদে,
  2. “জানিনু কেমনে আসি ল²ণ পশিল
  3. রক্ষপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব
  4. এ কাজ? নিকষা সতী তোমার জননী!
  5. সহোদর রক্ষ:শ্রেষ্ঠ! শুলিশম্ভুনিভ
  6. কুম্ভবর্ণ! ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী!
  7. নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
  8. চণ্ডালে বসাও আনি বাজার আলয়ে?

সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রূদ্ধদ্বারা নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করল ল²ণ। তার এই অনুপ্রবেশের অন্যতম সহায়ক রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর বিভীষণ। সে-ই হয়তো ল²ণকে পথ দেখিয়েছে। এই ভেবে মেঘনাদ বিস্মিত ও মর্মাহত হলেন। বিভীষণের এহেন কাজ করা কি উচিত হয়েছে? সত্যি নিকষা যার মা, তার পক্ষে এরকম একটি হীন করা কী করে সম্ভব? তাছাড়া সেখানে রয়েছে রাবণের মধ্যম সহোদর কুম্ভবর্ণ, যে কিনা শুলপাণি মহাদেবের মতো ; আর যেখানে তার ভাইয়ের পুত্র দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে জয় করেছে, সেখানে বিভীষণ এমনটি কী করে করল? মেঘনাদের মনে প্রশ্ন জাগল- এত কিছুর পরও শত্র“কে পথ চিনিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলো? চোরকে প্রশ্রয় দিল? চÐালের মতো নিম্নশ্রেণির কাউকে এনে রাজকক্ষে স্থান দিল?

  1. কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরুজন তুমি
  2. পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,
  3. পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে
  4. লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঙ্গিব আহবে।

কিন্তু তা হোক, তবু তাকে সে অবহেলা করে না। কারণ গুরুজনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ তার। কারণ সে পিতৃতুল্য। সে অস্ত্রাগারে গিয়ে যুদ্ধের সাজ গ্রহণ করে আসবে বলে তাকে দ্বারা থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করল। কারণ সে রামের অনুজ ল²ণকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে চায়। তাঁর সাথে যুদ্ধ করে, তাঁকে পরাজিত করে লঙ্কার সমস্ত কলঙ্ক কালিমা মুছে দিতে চায়।

  1. উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃথা এ সাধনা,
  2. ধীমান। রাঘবদাস আমি ; কী প্রকারে
  3. তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতেৎ
  4. অনুরোধ?” উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-
  5. “হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!

মেঘনাদের এসব কথা এবং অনুরোধ শুনে বিভীষণ জবাব দিল- ‘না তা হয় না। তোমার এ চেষ্টা বৃথা, তোমার এ সাধনা ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।’ কারণ তোমার অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে আমি কি তার বিরুদ্ধে কাজ করব? তখন রাবণের পুত্র রাবণি(মেঘনাদ) কাতর সুরে বলল, হে শ্রদ্ধেয় পিতৃব্য তোমার এক কথা শোনার চেয়ে আমার মরণ ভালো ছিল, তোমার কথায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

  1. রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে
  2. আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!
  3. স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে ;
  4. পড়ি কি ভুতলে শশী যান গড়াগড়ি
  5. ধুলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে
  6. কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে?

তুমি রাঘবের  দাস? এ কথা তুমি মুখে আনলে কী করে? পিতৃব্য বলো সে কথা তোমার এ দাসেরে। বিধাতা চাঁদকে আকাশে যে নিশ্চল করে স্থাপন করেছেন তাই বলে চাঁদ কি ধুলায় গড়াগড়ি যায়? তাহলে তুমি কী করে এমন হলে, তুমি রক্ষকুলের বীর হয়ে কী করে নিজের পরিচয়কে ভুলে গেলে। তুমি কি ভাবতে পার না কোন মহাকুলে তোমার জন্ম ; তোমার উচ্চবংশ পরিচয়?

  1. কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে
  2. করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ- কাননে
  3. যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে,
  4. শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,
  5. কবে, হে বীরকেশরি, সম্ভাষে শৃগালে
  6. মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,
  7. অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।

আর কে সে অধম রাম, তা কি তুমি জান না? রাজহাঁস কী কখনো কাদা, ময়লা, ঘোলা জলে যায়, সাঁতার কাটে? সে তো স্বচ্ছজলে সরোবের জলকেলি করে বেড়ায়। সে তো বদ্ধ জলাশয়ে শেওলার মধ্যে ঘোরাঘুরি করে না। পশুরাজ সিংহকে কী কখনও দেখেছ শিয়ালের সাথে সখ্য গড়ে তুলতে কিংবা সম্মানে তার কাছে মাথা নত করতে? সিংহরাজের কেশর তার আভিজাত্যের সম্মানের রাজার চিহ্ন বহন করে, শিয়ালের তা নেই, সে সিংহের দাস। আমি জ্ঞানহীন মূর্খ, তোমার আজ্ঞাবহ, কিন্তু তুমি তো সর্বজ্ঞানে মহাজ্ঞানী, গুণী। তোমার তো কিছু অজানা নয়।

  1. ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, ল²ণ; নহিলে
  2. অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?
  3. কহ,মহারথী, এ কি মহারথী প্রথা?
  4. নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে
  5. এ কথা ! ছাড়হ পথ ; আসিব ফিরিয়া
  6. এখনি! দেখবি আজি, কোন দেববলে,
  7. বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি!
  8. দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ,
  9. রক্ষ:শ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কী দেখি
  10. ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে?

লক্ষণ তো ছোট মনের হীন মানসিকতাসম্পন্ন এক নরাধম। তা না হলে অস্ত্রহীন, যুদ্ধের বেশহীন অপ্রস্তুত আমাকে তার সাথে যুদ্ধ করতে বলে? হে মহাবীর, তুমিই বলো- নিরস্ত্রের সাথে যুদ্ধ করা কি কোন বীরের আচরণ-প্রথা। একজন শিশুও খুঁজে পাবে না এ লঙ্কাপুরে যারা এহেন কথা শুনে হাসবে না। কাজেই আমার কথা শোন, পথ ছেড়ে দাও, আমাকে যেতে দাও, আমি এখনই ফিরে আসব। তখন সুমিত্রার সন্তান ল²ণকে তার কুমোহ মিটিয়ে দেব। রক্ষকুলের হে বীর, দেব-দৈত্যদের সঙ্গে যুদ্ধ তো তুমি স্বচক্ষে দেখেছ। সেখানকার পরাক্রমও তুমি জানো। তাহলে দুর্বল মানবকে দেখে ভয়ে কি পালাবে তোমার এ আজ্ঞাবহ?

  1. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগল্ভে পশিল
  2. দম্ভী ; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
  3. তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে
  4. বনবাসী! হে বিধাতঃ নন্দন-কাননে
  5. ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল­ কমলে
  6. কীটবাস? কহ তাত, সহিব কেমনে?
  7. হেন অপমান আমি, – ভ্রাতৃ-পুত্র তব?

লঙ্কাপুরীর তীর্থস্থান এই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নির্ভীকচিত্তে, যে অহংকার সে করছে, তুমি এই আজ্ঞাবহ দাসকে অনুমতি কর, সেই নরাধমকে উপযুক্ত শান্তি দান করতে। তোমার এই অন্ত:পুরে জন্ম নিয়ে আজ এমনি নির্বাসন দণ্ড, বনবাস। হে প্রভু, এই শ্রীমণ্ডিত অতি মনোরম করে সাজানো বাগানে ভুল করে কেন এই দুরাচার দানবকে নিয়ে এলে। এ কি অপূর্ব সুন্দর বিকশিত ফুলের মধ্যে কীটের মতো নয়? বলো, কী করে আমি তো মেনে নেব? তোমারই ভাইয়ের পুত্র হয়ে কী করে সহ্য করব আমি এই অপমান?

  1. তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?”
  2. মহামন্ত্র- বলে যথা নম্রশির: ফণী,
  3. মলিনবদন সাজে, উত্তরিলা রথী
  4. রাবণ- অনুজ, লক্ষি বারণ-আত্মজে ;
  5. “নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা র্ভৎস মোরে
  6. তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা
  7. এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি!

আর রক্ষোকুলের বীর হয়ে তুমিও কীভাবে তা সহ্য করছ? মহামন্ত্র-বলে ফণা তোলা সাপ যেমন মাথা নত করে, তুমিও তাহলে তেমনি করে মাথানত করেছ? এসব কথা শুনে রক্ষ:কুল বীর রথী বিভীষণ তখন মলিন মুখে লজ্জাবনত হয়ে মেঘনাদকে বলল- এসবের জন্য আমি দায়ী নই। আমাকে অযথাই দোষারোপ করছ ; বৃথাই তিরস্কার করছ বাছা। তোমার নিজের কর্ম-দোষেই তুমি আজ এমন বিপদগ্রস্ত। এ অবস্থার জন্য তুমি নিজেই বেশি দায়ী।

  1. বিরত সতত পাপে দেবকূল; এবে
  2. পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি
  3. বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
  4. রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী
  5. তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?”

মনে রেখো, দেবতারা সব সময় পাপমুক্ত। লঙ্কাপুরী এখন পাপে পূর্ণ। ঝড়ঝঞ্জায় পৃথিবীর মতো ডুবতে বসেছে লঙ্কাপুরী, ভয়াল স্রোতে সব তছনছ হয়ে যাচ্ছে, ধ্বংসের মুখে আজ লঙ্কা নগরী। রঘুবংশীয় রামচন্দ্রের পদতলে যেহেতু আমি আশ্রয় লাভ করেছি; সেহেতু আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি না। আর অন্যের দোষ মাথায় নিয়ে কে বিপদগ্রস্ত হতে চায় বলো?

  1. রুষিলা বাসবত্রাস! গম্ভীরে যেমতি
  2. নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি,
  3. কহিলা বীরেন্দ্র বলী, – “ধর্ম পথগামী,
  4. হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে
  5. তুমি ; – কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,
  6. জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্বম জাতি- এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি?

বাসবের ভয়ের কারণে মেঘনাদ তা শুনে সে ক্ষুব্ধ হলো। সেই ক্ষোভ গভীর রাতে স্তব্ধ পরিবেশ ভেঙ্গে আকাশে মেঘের গর্জনের মতো। বীর তখন আক্রোশে ধর্মপথানুসারী রাক্ষসরাজের অনুজকে বললেন তুমি জগতে বিখ্যাত, কোন ধর্মানুসারে তুমি এমন কথা বলছ, এই আজ্ঞাবহ দাসকে একবার শোনাও। আত্মীয়ের পরিচয়, সহোদরের বন্ধন, জাত-ধর্ম  এ সবকিছুই কি জলাঞ্জলি দিলে?

  1. শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি
  2. পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
  3. নির্গুণ স্বজন শ্রেয় : পর: পর: সদা!
  4. এ শিক্ষা, হে রেক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?
  5. কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,
  6. হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে?
  7. গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি। ”

শাস্ত্রের কথাই সত্যি, গুণবান হলেও পর কখনও আপন হয় না। গুণহীন, মূর্খ হলেও আপনজন আপনজন-ই থাকে। তাইতো গুণবান পরজন থেকে স্বজন উত্তম। কেননা গুণবান হলেও পর সর্বদা পরই থেকে যায়। এমন শিক্ষা তুমি কোথা থেকে লাভ করলে হে রক্ষকুলের বীর? অথচ দেখ, আমি অযথাই তোমাকে তিরস্কার করছি তাদের সাথে থাকার জন্য। হে মান্যবর বীর, পিতৃব্য, তাই যদি হয়, তবে কেন শিখবে না বর্বরতা। চিন্তা যার অসৎ, হীন যার মানসিকতা, সে তো নিকৃষ্ট পথেই ধাবিত হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক, আর সেটাই তো সত্যি।


রূপক অর্থ

ঊনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাল্মীকি-রামায়নকে নবমূল্য দান করেছেন এ কাব্যে। মানবকেন্দ্রিকতাই রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সারকথা। ঐ নবজাগরণের প্রেরণাতেই রামায়ণের রাম-ল²ণ মধুসূদনের লেখনীতে হীনরূপে এবং রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত। দেবতাদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত রাম-ল²ণ নয়, পুরাণের রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদের প্রতিই মধুসূদনের মমতা ও শ্রদ্ধা।


গুরুত্বপূর্ণ লাইন

  • “এতক্ষণে”-অরিন্দম কহিলা বিষাদে।
  • নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
  • পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,
  • “হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে।
  • আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
  • প্রলয়ে যেমতি বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
  • গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।

গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক)

  • ১.‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটি নেয়া হয়েছে – মেঘনাবধ কাব্যের ৬ষ্ঠ সর্গ ‘বধো’ (বধ) থেকে।
  • ২. মেঘনাদবধ কাব্যের মোট সর্গসংখ্যা – ৯টি।
  • ৩. ভ্রাতা ক্ম্ভুকর্ণ  ও জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর রাবণ তার যুদ্ধের সেনাপতি করেন – কনিষ্ঠ পুত্র মেঘনাদকে।
  • ৪. যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ মনস্থির করল – নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে
  • ৫. শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ল²ণ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় – মায়াদেবীর আনুকূল্যে।
  • ৬. শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ল²ণ নিকুম্ভিরা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় – রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়।
  • ৭. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ল²ণ মেঘনাদের কাছে প্রার্থনা করে- যুদ্ধের।
  • ৮. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে মেঘনাদ ল²ণের কাছে প্রার্থনা করে- যুদ্ধসাজ গ্রহণ করতে সময় দেয়ার জন্য।
  • ৯. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারে মেঘনাদ দেখতে পায়- বিভীষণকে
  • ১০. এ কবিতায় মাতৃভাষা প্রতি প্রকাশিত হয়েছে – ভালোবাসা।
  • ১১. এ কবিতায় বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে – ঘৃণা।
  • ১২. এ কবিতায় জ্ঞাতিত্ব, ভাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে – নীচতা ও বর্বরতা বলে।
  • ১৩. রাম রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী – বিভীষণ।
  • ১৪. ‘গঞ্জি’ শব্দের অর্থ – তিরষ্কার করি।
  • ১৫. ‘নন্দন কানন’ শব্দের অর্থ – স্বর্গের উদ্যান।
  • ১৬. ‘মজাইলা’ শব্দের অর্থ – বিপদগ্রস্ত করলে।
  • ১৭. ‘বসুধা’ শব্দের অর্থ – পৃথিবী।
  • ১৮. ‘তেঁই’ শব্দের অর্থ – তজ্জন্য/সেহেতু।
  • ১৯. ‘মন্দ্র’ শব্দের অর্থ – শব্দ/ধ্বনি।
  • ২০. ‘জীমৃতেন্দ্র’ শব্দের অর্থ – মেঘের ডাক বা আওয়াজ।
  • ২১. ‘বলী’ শব্দের অর্থ – বলবান/ বীর।
  • ২২. ‘জলাঞ্জলি’ শব্দের অর্থ – সম্পূর্ণ পরিত্যাগ।
  • ২৩. ‘নীচ’ শব্দের অর্থ – হীন/নিকৃষ্ট/ ইতর।
  • ২৪. ‘দুর্মতি’ শব্দের অর্থ – হীন/নিকৃষ্ট/ ইতর।
  • ২৫. ‘পশিল’ শব্দের অর্থ – প্রবেশ করল।
  • ২৬. শাস্ত্রমতে গুণহীন হলেও শ্রেয় – নির্গুণ স্বজন।
  • ২৭. রথ চালনার মাধ্যমে যুদ্ধ করে যে তাকে বলে – রথী।
  • ২৮. লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থানের নাম – নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার।
  • ২৯. তাত শব্দের আক্ষরিক অর্থ – পিতা।
  • ৩০. কবিতায় ‘তাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে- পিতৃব্য / চাচা অর্থে।
  • ৩১. অরি বা শত্র“কে যে দমন করে তাকে বলা হয় – অরিন্দম।
  • ৩২. মেঘনাদ লঙ্কাকে তুলনা করেছে – প্রফুল­ কমলের সাথে।
  • ৩৩. মেঘনাদ লঙ্কায় ল²ণের প্রবেশকে তুলনা করেছে- প্রফুল­ কমলে কীটবাসের সাথে।
  • ৩৪. ‘নহি দোষী আমি, বৎস ; বৃথা ভর্ৎস মোরে’- মেঘনাদের কথার প্রেক্ষিতে বিভীষণ একথাটি বলেছে – মলিনবদনে।
  • ৩৫. ‘পরদোষে কে চাহে মজিতে?’- এখানে ‘পরদোষে’ দ্বারা বিভীষণ বুঝিয়েছে – রাবণের দোষের কথা।
  • ৩৬. লঙ্কাপুরী পরিপূর্ণ – পাপ দ্বারা।
  • ৩৭. বিভীষণের নিজ পক্ষ ত্যাগ করে রামের পক্ষ অবলম্বন করাকে মেঘনাদ আখ্যায়িত করেছে – বর্বরতা বলে।
  • ৩৮. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটিতে যতি চিহ্নের ব্যবহার হয়েছে-স্বাধীনভাবে/ বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে।
  • ৩৯. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটি ছন্দের বিশেষ লক্ষণ – ভাব প্রকাশের প্রবহমানতা।
  • ৪০. পিতৃব্যের ষড়যন্ত্রকে মেঘনাদ আখ্যায়িত করেছে – নীচতা ও বর্বরতা হিসেবে।

ঐকতান-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঐকতান-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


উৎস পরিচিতি :

“ঐকতান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা। কবির মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যা ‘প্রবাসী’ তে কবিতাটি ‘ঐকতান’-নামে প্রথম প্রকাশিত হয়।

মূলবাণী/মর্মবাণী/উপজীব্য বিষয়  :   কবির আত্মসমালোচনা ও অপূর্ণতার স্বত:স্ফূর্ত স্বীকারোক্তি


শব্দার্থ ও টীকা

  • বিপুলা –    বিশাল প্রশস্ত।
  • স্বরসাধনা     –    এখানে সুর বা সংগীত সাধনা বোঝানো হয়েছে।
  • ঐকতান      –    বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট সুর, সমস্বর।
  • এসো কবি অখ্যাতজনের নির্বাক্ মনের’  –    রবীন্দ্রনাথ এখানে সেই অনাগত কবিকে আহ্বান করেছেন।
  • রস   –    এখানে সাহিত্যরস বা শিল্পরস বোঝানো হয়েছে।
  • উদ্বারি –    ওপরে বা ঊর্ধ্বে প্রকাশ করে দাও।
  • সাহিত্যের ঐকতান সংগীত সভায় –    সাহিত্যে জীবনের সর্বপ্রান্ত স্পর্শী সমস্বর বা ঐকতান।
  • নতশির স্তব্ধ যারা বিশ্বের বিশ্বের সম্মুখে  –    দুঃখ-সুখ সহ্য করা নির্বাক মানুষ

কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ :

  1. চাষী খেতে চালাইছে হাল,               (১০)
  2. তাঁতি বসে তাঁত বোনে,/জেলে ফেলে জাল    (৮ + ৬)
  3. বহুদূর প্রসারিত/ এদের বিচিত্র কর্মভার       (৮ + ১০)
  4. তারি পরে ভর দিয়ে/ চলিতেছে সমস্ত সংসার   (৮ + ১০)

বিশ্লেষণ : ‘ঐকতান’ কবিতাটি সমিল প্রবহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। উপরে কবিতাংশটির চারটি পংক্তির ছন্দ বিশ্লেষণ দেখানো হয়েছে। প্রথম পংক্তি এক পর্বের মাত্রা সংখ্যা ১০, দ্বিতীয় পংক্তি দুই পর্বে। বিভক্ত, মাত্রা ৮ ও ৬। তৃতীয় ও চতুর্থ পংক্তিতে দুটি করে পর্ব ও মাত্রা ৮ ও ১০। কবিতার গতি ধীর লয়ের। ‘ঐকতান’ কবিতার অধিকাংশ পংক্তি ৮ + ৬ এবং ৮ + ১০ মাত্রার পর্বে বিভক্ত। এছাড়া নিম্নোক্ত পংক্তিতে ৯ মাত্রা

প্রকৃতির ঐকতানস্রোতে আবার, আমার কবিতা,/জানি আমি,- এ পংক্তিতে ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব ও ৪ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব ব্যবহৃত হয়েছে।

ছন্দ : কবিতাটি সমিল প্রবহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। কবিতাটিতে ৮ + ৬ এবং ৮ + ১০ মাত্রার পর্বই অধিক। এতে কখনো কখনো ৯ মাত্রার অসমপর্ব এবং ৩ ও ৪ মাত্রার অপূর্ব পর্ব ব্যবহৃত হয়েছে।


সারমর্ম:

দীর্ঘ জীবন পরিক্রমের শেষ প্রান্তে পৌছে স্থিতপ্রজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ পেছনে ফিরে তাকিয়ে সমগ্র জীবনের সাহিত্য সাধনার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব খুঁজেছেন ঐক্যতান কবিতায়। তিনি অকপটে নিজের সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতার কথা ব্যক্ত করেছেন এখানে। জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কবি অনুভব করেছেন নিজের অকিঞ্চিৎকরতা ও ব্যর্থতার স্বরূপ। কবি বুঝতে পেরেছেন এই পৃথিবীর অনেক কিছুই তার অজানা ও অদেখা রয়ে গেছে। বিশ্বের বিশাল আয়োজন তার মনজুড়ে ছিল কেবল ছোট একটি কোন। তবু বিপুলা এ পৃথিবীর সর্বত্র তিনি প্রবেশের দ্বার খুঁজে পাননি। ঐকতান কবিতায় যুগপৎ কবির নিজের এবং তাঁর সমকালীন বাংলা কবিতার বিষয়গত সীমাবদ্ধতার দিক উম্মোচিত হয়েছে।


পাঠ বিশ্লেষণ

  • বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
  • মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
  • কত- না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু
  • রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল বিশ্বের আয়োজন ;
  • মন মোর জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারি এক কোণ।

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে কবি উপলদ্ধি করেছেন- বিশাল বিশ্বের কতটুকু জানা হলো। বিশ্বজুড়ে যে দেশ-নগর, রাজধানী, মানুষের নানা কীর্তি, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, নদী-মরুভূমি, অচেনা-অজানা, জীবজন্তু গাছপালা, তার কতটুকুইবা তিনি জেনেছেন। বিশাল বিশ্বের এই বিরাট আয়োজনের সবই তো তাঁর অজানা। তাঁর জানা অতি সামান্য। বিশাল বিশ্বের আয়োজনের মধ্যে কবির মন জুড়ে তার অতি সামান্য অংশই পড়ে থাকে। আর সব তাঁর জানার সীমাবদ্ধ পরিধির বাইরে পড়ে থাকে।

  • সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
  • অক্ষয় উৎসাহে
  • যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
  • কুড়াইয়া আনি।
  • জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
  • পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালদ্ধ ধনে।

অজানার অতৃপ্তি কবিকে ক্ষুদ্ধ করে; তিনি জগতের নানা দেশ, নগর, রাজধানী, কীর্তি, বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির নানা কিছু জানার জন্য অতি উৎসাহে ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েন। জগৎ সম্পর্কে যেখানে যা পান, কথা, চিত্রময় বর্ণনা সব কুড়িয়ে আনেন।  অজানা, অচেনার যে অজ্ঞানতা তার মধ্যে রয়েছে তা ঐসব কুড়ানো ধনে পূরণ করে নিতে চান।

  • আমি পৃথিবীর কবি, যেথা তার যত উঠে ধ্বনি
  • আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি
  • এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক,
  • রয়ে গেছে ফাঁক।

তিনি পৃথিবীর কবি। তাই পৃথিবীজুড়ে যেখানে যত ধ্বনি, সুর উঠে, তা তার বাঁশির সুরে বেঁধে জগৎময় সাড়া জাগাতে চান। সেজন্য তিনি সাধনা করেন। কিন্তু তাঁর সেই স্বরসাধনায় যে ডাক উঠেছিল তা বহুদূর পৌঁছতে পারেনি। সেখানে ফাঁক রয়ে গেছে।

  • প্রকৃতির ঐকতানস্রোতে
  • নানা কবি ঢালে গান নানা দিক হতে
  • তাদের সবার সাথে আছে মোর এইমাত্র যোগ
  • সঙ্গ পাই সবাকার, লাভ করি আনন্দের ভোগ ;

সেই স্রোতের সাথে পৃথিবীর বহু বিচিত্র প্রকৃতির আপন ছন্দ সুরের স্রোত এসে মেশে। সেই সৌন্দর্যে অবগাহন করে, মুগ্ধ হয়ে নানা কবি নানা বিষয়ে গান রচনা করে, নানাভাবে সেই ঐকতান স্রোতে যোগ দেয়। তাদের সাথে কবির যোগ আছে। তিনি তাদের সঙ্গ লাভ করেন। প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে তাদের মনে যে আনন্দ জাগে, তা কবিকেও ছুঁয়ে যায়, সতেজ ও প্রাণিত করে। কবি তখন ঐসব কবির গান এবং প্রকৃতির বিচিত্র সুরের বন্ধনের ঐকতানে মুগ্ধ হন।

  • পাই যে সর্বত্র তার প্রবেশের দ্বার ;
  • বাধা হয়ে আছে মোর বেড়াগুলি জীবনযাত্রার।

কবি সব জায়গায় যেতে পারেননি। সবার সাথে মিশতে পারেননি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা কিছু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

  • চাষী ক্ষেতে চালাইছে হাল,
  • তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল
  • বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
  • তার ‘পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।

সাধারণভাবে তিনি চাষীকে দেখেছেন মাঠে জমি চাষ করে ফসল ফলাতে, তাঁতিকে তাঁত বুনতে, জেলেকে জাল ফেলে মাছ ধরতে। জগতের বিচিত্র কর্মভারে তাদের যে অকৃত্রিম যোগাযোগ কবি তা অন্তর দিয়ে অনুভব করেছেন। তাঁদের শ্রমের উপর ভর করে কীভাবে জগৎ সংসার চলছে, তা তিনি বুঝতে পেরেছেন।

  • অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
  • সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।
  • মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গনের ধারে;
  • ভিতরে প্রবেশ করি সেই শক্তি ছিল না একেবারে।

সমাজে তাদের সেই শ্রমের যে মর্যাদা হচ্ছে না তাও তিনি লক্ষ করেছেন। কিন্তু তিনি সেই সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসে থাকার দলের একজন বলে সংর্কীণতায় আবদ্ধ থেকেছেন। মাঝে মাঝে তাদের পাড়ায়, তাদের আঙ্গিনা পর্যন্ত গেলেও  ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন নি। সমাজ সংস্কার আভিজাত্যবোধ কবিকে বাইরে থেকে দুর্বল করে দিয়েছে। মনের শক্তি সমাজের শক্তির কাছে মার খেয়েছে।

  • জীবনে জীবন যোগ করা
  • না হলে, কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পশরা।
  • তাই আমি মেনে নিই সে নিন্দার কথা
  • আমার সুরের অপূর্ণতা।
  • আমার কবিতা, জানি আমি,
  • গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সর্বত্রগামী।

কবি জানেন এইসব চাষী, তাঁতি, জেলেদের জীবনের সাথে জীবন যোগ করা না গেলে তাঁর জীবরে সমস্ত আয়োজন কৃত্রিম হিসেবে বিবেচিত হয়ে ব্যর্থ হয়ে যাবে। কবির এই উপলদ্ধি কবিকে ধৈর্যশীল করে। তাই তিনি লোকের নিন্দা মেনে নেন। তার সুরের অপূর্ণতার কথা, প্রকাশ করে ব্যর্থতা স্বীকার করেন। তাঁর কবিতা সম্পর্কে তিনি অবগত। সেগুলো বিচিত্র পথ পেলেও সব জায়গায় যেতে পারেনি ; সীমাবদ্ধতায় থেকেছে। তা তারই কারণে।

  • কৃষাণের জীবনের শরিক যে জন,
  • কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন,
  • যে আছে মাটির কাছাকাছি,
  • সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি।

কবি নিজের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা স্বীকার করে, লোকের নিন্দা মেনে নিয়ে যোগ্য ও অব্যর্থ কবির বাণীর জন্য অপেক্ষা করেন। যে কবি মাটির কাছাকাছি মানুষের বাণীকে চিরন্তন করে তুলবেন, যে কৃষাণের জীবনের শরিক, তার কর্ম দিয়ে তাদের আত্মীয়তা অর্জন করেছেন।

  • এসব কবি অখ্যাতজনের
  • নির্বাক মনের;
  • মর্মের বেদনা যত করিয়ো উদ্ধার;
  • প্রাণহীণ এ দেশেতে গানহীন যেথা চারিধার
  • অবজ্ঞার তাপে শুস্ক নিরানন্দ সেই মরুভূমি
  • রসে পূর্ণ করি দাও তুমি।
  • অন্তরে যে উৎস তার আছে আপনারই
  • তাই তুমি দাও তো উদ্বারি।

কবি অখ্যাতজনের কবিকে আহ্বান করেন- ভাষাহীন, নির্বাকের মনের বেদনা বুঝতে। তাদের মর্মের জ্বালা অনুধাবন করতে। যারা প্রাণহীন, গানহীন ; যারা অবজ্ঞায়- অবহেলায় শুস্ক -নিরানন্দ। তাদের প্রাণে আশা-স্বপ্ন, আনন্দ জাগানোর জন্য কবি অখ্যাতজনের কবিকে স্মরণ করেন। সে এসে এসব মানুষের মরুময় জীবনকে ফুলে ফসলে রূপে রসে পূর্ণ করে দিবে। নতুন কবির অন্তরের আনন্দধারা তাদের  দিয়ে আনন্দ জাগিয়ে শান্তির বার্তা বয়ে আনুক এই তাঁর প্রত্যাশা।

  • সাহিত্যের ঐকতান সংগীত সভায়
  • একতারা যাহাদের তারাও সম্মান যেন পায়
  • মুক যারা দু:খে সুখে
  • নতশির স্তব্ধ যারা বিশ্বের সম্মুখে,
  • ওগো গুণী,
  • কাছে থেকে দূরে যারা তাহাদের বাণী যেন শুনি।

সাহিত্যের মহানন্দের মহা আয়োজনে তাদের জীবনালেখ্য একতারার বাউলও যেন সম্মান পায়। যারা ভাষাহীন, দু:খ-সুখে, বিশ্বের দরবারে নতশির তারাও যেন সম্মান লাভ করেন, সেজন্য যেন মাটির কাছাকাছি মানুষের কবিরা কাজ করেন। যারা গুণী তারা যেন আমাদের কাছাকাছি থাকা মানুষগুলো কীভাবে দূরে আছে তাদের বাণী শুনান।

ঐকতান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লাইন:

  • জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
  • পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে।
  • এই স্বরসাধনায়  পৌঁছিল না বহুতর ডাক-
  • রয়ে গেছে ফাঁক।
  • অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
  • সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।
  • জীবনে জীবন যোগ করা
  • না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।
  • অন্তরে যে উৎস তার আছে আপনারি
  • তাই তুমি দাও তে উদ্বারি।
  • সাহিত্যের ঐকতান সংগীতসভায়
  • একতারা যাহাদের তারাও সম্মান যেন পায়-

গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক)

  • ১. ‘ঐকতান’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত আছে-‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থে। এটি ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ম কবিতা।
  • ২. ‘জন্মদিন’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় – ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ।
  • ৩. ‘ঐকতান’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় – ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে ‘প্রবাসী’ পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায়।
  • ৪. অশীতিপর স্থিতপ্রজ্ঞ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মসমালোচনা হচ্ছে- ‘ঐকতান’ কবিতাটি।
  • ৫. ‘ঐকতান’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ তুলে ধরেছেন- কবি হিসেবে তার নিজের অপূর্ণতার স্বত:স্ফূর্ত স্বীকারোক্তি।
  • ৬. কবি ‘ঐকতান’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন – নিজের সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতার কথা।
  • ৭. কবি নিজের কাব্যভার পূর্ণ করেছেন- নানা দেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন গ্রন্থের চিত্রময় বর্ণনার বাণী দিয়ে।
  • ৮. দীর্ঘ জীবন পরিক্রমণের শেষে রবীন্দ্রনাথ তার সমগ্র জীবনের সাহিত্যসাধনার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসেব খুঁজেছেন-ঐকতান কাব্যে।
  • ৯. কবি সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসে যে জীবন ও জগতকে প্রত্যক্ষ করেছেন তা ছিল – খণ্ডিত তথা অপূর্ণ।
  • ১০. শিল্পীর গানের পসরা অর্থাৎ সৃষ্টিসম্ভার কৃত্রিমতায় পর্যবসিত হয়ে ব্যর্থ হয়ে যায়- ক্ষুদ্র জীবনের সঙ্গে বৃহত্তর মানবজীবন ধারার ঐকতান সৃষ্টি করতে না পারলে।
  • ১১.জীবনের সকল স্তরে পৌঁছাতে পারেনি – রবীন্দ্রনাথের কবিতা।
  • ১২. জীবন সায়াহ্নে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রত্যাশা করেছেন- অনাগত ভবিষ্যতের মৃত্তিকা সংলগ্ন মহৎ কবির আবির্ভাব।
  • ১৩. শ্রমজীবী মানুষের অংশীদার হয়ে সত্য ও কর্মের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি করবেন -অনাগত ভবিষ্যতের মৃত্তিকা সংলগ্ন মহৎ কবি।
  • ১৪. রবীন্দ্রনাথের বাংলা কবিতার বিষয়গত সীমাবদ্ধতার দিকটি উন্মোচিত হয়েছে – ‘ঐকতান’ কবিতায়।
  • ১৫. ‘বিপুলা’ শব্দের অর্থ – বিশাল প্রশস্ত।
  • ১৭. ‘ঐকতান’ কবিতায় স্বরসাধনা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে – সুর বা সংগীত সাধনা অর্থে।
  • ১৮. দেশে দেশে রয়েছে – নগর রাজধানী।
  • ১৯. অগোচর শব্দের অর্থ – আড়ালে।
  • ২০. অতি ক্ষুদ্র এক কোণ জুড়ে থাকে – কবির মন।
  • ২১. চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী কুড়িয়ে আনেন – কবি।
  • ২২. কবির কাছে ভিক্ষালদ্ধ ধন হলো – জ্ঞান।
  • ২৩. স্বরসাধনায় কবির রয়ে গেছে – ফাঁক।
  • ২৪. নানা কবি নানা দিক থেকে ঢালে – গান।
  • ২৫. পৃথিবীতে কবি সবার সঙ্গ লাভের সাথে লাভ করেন -আনন্দভোগ।
  • ২৬. কবি নিজেকে বলেছেন – সমাজের উচ্চ মঞ্চের লোক।
  • ২৭. কবি মাঝে মাঝে গিয়েছেন – ওপাড়ার প্রাঙ্গনের ধারে।
  • ২৮. কবির মতে প্রাণহীন এদেশেতে চারিদিক – গানহীন।
  • ২৯. কবির মতে অবজ্ঞার তাপে পৃথিবী-শুস্ক নিরানন্দ।
  • ৩০. ‘উদবারি’ শব্দের অর্থ – ঊধের্ব প্রকাশ করে দাও।
  • ৩১. সাহিত্যের বিষয়সভায় শ্রমজীবী মানুষের উপেক্ষার কারণে সাহিত্যের ভুবন পরিণত হয়েছে -আনন্দহীন উষ্ণ মরুভূমিতে।
  • ৩২. মরুভূমির উষরতাকে রসে পূর্ণ করে দেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ আহ্বান জানিয়েছেন -ভবিষ্যতের কবিকে।
  • ৩৩. ‘ঐকতান’ কবিতাটি রচিত – সমিল প্রবহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দে।
  • ৩৪. ‘ঐকতান’ কবিতার অসম পর্বের মাত্রা সংখ্যা – ৯।
  • ৩৫. ‘ঐকতান’ কবিতায় অপূর্ণ পর্ব ব্যবহৃত হয়েছে- ৩ ও ৪ মাত্রার।

সাম্যবাদী – কাজী নজরুল ইসলাম

সাম্যবাদী

কাজী নজরুল ইসলাম


শব্দার্থ ও টীকা :

সাম্য   –    সমদর্শিতা। সমতা।

সাম্যবাদ      –    জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এই মতবাদ।

পার্সি   –    পারস্যদেশের বা ইরানের নাগরিক।

জৈন   –    জিন বা মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বী জাতি।

গারো   –    গারো পর্বত অঞ্চলের অধিবাসী।

কন্ফুসিয়াস –  চীনা দার্শনিক।

চার্বাক –    একজন বস্তুবাদী দার্শনিক ও মুনি।

জেন্দাবেস্থা     –    পারস্যের অগ্নি উপাসকদের ধর্মগ্রন্থ আবেস্থা এবং তার ভাষা জেন্দা।

যুগাবতার      –    বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ মহাপুরুষ।

দেউল –    দেবালয়। মন্দির।

ঝুট         –    মিথ্যা।

নীলাচল –    জগন্নাথক্ষেত্র।

কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, গয়া –    হিন্দুদের পবিত্র ধর্মীয় কয়েকটি স্থান।

জেরুজালেম    –    বায়তুল-মোকাদ্দস।

শাক্যমুনি      –    শাকবংশে জন্ম যার।

কন্দরে –    পর্বতের গুহা।

আরব-দুলাল    –    হজরত মুহাম্মদ (স)।

কোরানের সাম্য-গান –  পবিত্র কোরানের সাম্যের বাণী।


কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ

গাহি সাম্যের / গান-    (৬ + ২)

যেখানে আসিয়া / এক হয়ে গেছে / সব বাধা-ব্যব / ধান       ৬ + ৬ + ৬ + ২)

যেখানে মিশেছে / হিন্দু-বৌদ্ধ / মুসলিম ক্রিশ / চান।        (৬ + ৬ + ৬ + ২)

গাহি সাম্যের / গান     (৬ + ২)

বিশ্লেষণ : ‘সাম্যবাদী কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। কবিতা থেকে উপরের চারটি পংক্তি বা চরণ ছন্দ বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, কবিতার পংক্তিগুলোর অধিকাংশ ৬ মাত্রার ৩টি পূর্ণ পর্ব ও ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্বে বিভক্তি। উপরের চার চরণের প্রথম ও চতুর্থ চরণে একটি করে ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি করে ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি করে ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব রয়েছে। সম্পূর্ণ কবিতাটিতেই পর পর দুচরণের শেষে অন্তমিল রয়েছে। কবিতার গতি মধ্যে বা বিলম্বিত লয়ের।


সারমর্ম :

আব্দুল কাদির সম্পাদিত বাংলা একাডেমিক থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলির প্রথম খণ্ড থেকে ‘সাম্যবাদী কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সাম্যবাদী কাব্যের অন্তর্ভূক্ত এ কবিতাটিতে বৈষম্যাবিহীন অসা¤প্রদায়িক মানব সমাজ গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে। কবি এই ‘সাম্যের গান গেয়েই গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে আগ্রহী। কবির বিশ্বাস মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার চেয়ে সম্মানের আর কিছু হতে পারে না। নজরুলের এই আদর্শ আজও প্রতিটি সত্যিকার মানুষের জীবনপথের প্রেরণা। কিন্তু মানুষ এখনও স¤প্রদায়কে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে, মানুষকে শোষণ করছে, একের বিরুদ্ধে অন্যকে উস্কে দিচ্ছে। ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে মানুষকে পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। নজরুল এই কবিতায় সুস্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। “মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর।” তাই তিনি জোর দেন অন্তর ধর্মের ওপর। ধর্মগ্রন্থ পড়ে যে জ্ঞান মানুষ আহরণ করতে পারে, তাকে যথোপযুক্তভাবে উপলদ্ধি করতে হলে প্রয়োজন প্রগাঢ় মানবিকতাবোধ। মানুষের হৃদয়ের চেয়ে যে শ্রেষ্ঠ কোন তীর্থ নেই, এই প্রতীতি কবির স্বোপার্জিত অনুভব। এ কারণেই কবি মানবিক মেলবন্ধনের এক অপূর্ব সংগীত পরিবেশন করতে আগ্রহী। এ গানে মানুষে মানুষে সব ব্যবধান ঘুচে যাবে। মানবতার সুবাস ছড়ানো আত্মার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই জীবনকে পবিত্রতম করে তোলা সম্ভব, এই মর্মবাণীকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই এই কবিতার নজররূপের অন্বিষ্ট।


পাঠ বিশ্লেষণ :

গাহি সাম্যের গান

যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।

গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?

কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো আরো!

মানবতাবাদী কবি সাম্যের জয়গান করেন। সাম্যবাদের মধ্যে কোন বাধা-ব্যবধান নেই-সবাই সমান। সেখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান সবাই সমান। তাঁর দৃষ্টিতে পার্সি, জৈন, সাঁওতাল, ভিল, গারো, কনফুসিয়াস, চার্বাক-চেলা যে যাই বলুক সবাই মানুষ, সবাই সমান। সবার জন্যই কবির সমান দরদ।

বন্ধু, যা-খুশি হও

পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,

কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক

জেন্দাবেস্তা- গ্রন্থ সাহেব পড়ে যাও, যত সখ,-

কিন্তু কেন এ পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?

দোকানে কেন এ দর-কষাকষি?- পথে ফোটে তাজা ফুল!

যার যা খুশি হোক, যার যত খুশি পুঁথি পুস্তক বয়ে বেড়াক প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থ যেমন : কুরান, পুরাণ-বেদ-বেদান্ত, বাইবেল-ত্রিপিটক পড়–ক, তা কেবল মগজই নষ্ট করবে। বিশেষ কোন লাভ হবে না। সেগুলো দোকানে দর কষাকষি করে ফুল কেনার মতো বোকামির তুল্য। কারণ বিনা দরে পথেই যখন তাজা ফুল পাওয়া যায়, তখন তা যতে সংগ্রহ করলেই হয়। অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থ নয়, পথের পাশের ক্লীষ্ট-ক্লান্ত মানুষের উপকারই বড়ো ধর্মগ্রন্থের পরিচায়ক।

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুলে দেখ নিজ প্রাণ!

তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগবতার,

তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকলের দেবতার।

কেন খুঁজে ফের দেবতা ঠাকুর মৃত-পুঁজি-কঙ্কালে?

হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

এই সত্যবাণী কেতাবে খুঁজে, শাস্ত্র ঘেঁটে উদ্ধার করার চেষ্টা কর বৃথা। কারণ ঐসব কেতাব, গ্রন্থ, শাস্ত্র খোঁজার আগে নিজের প্রাণ খুলে সেখানে অনুসন্ধান করতে হবে। সেখানে সকল কালের জ্ঞানের সত্যের সন্ধান লাভ হবে। সেখানে সকল কালের সত্যের সন্ধান লাভ হবে। সেখানে সকল কালের জ্ঞানের সত্যের সন্ধান লাভ হবে। কারণ মানুষের হৃদয়ই সকল দেবতার বিশ্ব-দেবালয়। হৃদয়েই সকল ধর্ম, সকল যুগাবতারের অবস্থান। তাঁকে প্রাণহীন বইপত্রে খুঁজে কী লাভ? তিনি তো সেখানে থাকেন না। তিনি অবস্থান করেন অমৃত-হিয়ার অন্তরালে।

বন্ধু, বলিনি ঝুট,

এইখানে এসে লুটাইয়া গড়ে সকল রাজমুকুট।

এই হৃদয়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,

বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,

মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,

এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।

এটা মিথ্যা নয়, এটাই সত্য-নির্ভুল। জগতের সকল রাজার রাজমুকুটের মহিমা চূর্ণ হয় মানুষের সুন্দর হৃদয়ের কাছে। মানুষের হৃদয় সিংহাসনই সবচেয়ে আরাধনার বস্তু। হৃদয়ই নীলাচল, কাশী, মথুরা বৃন্দাবন, বুদ্ধ গয়া, জেরুজালেম, মদিনা, কাবা। কারণ সমস্ত বিশ্বাসের মূলেই হৃদয়ের ক্রিয়া। মসজিদ, মন্দির, গির্জায় যে বিশ্বাসের বাণী প্রচার হয় তার মূলে মানুষ। আর মানুষের সবচেয়ে বড়ো হচ্ছে আপন হৃদয়। এই হৃদয়ের জোরেই ঈসা মুসা সত্যের সন্ধান করেছেন এবং সত্য লাভ করেছেন।

এই রণ-ভূমে বাঁশির কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,

এই মাঠে হল মেষের রাখাল নবিরা খোদার মিতা।

এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি

ত্যাজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি।

এই হৃদয়ের আঙ্গিনাতেই মহা-গীতা ধ্বনিত হয়। এই হৃদয়ের জোরেই রাখাল খোদার দোস্তি লাভ করেন। শাক্যমুনি গুহায় ধ্যান করেন এই হৃদয়ের শুদ্ধতার জন্যই। তিনি রাজ্য ছেড়ে বেদনাহত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান এই হৃদয়ের টানেই।

এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহ্বান

এখানে বসি গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) পাহাড়ের গুহায় এই হৃদয়ের ধ্যানেই মহান আাল্লাহর বাণী লাভ করেন এবং পবিত্র কোরআনের সাম্যের বাণী প্রচার করেন।

 সাম্যবাদী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লাইন

    যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,

    যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম ক্রিশ্চান।

    হাসিতেছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

    এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।

    মস্জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়।

    এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।

    মিথ্যা শুনিনি ভাই

এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির কাবা নাই।

 

                               মিথ্যা শুনিনি ভাই,

এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোন মন্দির-কাবা নাই।

কবি যা শুনেছেন, তা সত্যি। ধর্ম নয়, মানুষের হৃদয়ই শ্রেষ্ঠ। মন্দির, মসজিদের চেয়েও বড়ো মানুষের হৃদয়।

 


গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক)

১।   ‘সাম্যবাদী কবিতাটি নেয়া হয়েছে – নজরুল রচনাবলি গ্রন্থের ১ম খণ্ড থেকে।

২।   ‘নজরুল রচনাবলি গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – বাংলা একাডেমি থেকে।

৩।   ‘নজরুল রচনাবলি গ্রন্থটি সম্পাদন করেন – আবদুল কাদির।

৪।   ‘সাম্যবাদী কাব্যটি প্রকাশিত হয় – ১৯২৫ সালে।

৫।   কবি নজরুল গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে আগ্রহী – সাম্যের গান গেয়ে।

৬।   ”—হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেয়ে সম্মানের আর কিছু নেই- শূন্যস্থানে বসবে- মানুষ।

৭।   মানুষ পরস্পরকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে- ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে।

৮।   মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর- উক্তিটি – শেষ ফজলুল করিমের।

৯।   ‘সাম্যবাদী কবিতায় কবি জোর দিয়েছেন – অন্তর ধর্মের ওপর।

১০।  কবি ‘সাম্যবাদী কবিতায় কবি জোর দিয়েছেন – মানুষের হৃদয়কে।

১১।  ‘মানুষের হৃদয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন তীর্থ নেই এই প্রতীতি কবির- স্বোপার্জিত অনুভব।

১২।  ‘এ গানে মানুষে মানুষে সব ব্যবধান ঘুচে যাবে- এখানে কবি বলেছেন- সাম্যের গানের কথা।

১৩।  মানবতার সুবাস ছড়ানো আত্মার উদ্বোধন পবিত্রতম করে তোলে – মানুষের জীবন।

১৪।  সাম্যবাদী কবিতার অন্বিষ্ট – মানবতার সুবাস ছড়ানো আত্মার উদ্বোধন।

১৫।  কবি নজরুল তার সাম্যবাদী কবিতায় আগ্রহী হয়েছেন – মানবিক মেলবন্ধনের এক অপূর্ব সংগীত পরিবেশন করতে।

১৬।  ‘নজরুলের এই আদর্শটি আজও প্রতিটি সত্যিকার মানুষের প্রেরণা আদর্শটি হচ্ছে- মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি।

১৭।  জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত- এ মতবাদকেই বলে – সাম্যবাদ।

১৮।  জিন/মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বীদের ধর্মকে বলা হয়- জৈন ধর্ম।

১৯।  মানুষের বেদনা লাঘবে রাজ্য ত্যাগ করেন- শাক্যমুনী।

২০।  ‘সাম্যবাদী কবিতায় শাক্যমুনি বলা হয়েছে – বুদ্ধদেবকে।

২১।  বুদ্ধদেবের জন্ম – শাক বংশে।

২২।  প্রাচীণ বা জু জাতি ও ধর্ম সম্প্রদয়ের মানুষদের বলা হয় – ইহুদী

২৩।  বেদ, আত্মা ও পরলোকে বিশ্বাস করতেন না- চার্বাক নামক একজন বস্তুবাদী দার্শনিক।

২৪।  ‘সাম্যবাদী কবিতায় তাজা ফুল ফোটে – পথে।

২৫।  সকল রাজমুকুল লুটিয়ে পড়ে – হৃদয়ে এসে।

২৬।  সকল দেবতার বিশ্ব দেউল – হৃদয়।

২৭।  দেউল শব্দের অর্থ – দেবালয়/মন্দির।

২৮।  ‘সাম্যবাদী কবিতায় হৃদয় কে বলা হয়েছে- বিশ্বদেউল।

২৯।  কবি নজরুল দেবতা ঠাকুরকে খুঁজতে মানা করেছেন – মৃত পুঁথি কঙ্কালে।

৩০।  যেখানে সব বাধা ব্যবধান এক হয়ে গেছে, সেখানে কবি গাইতে চান-সাম্যের গান।

৩১।  ‘সাম্যবাদী কবিতায় হিয়াকে তুলনা করা হয়েছে – অমৃতের সাথে।

৩২।  ‘সাম্যবাদী কবিতাটি অন্তর্গত- সাম্যবাদী কাব্যের।

৩৩।  কবি নজরুল বাঁশির কিশোর বলেছেন – শ্রীকৃষ্ণকে।

৩৪।  কনফুসিয়াস ছিলেন একজন- চীনা দার্শনিক।

৩৫।  চার্বাক এর জন্মস্থান – পারস্যে।

৩৬।  চার্বাক ছিলেন একজন- নাস্তিক/ বস্তুবাদী দার্শনিক।

৩৭।  মুসা-ঈসা সত্যের পরিচয় পেয়েছিলেন – আপন হৃদয়ের মাঝেই।

৩৮।  কোরানের সাম গান গেয়েছেন – আপন হৃদয়ের মাঝেই।

৩৯।  রণভূমি হল – যুদ্ধক্ষেত্র।

৪০।  ঝুট অর্থ – মিথ্যা (এটি একটি হিন্দি শব্দ)।

৪১।  কবি নজরুল পেটে পিঠে, কাঁধে-মগজে বইতে বলেছেন-পুঁথি ও কিতাব।

৪২।  ভারতীয় উপমহাদেশের আদিম নৃগোষ্ঠীবিশেষ হচ্ছে – সাঁওতাল ভীল।

৪৩।  ‘কন্দর শব্দের আক্ষরিক অর্থ -পাহাড়ের গুহা।

৪৪।  ‘সাম্যবাদী কবিতায় ‘কন্দর বলতে বোঝানো হয়েছে- হৃদয়ের গভীর গোপন স্থানকে।

 


কবিতার প্রথম ও শেষ লাইন :

প্রথম লাইন    :    “গাহি সাম্যের গান-”

শেষ লাইন     :    এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোন মন্দির-কাবা নাই।”

মোট লাইন সংখ্যা :    ৩২ লাইন।


কবিতার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

ধর্মগ্রন্থসমূহ    :    কোরান, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক, আবেস্তা, গ্রন্থ সাহেব।

জাতিসমূহ     :    পার্সি, জৈন, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান, সাঁওতাল, ভীল, গারো।

পবিত্রস্থানসমূহ  :    কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, গয়া, জেরুজালেম, মদিনা, কাবা, নীলাচল (জগন্নাথক্ষেত্র)।

উপাসনালয়সমূহ :    মসজিদ, মন্দির গির্জা

ব্যক্তিত্ব :    ঈসা, মুসা, শাক্যমুণি, কন্ফুসিয়াস, চার্বাক চেলা।

বিদেশী শব্দ    :    নবি=আরবি শব্দ, কেতাব=আরবি শব্দ, ক্রিশ্চান=ইংরেজি শব্দ, ঝুট = হিন্দি শব্দ, মিতা=সংস্কৃত শব্দ।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

0

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

লেখক পরিচিতি



নাম: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

জন্মতারিখ       :   ৯ ডিসেম্বর, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ

জন্মস্থান         :   পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর।

পিতার নাম      :   জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের।

মাতার নাম      :   সাবেরা চৌধুরানী।

শিক্ষাজীবন:   পারিবারিক রক্ষণশীলতার কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেন নি। তবে নিজের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং বড় ভাই ও তাঁর স্বামীর অনুপ্রেরণায় ও সহযোগিতায় জ্ঞানচর্চায় সাফল্য অর্জন করেন।

কর্মজীবন:    বিবাহোত্তর প্রথম জীবনে গৃহিণী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সমাজসংস্কার, নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। এসব কাজে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

গদ্যগ্রন্থ        :     মতিচুর, অবরোধবাসিনী, ড্যালিসিয়া হত্যা, নূর ইসলাম প্রভৃতি।

উপন্যাস         :     পদ্মরাগ।

অনুবাদগ্রন্থ     :     সুলতানার স্বপ্ন।

বিশেষ কৃতিত্ব তিনি ছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি মুসলিম নারীদের সংষ্কার ও মুক্তির জন্য তাদেরকে শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত করার মানসে আজীবন ক্ষুরধার সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন।

মৃত্যু তারিখ     :     ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ।

কৃতিত্ব: কলিকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা।

মৃত্যু: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর এ মহীয়সী নারী শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর একদিন আগে লেখা তাঁর শেষ রচনা ‘নারীর অধিকার’।


লেখক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  1. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের পিতার দেয়া নাম-রোকেয়া খাতুন, বিবাহের পরে নামের শেষে স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন যুক্ত হয়।
  2. তিনি প্রথমে যে নাম লিখতেন- মিসেস. আর এস. হোসেন।
  3. ষোল বছর বয়সে উর্দুভাষী ও বিপতীক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে (১৮৯৮) তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তাঁর জ্ঞানার্জনের পথ অধিকতর সুগম হয়।
  4. তিনি সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন- ভাগলপুর বসে।
  5. তাঁর স্বামীর মৃত্য হয়- ১৯০৯ সালে।
  6. নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯১৬ সালে স্থাপন করেন-আঞ্জুমান খাওয়াতিনে ইসলাম (মুসলিম মহিলা সমিতি)।
  7. তিনি যে বিষয়ে তাঁর লেখনী ধারণ করেন- মুসলিম সমাজের কুসংস্কার ও জড়তা দূর করার জন্য।
  8. তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কতটুকু-স্বশিক্ষিত।
  9. তিনি কোথায় বসে সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন? – ভাগলপুরে।
  10. স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি কোন কাজে মনোনিবেশ করেন?- সমাজসেবা ও সমাজে নারী শিক্ষা বিস্তারে।
  11. কার নামে তিনি ভাগলপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন? -স্বামীর নামে।
  12. তিনি কত সালে কলকাতায় গমন করেন? – ১৯১০ সালে।
  13. তিনি কত সালে কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল উর্দু প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করেন? – ১৬ই মার্চ, ১৯১১।
  14. প্রাইমারি স্কুলটি তিনি উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত করেন? ১৯৩১ সালে। আজীবন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী এবং সুপারিনটেনডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন।
  15. স্কুলের জন্য তিনি কিভাবে ছাত্রী সংগ্রহ করতেন? -মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে।
  16. তাঁর সব রচনাতে সমাজ জীবনের কোন বোধটি উৎসারিত?- বেদনাবোধ।
  17. বিবিসির জরিপকৃত শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় বেগম রোকেয়ার স্থান কত? -ষষ্ঠ স্থান।
  18. রোকেয়া দিবস পালিত হয়- ৯ ডিসেম্বর।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

0

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

লেখক পরিচিতি



নাম: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

জন্মতারিখ   :   ২৬ জুন, ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দ।

জন্মস্থান     :  কাঁঠালপাড়া, চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ।

পিতার নাম  :   যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

পেশা      :   ডেপুটি কালেক্টর।

শিক্ষাজীবন   :    এন্ট্রান্স (১৮৫৭), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

উচ্চতর     :   বিএ(১৮৫৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ; বিএল (১৮৬৯), প্রেসিডেন্সি কলেজ।

কর্মজীবন     :   ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (১৮৫৮- ১৮৯১ খ্রি.)।

কর্মস্থল      :    যশোর, খুলনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, মেদিনীপুর, বারাসাত, হাওড়া, আলীপুর প্রভৃতি।

উপন্যাস     :   দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, রজনী, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী, সীতারাম প্রভৃতি।

প্রবন্ধ    :   লোকরহস্য, বিজ্ঞানরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, সাম্য, কৃষ্ণচরিত্র, ধর্মতত্ত¡, অনুশীলন প্রভৃতি।

বিশেষ কৃতিত্ব তাঁর রচিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত।

খেতাব ও সম্মাননা    ‘সাহিত্য সম্রাট’- সাহিত্যের রসবোদ্ধাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত খেতাব।

‘ঋষি’- হিন্দু ধর্মানুরাগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত খেতাব।

মৃত্যু তারিখ   :  ৮ এপ্রিল, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ।

 


বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাসমূহ মনে রাখার উপায়

উপন্যাস : দেবী চৌধুরাণীর স্বামী রাজসিংহের আদেশে দুর্গেশনন্দিনী- কপালকুণ্ডলার জন্য বিষবৃক্ষের নিচে রজনীতে আনন্দমঠ তৈরি করেন।

সীতারামের স্ত্রী মৃণালিনী, ইন্দিরাকে এ কথা বললে রাধারাণীর স্বামী চন্দ্রশেখর যুগলাঙ্গুরীয় পরিবর্তে কৃষ্ণকান্তের উইল ফিরিয়ে নেয়।

প্রবন্ধ : বঙ্গদেশের কৃষকেরা, বিবিধ প্রবন্ধ : কৃষ্ণচরিত্র, লোকরহস্য, বিজ্ঞানরহস্যের সাম্য বুঝতে না পেরে কমলাকান্তের দপ্তরে হাজির হল।


লেখক সম্পর্কে  কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  1. বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় ছিলেন মূলত ঔপন্যাসিক ও বাঙালির নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত।
  2. তাঁর রচিত প্রথম ইংরেজি উপন্যাস Rajmohon’s Wife (১৮৫৪)।
  3. তাঁর রচিত “দুর্গেশনন্দিনী” (১৮৬৫) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত।
  4. তাঁর রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস কপালকুন্ডলা (১৮৬৬)।
  5. তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ললিত তথা মানস’(১৮৫৬)।
  6. বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক সংলাপ-পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ? (কপালকুন্ডলা) নবকুমারকে উদ্দেশ্য করে।
  7. এই উপন্যাসের আর একটি উল্লেখযোগ্য বাক্য-তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হইব না কেন?
  8. সামাজিক সমস্যার আলোকে তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো হলো-বিষবৃক্ষ(১৮৭৩), কৃষ্ণকান্তের উইল(১৮৭৮)।
  9. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মনস্তত্ত¡ বিশ্লেষণ মূলক উপন্যাস-রজনী(১৮৭৭)।
  10. তিনি যে সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন-‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭২)।
  11. বঙ্কিমচন্দ্রের রম্যব্যঙ্গ রচনা সংকলনের নাম-‘কমলাকান্তের দপ্তর’।
  12. উপন্যাস রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র কার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন-ইংরেজি ঔপন্যাসিক স্যার ওয়াল্টার স্কট কর্তৃক।
  13. তাঁর উৎকৃষ্ট রচনার বিষয়গুলো হল-ধর্ম,দর্শন,সাহিত্য,ভাষা, সমাজ ইত্যাদি।
  14. বঙ্কিমচন্দ্রের চারটি ইতিহাস আশ্রয়ী রোমান্সধর্মী উপন্যাসের নাম-দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুন্ডলা, চন্দ্রশেখর ও রাজসিংহ।
  15. বঙ্কিমচন্দ্রের খাঁটি ঐতিহাসিক উপন্যাস-রাজসিংহ।
  16. বঙ্কিমচন্দ্রের দুটি তত্ত¡মূলক উপন্যাস-আনন্দমঠ ও দেবী চৌধুরাণী।
  17. বঙ্কিমচন্দ্রের রজনী উপন্যাসটি যে ইংরেজি উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে রচিত-ইংরেজি ঔপন্যাসিক লিটন রচিত The last Days of pompii অবলম্বনে রচিত।
  18. ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের বিরোধী-ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত ‘রায়নন্দিনী’ উপন্যাস।
  19. বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘সাম্য’ গ্রন্থ্যটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেন।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লেখক পরিচিতি



নাম      :  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ছদ্মনাম          :  ভানুসিংহ।

জন্মতারিখ       :   ৭ মে, ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)।

জন্মস্থান         :   জোড়াসাঁকো, কলকাতা, ভারত।

পিতার নাম      :   মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

মাতার নাম      :   সারদা দেবী।

পিতামহের নাম :   প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।

শিক্ষাজীবন:    রবীন্দ্রনাথ বাল্যকালে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করলেও স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেন নি। ১৭ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড গেলেও কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞানার্জনের কোন ত্রুটি হয়নি।

পেশা :    ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ তার পিতার আদেশে বিষয়কর্মে পরিদর্শনে নিযুক্ত হন এবং ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারি দেখাশুনা করেন। এ সূত্রে তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন।

 

কাব্য         :  মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, গীতাঞ্জলি, বলাকা, পূরবী, পুনশ্চ,      বিচিত্রা, সেঁজুতি, জন্মদিনে, শেষলেখা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উপন্যাস     :  গোরা, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, চোখের বালি, নৌকাডুবি, যোগাযোগ, রাজর্ষি, শেষের কবিতা      প্রভৃতি।

কাব্যনাট্য    :  কাহিনী, চিত্রাঙ্গদা, বসন্ত, বিদায় অভিশাপ, বিসর্জন, রাজা ও রাণী প্রভৃতি।

নাটক        :  অচলায়তন, চিরকুমার সভা, ডাকঘর, মুকুট, মুক্তির উপায়, রক্তকরবী, রাজা প্রভৃতি।

গল্পগ্রন্থ       :   গল্পগুচ্ছ, গল্পসল্প, তিনসঙ্গী, লিপিকা, সে, কৈশোরক প্রভৃতি।

ভ্রমণকাহিনী :   জাপানযাত্রী, পথের সঞ্চয়, পারস্য, রাশিয়ার চিঠি, য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরী, য়ুরোপ প্রবাসীর   পত্র প্রভৃতি।

পুরস্কার:     নোবেল পুরস্কার (১৯১৩), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট(১৯১৩), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট (১৯৪০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট(১৯৩৬)।

মৃত্যু তারিখ      :   ৭ আগস্ট, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ। (২২ শ্রাবণ ও ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)।


লেখক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  1. রবীন্দ্রনাথ মাতা পিতার চতুর্দশ সন্তান ও অষ্টম পুত্র। রবীন্দ্রনাথের পনেরো ভাইবোন।
  2. তিনি কবিতা রচনা করতে আরম্ভ করেন আট বছর বয়সে।
  3. তার প্রথম কবিতা হিন্দুমেলার উপহার।
  4. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-কবিকাহিনী (প্রকাশকাল ১৮৭৮)
  5. রবীন্দ্রনাথে প্রথম প্রকাশিত নাটক-বাল্মীকি প্রতিভা (প্রকাশ ১৮৮১)
  6. রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাসের নাম-বৌ ঠাকুরাণীর হাট (প্রকাশকাল ১৮৮৩)
  7. রবীন্দ্রনাথকে বলা হয় বাংলা ছোটগল্পের- জনক।
  8. প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা উলে­খ্যযোগ্য কবিতা-নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ
  9. কবি ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন।
  10. ১৯০১ সালে কবি শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
  11. গীতাঞ্জলী কাব্যের অনুবাদ Songs offering নামে প্রকাশিত হয় ১৯১২ সালে
  12. Songs offering এর ভূমিকা লেখেন ইংরেজি কবি-WB Yeats
  13. তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে।
  14. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি লিট উপাধি প্রদান করেন-১৯১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর।

রবীন্দ্রনাথের প্রথম রচনাসমূহ:

প্রথম মনস্তাত্তিক উপন্যাস: চোখের বালি

প্রথম প্রকাশিত কবিতা: হিন্দু মেলার উপহার

প্রথম প্রকাশিত গল্প: ভিখারিণী

প্রথম প্রকাশিত কাব্য: বনফুল

প্রথম প্রকাশিত নাটক: বাল্মীকি প্রতিভা

প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ: বিবিধ প্রসঙ্গ

প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস: বৌ ঠাকুরানীর হাট

প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা: সাধনা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

0

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

কবি পরিচিতি :



নাম        :    মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

জন্ম তারিখ   :   ২৫ জানুয়ারি, ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দ।

জন্মস্থান      :   যশোর জেলার কেশবপুর থানাধীন সাগরদাঁড়ি গ্রাম।

পিতার নাম    :   মহামতি মুনশী রাজনারায়ণ দত্ত।

মাতার নাম    :   জাহ্নবী দেবী।

শিক্ষাজীবন :    কলকাতার লালবাজার গ্রামার স্কুল, হিন্দু কলেজ এবং পরবর্তীতে বিশপস কলেজে ভর্তি হন। তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেতে গিয়েছিলেন।

কর্মজীবন/পেশা :    প্রথম জীবনে আইন পেশায় জড়িত হলেও লেখালেখি করেই পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সাহিত্যকর্ম    কাব্য  :  তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, মেঘনাদবধ কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি। তাছাড়া The Captive Ladie’  ও  ‘Visions of the Past’ তার দুটি ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ।

নাটক        :  শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কুষ্ণকুমারী, মায়াকানন।

প্রহসন        :  একই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ।

নাট্যানুবাদ :  রিজিয়া, রত্মাবলী, শর্মিষ্ঠা, নীলদর্পণ।

গদ্য অনুবাদ     :  হেক্টরবধ।

মৃত্যু তারিখ      :   ২৯ জুন, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ।

সমাধিস্থান        :   কলকাতার লেয়ার সার্কুলার রোড।


ছন্দে ছন্দে মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনাসমূহ

নাটক    : শর্মিষ্ঠা ও পদ্মাবতীর মায়া-কাননে নায়িকা কৃষ্ণকুমারী হাঙ্গামা করল।

প্রহসন   : বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ দেওয়া, একেই কি বলে সভ্যতা?

কাব্যগ্রন্থ : তিলোত্তমা কাব্যের নায়িকা ব্রজাঙ্গনা একজন বীরাঙ্গনা।


লেখক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৩/১৪ ভাষায় দক্ষ ছিলেন- বাংলা, ইংরেজি, গ্রীক, ল্যাটিন, সংস্কৃত, হিব্রু, পারসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষায়।

তার রচিত ও প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ-  Captive Ladie (১৮৪৯ ইংরেজিতে লেখা)

মধুসূদন রচিত ও প্রকাশিত প্রথম বাংলা গ্রন্থ-শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯ নাটক)

বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক-কৃষ্ণকুমারী

তাঁর রচিত অমর মহাকাব্যের নাম-মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১)

মেঘনাদবধ কাব্যের কাহিনী-সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণ থেকে সৃহীত হয়েছে।

মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন-১৮৪৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি ১৯ বৎসর বয়সে।

মধুসূদন দত্তকে বলা হয়-বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি। কারণ তিনিই প্রথম সাহিত্যিক ও সামাজিক বিদ্রোহ কবি।

তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর  ছন্দের প্রয়োগ করেন-পদ্মাবতী নাটকে (দ্বিতীয় অঙ্ক দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে)

তিনি বাংলা কাব্যে সাহিত্যে-অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা।

তিনি হোমারের ইলিয়াড এর উপাখ্যান অবলম্বন করে বাংলা গদ্যে রচনা করেন-হেক্টরবধ (১৮৭১)

তিনি মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে কলকাতা ত্যাগ করেন-২৪ বছর বয়সে

মধুসূদনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থের নাম-যোগীন্দ্রনাথ বসু রচিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনচরিত (১৮৯৩)

মধুসুদনের সৃষ্টির মাহেন্দ্রক্ষণ বলা হয়-মাদ্রাজ থেকে ১৮৫৬ সালের প্রথম দিকে কলকাতায় ফিরে ১৮৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মধুসূদনের বিলেত গমনের পূর্ব পর্যন্ত।

বাংলার নব জাগরণের প্রথম কবি যিনি পাশ্চাত্য আদর্শ ও পাশ্চাত্য কাব্যকলার অনুকরণে নব্য বাংলা কাব্য সৃষ্টি করেন।

ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁকে হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরের বিশপস কলেজে ভর্তি হতে হয়।


বাংলা সাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তথ্যাবলি:

বাংলা সাহিত্যের যুগপ্রবর্তক কবি তথা প্রথম বিদ্রোহী লেখক।

আধুনিক বাংলা কবিতার জনক।

আধুনিক বাংলা নাটকের জনক।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্যের স্রষ্টা।

অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক।

বাংলা সাহিত্রে সনেটের পথিকৃৎ।

সার্থক ট্র্যাজিডি ও কমেডির প্রথম রচয়িতা।

প্রথম সার্থক প্রহসনের রূপকার।

পুরাণ কাহিনির ব্যত্যয় ঘটিয়ে আধুনিক সাহিত্যরস সৃষ্টির প্রথম সফল শিল্পী।

 

সকল বিশ্ববিদ্যালয় এর ওয়েবসাইট

Bangladesh All University

Public Universities Of Bangladesh


Bangladesh Agricultural University
Bangladesh Open University (BOU)

Bangabandhu Sheikh Mujibur Medical University

Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET)

Chittagong University (CU)

Chittagong University of Engineering and Technology (CUET)

College of Textile Technology

Dhaka University (DU)

Dhaka University of Engineering and Technology (DUET)

Hajee Mohammad Danesh Science and Technology University

Islamic University, Kushtia

Jahangirnagar University (JU)

Jagannath University
(JNU)
Khulna University (KU)

Khulna University of Engineering and Technology (KUET)

National University

Noakhali Science and Technology University, NSTU

Rajshahi University (RU)

Rajshahi University of Engineering and Technology (RUET)

Shahjalal University of Science & Technology (SUST)

Sher-e-Bangla Agricultural University

The Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Agricultural University (BSMRAU)

PRAIVATE UNIVARSITY
AhsanullahUniversity of Science and Technology
American International University – Bangladesh (AIUB)

ASA University Bangladesh (ASAUB)

Asian University of Bangladesh

Atish Dipankar University of Science & Technology

Bangladesh University

BangladeshUniversity of Business and Technology (BUBT)

BGC Trust University Bangladesh

BracUniversity

CityUniversity

Daffodil International University
 
Darul IhsanUniversity

Dhaka International University

East – WestUniversity

Eastern University

Green University of Bangladesh

IBAIS University

Independent University, Bangladesh (IUB)

International Islamic University Chittagong

International University of Business, Agriculture and Technology (IUBAT)

Leading University
Manarat International University

Metropolitan University, Sylhet

North South University
(NSU)
Northern University – Bangladesh

Premier University , Chittagong

Presidency University

Prime University

Primeasia University

Pundra University of Science and Technology

QueensUniversity

RoyalUniversity of Dhaka

SantaMarium University of Creative Technology

South EastUniversity

SouthernUniversity

StamfordUniversity

State University of Bangladesh
Sylhet International University

ThePeople’s University of Bangladesh

TheUniversity of Asia Pacific

UnitedInternational University

Universityof Development Alternative (UODA)

University of Information Technology & Sciences

Universityof Liberal Arts Bangladesh

Universityof Science and Technology, Chittagong

UttaraUniversity

Victoria University of Bangladesh

WorldUniversity of Bangladesh

 

PEC, JSC, SSC, HSC, HONOURS RESULTS-2020

প্রিয় শিক্ষার্থী আপনার পছন্দের রেজাল্ট পেতে এখানেই ভিজিট করুন।



SMS Format for Primary (PEC) Exam Result 2020:
DPE<space>Thana Code<space>Roll Number<space>2020 Sent 16222
SMS Format for Ebtedayee Exam Result 2020 Sent 16222

PEC RESULT-2020



Get your SSC Result 2020 through you mobile phone by sms, 1st you have to go to message option and type SSC/Alim <> First three letters of your Board name <> Roll no <> 2020 and send to 16222.



NU Honours 1st Year, 2nd Year, 3rd Year, 4th Year, Result 2020



RUET Admission Exam Result

http://103.48.16.80/admission/gce_login.php